বিনোদন

গায়ক জুবিনের প্রেম জীবন

২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমায় ‘ইয়া আলি’ গান গেয়ে তাক লাগিয়ে দেন ভারতীয় সংগীতশিল্পী জুবিন গার্গ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মারা যান ‘কিং অব হামিং’খ্যাত এই গায়ক। তার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন তার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন জুবিনের স্ত্রী গরিমা। তার বুকফাটা আর্তনাদের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেট দুনিয়ায়। ফলে, চর্চায় পরিণত হয়েছে—জুবিন-গরিমার প্রেম জীবন।

জুবিনের জন্মকথা ১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরা শহরে অসমীয়া একটি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন গার্গ। তার বাবার নাম মোহনী মোহন ববঠাকুর, মায়ের নাম ইলি ববঠাকুর। প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক জুবিন মেহতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মোহন-এলি দম্পতি পুত্রের নাম রাখেন জুবিন ববঠাকুর। কিন্তু পিতা-মাতার পদবি ‘ববঠাকুর’ বহন না করে, তিনি তার ব্রাহ্মণ গাত্রের (গোত্র) উপাধি ‘গার্গ’ গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে তার একটি স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি হয়—যা বিশ্বজোড়া অনুপ্রেরণার সঙ্গে অসমীয় ঐতিহ্যের ভারসাম্য রক্ষা করে। 

জুবিন গার্গ

জুবিনের বাবা মোহিনী মোহন ববঠাকুর ছিলেন একজন ম্যাজিস্ট্রেট। ‘কপিল ঠাকুর’ ছদ্মনামে কবিতা ও গান রচনা করতেন। গীতিকার ও কবি হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা হিসেবে তাকে ভারতের বিভিন্ন স্থানে চাকরি করতে হয়েছে। ফলে জুবিনকে তার শৈশবের অনেকটা সময় বিভিন্ন জায়গায় কাটাতে হয়। জুবিনের মা ইলি ববঠাকুর ছিলেন একজন সংগীতশিল্পী। বাবা-মায়ের এসব গুণ পেয়ে বসেন জুবিন।

জুবিনের জীবনে প্রেম জুবিন গার্গের জীবনে বহু প্রেম এসেছে। বলা যায়, রঙিন ছিল তার প্রেমজীবন। স্কুল-কলেজে তার একাধিক প্রেম ছিল। এ তালিকায় রয়েছেন—জুনমনি, রুনঝুন। পরবর্তীতে জুবিন তার গানে ও শিল্পে এ সব প্রেমের প্রভাব ফেলেছিলেন। এমনকি, তার অ্যালবাম ‘জুনমনি রুমঝুম’ এর নামকরণও এই প্রেমের স্মৃতি থেকে এসেছে। এক সাক্ষাৎকারে জুবিন নিজেই এ তথ্য জানিয়েছিলেন।

একটি চিঠি বদলে দেয় সব একটি চিঠির মাধ্যমে জুবিনের জীবনে আগমন ঘটে গরিমা সাইকিয়ার। আসামের গোলাঘাটের তরুণী গরিমা। মুম্বাইয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে পড়ার সময় জুবিনের ‘অনামিকা’ ও ‘মায়া’ অ্যালবামের গান শুনে গভীরভাবে প্রভাবিত হন গরিমা। ঘরছাড়া, মন খারাপের মুহূর্তে গায়ককে একটি চিঠি লেখেন এই তরুণী। গরিমার এই চিঠি প্রশংসা ও আবেগে ভরা ছিল। আর সেই অচেনা অনুরাগী গরিমার চিঠি পৌঁছায় জুবিনের কাছে। সাধারণত, অনুরাগীদের চিঠির জবাব দিতেন না জুবিন। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে, গরিমার সেই চিঠির জবাব দেন জুবিন। সেই একমাত্র যোগাযোগ ধীরে ধীরে রূপ নেয় প্রেমে। একটি সাধারণ চিঠি যে দুটি মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে, জুবিন-গরিমার গল্প তার জীবন্ত উদাহরণ।

গরিমার সঙ্গে জুবিন

জুবিনের প্রেমে খলনায়ক শ্বশুর প্রেম গাঢ় হতেই জুবিন গরিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাদের এই প্রেমের পথ সহজ ছিল না। গরিমার পরিবার, বিশেষ করে তার বাবা, এই সম্পর্ক মেনে নেননি। অন্যদিকে, জুবিনের অস্থির ও খামখেয়ালি স্বভাবও গরিমাকে বিচলিত করত। এই চাপ সহ্য করতে না পেরে একসময় গরিমা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময় জুবিনের জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

অন্ধকার কাটিয়ে জুবিন-গরিমার বিয়ে প্রকৃত ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আবার কাছাকাছি আসেন। ২০০২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি, বলিউডে জুবিনের বড় ব্রেকের আগেই তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর গরিমা শুধুই স্ত্রী নন, হয়ে ওঠেন জুবিনের জীবনের স্থিতিশীল এক আশ্রয়। একদিকে, গরিমা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে, অন্যদিকে, ছায়াসঙ্গী হন জুবিনের সৃষ্টিশীল পথচলায়। আসামের অন্যতম আদর্শ দম্পতি হয়ে ওঠেন তারা। 

বিয়ের পর জুবিন-গরিমা

২০০৬ সালে ‘ইয়া আলী’ গানটি জুবিনকে ভারতের জাতীয় স্তরে পরিচিতি এনে দেয়। কিন্তু গরিমার সঙ্গে প্রেম ও সাময়িক বিচ্ছেদ জুবিনের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ব্যক্তিগত জীবনে বিষণ্নতায় ভুগেছিলেন জুবিন। এ গায়ক তার অনেক গানে সেই যন্ত্রণার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন বলেও অনেকে মনে করেন।

তথ্যসূত্র: মানিকন্ট্রোল