বিনোদন

‘হা-শো’র মঞ্চ থেকে আমার প্রাপ্তি

কারুকাজে সজ্জিত বিশাল মঞ্চ। চারপাশে আলোর রোশনাই। একপাশে বিজ্ঞ বিচারক জহুরির চোখে বাছাই করছেন এক একটা রত্ন। অন্য পাশে মেন্টরস যারা এই রত্নগুলোর যত্ন নেন প্রতিনিয়ত তারা বসে আছেন।

হ্যাঁ, ‘হা-শো সিজন-৬’ এর মঞ্চের কথা বলছি। মার্সেল প্রেজেন্টস হা-শো সিজন-৬ আমার জীবনে একটি বিশেষ অধ্যায়ের নাম। কিচ্ছু হবে না জেনেও শখের বশে অডিশন দেওয়া থেকে নাটকীয়তার শুরু। অডিশনে টিকে যাওয়ার পর মনে হলো আরেহ, আমিও পারি! এরপর কোনো এপিসোডে উইনার তো কোনো এপিসোডে পিছিয়ে যাওয়া। কিন্তু এত চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়েও এগিয়ে যাওয়ার পথে সঙ্গী ছিল কিছু একটা করার তাগিদ।  

এই লম্বা কাহিনির উপসংহারে আছে বেশ কিছু প্রাপ্তি। প্রথমত সাতজন মেন্টর সাইফুর রহমান সাইফুল, ইশতিয়াক নাসির, শাওন মজুমদার, মোহাম্মদ পরশ, তারেক মাহমুদ, শাহাজাদা শাহেদ ও হৃদয় আল মিরু ভাইদের পেয়েছি একদম নিজের ভাইয়ের মতো। আমি তো এখন বলি, আমি সাত ভাইয়ের চম্পা। 

এ ছাড়া মিডিয়াতে বটগাছের মতো শক্ত-পোক্ত আশ্রয় পাওয়াও বিশাল ভাগ্যের ব্যাপার। আর ঠিক তেমনি অভিভাবক পেয়েছি পরিচালক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, প্রযোজক কাজী মোস্তফা, জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খান, শক্তিশালী অভিনেতা তুষার খান ভাইদের এবং একইসঙ্গে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তার ও তমা মির্জা আপুকে। 

আবু হেনা রনি ভাই, যিনি একইসঙ্গে ভাই বন্ধু এবং ভালো গাইড। চলার পথে যিনি আলোর দিশারী। শুটিং হাউসে যারা খুব সহযোগিতা করেছেন, সবসময় মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছেন সাদিক আল হাসান, মোহাম্মদ তৌহিদ ও ইয়াসিন রহমান সুমন ভাই, যারা পর্দার অন্তরালে কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে, মঞ্চে আমাদের বলা জোকসগুলোকে আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য জাদুর ছোঁয়ায় মুড়িয়ে দিতো ‘রাবার ব্যান্ড’ এর রাসেল সিকদার, তারেক আহসান, সুদীপ ও প্রেম ভাই।

ক্যাম্পে যে কোনো সমস্যায় ত্রাণকর্তা হিসেবে পেয়েছি মাসুদ আহমদ ভাই। এখানে বলে রাখা ভালো সব মাসুদ খারাপ হয় না। কেউ কেউ ভালোও হয়। এই যেমন ছিলেন আমাদের ম্যানেজার মাসুদ ভাই। খুবই উপকারী একজন মানুষ। আর রিমি রফিক আপু ছিলেন আমাদের ক্যাম্প লাইফের সব। সুখ-দুঃখের সাথী, একদম আমাদের ডায়েরির মতো। যার কাছে অবলীলায় ভালো লাগা কিংবা মন্দ লাগা শেয়ার করতাম। মাসুদ ভাই ও রিমি আপু দুজন ভীষণ ধৈর্য্যশীল মানুষ।  আমার মতো খুব সাধারণকে সাজিয়ে গুছিয়ে অসাধারণ করে তুলেছিলেন হাবিবা ইলা আলী আপু। যার ছোঁয়ায় আমার ফ্যাশন ভাবনা সত্যিই অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। 

সবশেষে আমার বড় প্রাপ্তি আমার বাবার বিশ্বাস। বাবা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল যে আমি কিছু করতে পেরেছি। বাবা মারা যাওয়ার পর প্রথম চারদিন, বাবাকে যে রুমে শুইয়ে রেখেছিল সে রুমটার ফ্লোরে বসে আমি যা অনুভব করেছি, তা হচ্ছে বাবা সবসময় তার নিকট আত্মীয়-স্বজনের যে কোনো সমস্যা তার নিজের সমস্যা হিসেবেই বিবেচনা করতেন এবং সেভাবেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সমাধান করতেন। সুতরাং বাবাও হয়তো ভেবেছিলো তার জীবনের সমস্যাও অন্যরা ঠিক তার মতো করেই মূল্যায়ন করবে এবং সমাধান করে দেবে। কিন্তু বাবা তুমি বড্ড বোকা আর জেদি ছিলে। তোমার সরলতা সবাই কাজে লাগিয়েছে। কেউ তোমার মনের ক্ষত তোমার মতো করে উপলব্ধি করার চেষ্টাই করেনি। এই বিশেষ চলার পথে কিছু অপ্রাপ্তি তো আছেই। তবে প্রাপ্তির সংখ্যাই বেশি। এই যেমন প্রত্যেক প্রতিযোগী এখন আমার কাছে নিকট আত্মীয়ের চাইতে কোনো অংশে কম না। 

এই বিশেষ যাত্রায় বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই প্রথমত আমার ছেলে শুদ্ধর কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। সেই সঙ্গে আমার পরিবারের দুজন মানুষ যারা আমাকে সবসময় এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়, সঞ্জয় দাশ ও মা (শাশুড়ি) বাসন্তী রাণী দাশ। 

এ ছাড়া বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই মার্সেলকে। বিশেষ করে মার্সেল পরিবারের মুস্তাফিজুর রহমান ভাই ও হুমায়ুন কবীর ভাই, যাদের সার্বিক সহযোগিতায় এত সুন্দর একটি আয়োজন বাস্তব রূপ পেয়েছে। এ ছাড়াও হা-শো’র সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকেই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার পাত্র। সবার নাম উল্লেখ করা সম্ভব হলো না। কিন্তু সবাই হৃদয়ে আছেন, থাকবেন।