বিনোদন

‘শনিবার বিকেল’ মুক্তির দাবি কানাডা প্রবাসীদের

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী নির্মিত আলোচিত সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। জমা দেওয়ার পর দীর্ঘ তিন বছর ধরে বাংলাদেশ সেন্সর বোর্ডে আটকে আছে সিনেমাটি।

তবে গত শনিবার (১৩ আগস্ট) টরন্টোর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অব সাউথ এশিয়ায় সিনেমাটি প্রদর্শিত। এ সময় উপস্থিত দর্শক সিনেমাটির প্রশংসা করেন। শুধু তাই নয়, কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অবিলম্বে সিনেমাটি বাংলাদেশে উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানান তারা।

টরন্টোয় বসবাসরত জ্যোষ্ঠ সাংবাদিক সৈকত রুশদী বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্মের নামে জঙ্গী হামলা, নিরীহ-নিরপরাধ মানুষ হত্যা, নিপীড়ন এবং তার প্রতিবাদ তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে। বাংলাদেশে বা অন্য কোনো দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের অজুহাতে এমন কোনো মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার বার্তা দিতে পারে ‘শনিবার বিকেল’। সেন্সর বোর্ড ছাড়পত্র না দিলে বাংলাদেশের মানুষ সেই বার্তা থেকে বঞ্চিত হবেন। আমি আশা করব, সেন্সর বোর্ড নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ‘শনিবার বিকেল’ বাংলাদেশে প্রদর্শনের জন্য ছাড়পত্র দেবে।’’

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করীম বাবুল বলেন, ‘‘মোস্তফা সরয়ার ফারকীর ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি টরন্টোর সাউথ এশিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে দেখেছি। সিনেমাটির বিষয়বস্তু একটি বহুল আলোচিত এবং বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটি মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে কিছু মিল থাকলেও পরিচালক তার মতো করে একটি কাহিনিচিত্র তৈরি করেছেন। সেখানে নতুন গল্পকথা ও চরিত্রায়ন এবং সংলাপে পরিচালকের মতামত এসেছে। রয়েছে নিজস্ব নির্মাণ শৈলী, স্টেডিক্যামের ব্যবহার।’’

সিনেমাটি মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটি সিনেমার ভালো-মন্দ-খারাপ বিবেচনার ভার দর্শকদের হাতেই ছেড়ে দেয়া উচিত। আশা করি, সেন্সর বোর্ড ‘শনিববার বিকেল’ থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবেন।’’

‘নতুনদেশ’-এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ‘‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি বাংলাদেশে সেন্সর বোর্ডের লাল ফিতায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে আটকে থাকলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং প্রশংসা কুড়াচ্ছে। একই সঙ্গে তারা এও জেনে যাচ্ছে- বাংলাদেশে সিনেমাটি দেখাতে দেওয়া হচ্ছে না।’’

শওগাত আলী সাগর আরো বলেন, ‘‘কানাডার ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘শনিবারের বিকেল’ দেখার পর টরন্টোর দর্শকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে- কেন এই সিনেমাটি আটকে রাখা হয়েছে? একই প্রশ্ন নিশ্চয়ই অন্যান্য দেশের দর্শকের মনেও জেগেছে। আর এই প্রশ্ন তো বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি বার্তাই দেয়, সেটি হচ্ছে- বাংলাদেশে শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ন্ত্রিত, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সেন্সর বোর্ডের লাল ফিতায় বন্দি রাখা যাচ্ছে; কোনো সরকারের জন্যই এটি স্বস্তিদায়ক নয়। ‘শনিবার বিকেল’ মুক্ত করে দেওয়া হোক, নির্বিঘ্নে প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হোক।’’

‘প্রবাস বাংলা ভয়েস’-এর প্রধান সম্পাদক আহসান রাজীব বুলবুল বলেন, ‘‘এটি সত্যি দুঃখজনক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিভিন্ন চলচ্চিত্র আজও মানুষের হৃদয়ে। ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি সেন্সর বোর্ড কর্তৃক আটকে রাখার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’

জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ট্যানডেম প্রোডাকশন প্রযোজিত ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পীরা। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন—ফিলিস্তিনের অভিনেতা ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশি অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, জাহিদ হাসান, মামুনুর রশীদ এবং ভারতের পরমব্রত চ্যাটার্জি প্রমুখ।