বিনোদন

গানটি জনপ্রিয় হবে বুঝতে পেরেছিলাম: শিবলু

সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব কিংবা হেঁটে পথ চলতে গেলেও কাউকে না কাউকে গুনগুনিয়ে গাইতে শোনা যায়—‘তুমি বন্ধু কালা পাখি/ আমি যেন কী/ বসন্তকালে তোমায় বলতে পারিনি/ সাদা সাদা কালা কালা রঙ জমেছে সাদা কালা…।’ তুমুল জনপ্রিয় এই গানের গীতিকার হাশিম মাহমুদ। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন এরফান মৃধা শিবলু। মেজবাউর রহমান সুমন পরিচালিত ‘হাওয়া’ সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে গানটি। সিনেমাটিতে অভিনয়ও করেছেন শিবলু। এ গান সৃষ্টির নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। আলাপচারিতায় ছিলেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক আমিনুল ইসলাম শান্ত

রাইজিংবিডি: আপনার গাওয়া ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি এখন মানুষের মুখে মুখে। শিল্পী হিসেবে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

এরফান মৃধা শিবলু: এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। খুব আনন্দ লাগছে, ভালো লাগছে! আল্লাহর কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। কারণ হাশিম মাহমুদের মতো গীতিকার ও সুরকারের গান গাইতে পেরেছি। আবার সেই গান মেজবাউর রহমান সুমনের প্রথম সিনেমায় ব্যবহার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দারুণ একটা ব্যাপার! 

রাইজিংবিডি: গানটি যখন কণ্ঠে তোলেন, তখন কী ভেবেছিলেন গানটি এত জনপ্রিয়তা পাবে?

এরফান মৃধা শিবলু: গানটি জনপ্রিয় হবে আগেই বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু এতটা হবে কল্পনাও করিনি! গানটি প্রকাশের পর সারা দেশের মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। এটা আমার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি।  

রাইজিংবিডি: এতটা জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন? 

এরফান মৃধা শিবলু: হাশিম ভাইয়ের লেখা এ গানের কথা-সুর খুবই সরল। এজন্য যে কোনো মানুষের মনে গানটি সহজে ঢুকে যায়। রিদম এতটাই সহজ যে, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই কণ্ঠে তুলে ফেলতে পারেন। তুড়ি বাজিয়ে কিংবা কোনো কিছু টুং টাং করেও গানটি গেয়ে ফেলা যায়। আমার মনে হয়, এজন্যই গানটি এত মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে।   

রাইজিংবিডি:  শুরুতে হাশিম মাহমুদের গানটি গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপনি কীভাবে এই গানের সঙ্গে যুক্ত হলেন?

এরফান মৃধা শিবলু: সুমন ভাই বললেন, হাশিম ভাইয়ের একটি গান তাকে দিয়েই গাওয়াতে চাই। দেখো না এটা সম্ভব হয় কিনা। তারপর অনেকবার চেষ্টা করি হাশিম ভাইকে দিয়ে গানটি গাওয়ানোর। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। তখন সুমন ভাই বললেন, শিবলু তুমি একবার চেষ্টা করো। তারপর গানটি গাইলাম; আমার অফিসের স্টাফ থেকে শুরু করে সবাই শুনলেন। চঞ্চল ভাই, সুমন ভাই শুনে বললেন ঠিক আছে শিবলুকে দিয়েই সম্ভব। এভাবেই গানটি গাওয়া। 

রাইজিংবিডি: গানটির গীতিকার হাশিম মাহমুদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার লেখা গানের জনপ্রিয়তার খবর আপনি তাকে দিয়েছেন? তার প্রতিক্রিয়া কী ছিল?  

এরফান মৃধা শিবলু: হাশিম ভাইকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি। তিনি বিখ্যাত হবেন— এ ধরনের মানসিকতা লালন করেন না। গান, কবিতা, লেখালেখি এসব নিয়েই থেকেছেন তিনি। প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে বেড়াবেন, অনেক মানুষের সঙ্গে মিশবেন, লেখালেখিটা করবেন- হাশিম ভাই শুধু এটুকুই চান। বিখ্যাত হওয়ার কোনো চিন্তা কখনো তার ছিল না। এমনকী এখনো এই ভাবনা তার নেই। হাশিম ভাই খুবই সরল একজন মানুষ। প্রচন্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি আলোচনায় আসার পর শুধু এটুকু বলেছেন— ‘আমার গান মানুষ গাইতেছে- এতেই আমি অনেক হ্যাপি।’  

রাইজিংবিডি: সিনেমায় গানটি কোন ভাবনা থেবে যুক্ত হলো?

এরফান মৃধা শিবলু: সিনেমার গল্প নিয়ে যখন কাজ চলছে, ওই সময় সুমন ভাইসহ একটি ফিশিং বোটে তিন দিনের জন্য গভীর সমুদ্রে যাই। জেলেরা মাছ ধরবে আর আমরা শুধু দেখবো। গভীর সমুদ্রে ওরা কী করে, কীভাবে জীবনযাপন করে দেখার জন্য। ৫০ ফুট একটি নৌকায় ২০-২৫ জন জেলে থাকেন। প্রত্যেকের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে গভীর সমুদ্রে কীভাবে সারভাইব করে আমারা দেখতে চেয়েছিলাম। সেই যাত্রায় দেখি ২০-২৫টি নৌকা এক জায়গায় নোঙর করা। এতগুলো নৌকা নোঙর করে ল্যান্ড তৈরি করেছে। সেখানে তারা সময় কাটায়। কেউ লুডু খেলে, কেউ ঘুমায়, আবার কেউ গল্প করে। সেখানেই মাইজ ভাণ্ডারির একটি নৌকা ছিল, তাতে হারমোনিয়াম দেখতে পাই। এটা দেখেই বুঝতে পারি জেলেরা অবসর সময়ে গান করে। এটা থেকেই সুমন ভাই চিন্তা করেন এরকম একটা গান রাখা যায়। 

রাইজিংবিডি: এ গানে কী কী বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? 

এরফান মৃধা শিবলু: একটি মাছ ধরার ট্রলারে অনেক ধরনের জিনিসপত্র থাকে। যেমন: তেলের ড্রাম, প্লাস্টিক বল, মগ, বাঁশ, লাঠি বা টিনের অনেক কিছুই থাকে। এসব জিনিস থেকে সাউন্ড তৈরি করে গানে ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া একটি মাত্র বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে আর তা হলো—খমক।  

রাইজিংবিডি: এ গানের অংশের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই। 

এরফান মৃধা শিবলু: গানের অংশের শুটিং দুদিন করেছিলাম। সমুদ্রে শুটিং করার কারণে বিষয়টি একটু কঠিন ছিল। সমুদ্রের ঢেউ, জোয়ার-ভাটা, বাতাস— সবকিছু মিলিয়ে একটু বেগ পেতে হয়েছিল। দুই-তিন বছর সিনেমাটির কাজ করেছি। এজন্য আগে থেকেই আমাদের একটা প্রস্তুতি ছিল যাতে সমুদ্রে বৈরী আবহাওয়া তৈরি হলেও কাজ চালিয়ে নিতে পারি বা নিজেরা নিরাপদ থাকতে পারি। এই প্রস্তুতি থাকার কারণে কাজটি করতে আমাদের জন্য সহজ হয়েছিল। 

রাইজিংবিডি: ‘হাওয়া’য় আপনাকে কোন চরিত্রে দেখা যাবে?

এরফান মৃধা শিবলু: আমি খুবই সাধারণ একজন জেলের চরিত্রে অভিনয় করেছি। শুটিং শুরুর আগে আমরা জেলেদের জীবনযাপন দেখার জন্য সমুদ্রে গিয়েছিলাম, সেখানে থেকেছি; তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছি। তা ছাড়াও সুমন ভাইয়ের দিক নির্দেশনা তো ছিলই। 

রাইজিংবিডি: সিনেমাটি নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

এরফান মৃধা শিবলু: আমি খুবই আশাবাদী। হলে গিয়ে সিনেমাটি দেখে খুব সুন্দর পরিতৃপ্তি নিয়ে বাসায় ফিরবেন দর্শক। 

রাইজিংবিডি: দর্শক এই সময়ে ‘হাওয়া’ কেন দেখবেন?

এরফান মৃধা শিবলু: মেজবাউর রহমান ভাইয়ের সঙ্গে আমি অনেক দিন ধরেই কাজ করছি। সুমন ভাই এক সময় নাটক বানাতেন। তার বিখ্যাত বেশ কিছু নাটক আছে। সুমন ভাই বিজ্ঞাপনও নির্মাণ করেন। বিজ্ঞাপন নির্মাণ করতে গিয়ে আমরা অন্যদের থেকে একটু আলাদা কিছু চিন্তা করি; ভিন্নতা আনার প্রচেষ্টা থাকে। সুমন ভাইয়ের এটি প্রথম সিনেমা। সে হিসেবে এটিকে আমার দুর্দান্ত একটি কাজ মনে হয়েছে। আমার বিশ্বাস, দেশে এটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।