বিনোদন

গাঙে গাঙে দেখা হয়, তবু বোনে বোনে দেখা হয় না

আমার মায়েরা ছিল ছয় বোন, আমরা সাত বোন। বড় দুই বোনকে আমরা পাইনি, বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের ছোটবেলায়। বাকি সবাই পিঠাপিঠি। সুতরাং সকল বিষয় নিয়ে ঝগড়া-মারামারি-কথা বন্ধ ছিল নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। আমার মা ছিল অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। আমাদের এই ঝগড়া-বিবাদের সময় মা খুবই ব্যাকুল হয়ে একটা কথা রোজ বলতেন— ‘মা রে এসব ঝগড়া-বিবাদ করো না, গাঙে গাঙে দেখা হয় তবু বোনে বোনে দেখা হয় না!

মা এটা বলতো তার নিগূঢ় বেদনা থেকে। আমার মা সবার ছোট ছিল। কিন্তু তার ২টা বোনের সঙ্গে জীবনেও আর দেখা হয়নি। আর অবশিষ্ট বোনগুলোর সঙ্গে দুই-চারবার দেখা হলেও, মৃত্যুর সময় কারো পাশে কেউ থাকতে পারেনি। এ গোপন যন্ত্রণা থেকেই হয়তো মা এই একই কথা দিনে কয়েকবার বলতো।

আসলেই কথা সত্য। ছোটবেলার এক বিছানা/লেপে পাতাল হয়ে ঘুমানো, একটা গামছায় চুল মোছা, একটা সাবান ধুন্দুল ছোবায় গা ঘষা, মাঝে মাঝে বালিশ কম পড়লে একজন ঘুমিয়ে গেলে আরেকজনের মাথার নিচ থেকে বালিশ নিয়ে নেওয়া বোনগুলোর সঙ্গে দেখা হয় কালেভদ্রে! যতই রাস্তা/ যানবাহনের সুব্যবস্থা হোক, স্বেচ্ছায় কেউ কোথাও যায় না। সন্তান/ সংসারের সুখ বা সমস্যা গুনে দিন/মাস/বছর চলে যায়!

আমার মায়েরা এখন আর কেউ নাই। কিন্তু তাদের সকল কথা প্রায় সত্য হয়ে ঘোরে আমাদের জীবনের সুর্যোদয়-সুর্যাস্তে। বহুকাল পরে ঘটনাচক্রে ৩ বোন ১৪ দিন একসঙ্গে থাকলাম! সবাই হাসিমুখে বিদায় নিলাম। কিন্তু সবাই সবার গোপন করা ভেজা চোখ দেখে ফেললাম। একটা বিষয় খুব খেয়াল করলাম, সব বোনদের চোখে-মুখে, হাসি-কান্নায় মা আর আব্বার আদল থাকে! অদ্ভুত শিশুকালের ক্যামেরাবন্দি ছবি যেন! তোদের ছেড়ে সব কাপড়/বিছানা আমি গুছিয়ে তুলছি, নিজেকে কেমন যেন ছোটবেলায় দেখা মার মতো অসহায় লাগছে! ভালো থাকিস তোরা…।

 

লেখক: অভিনেত্রী