ছোটবেলায় অভিনয়ের স্বপ্ন বুনেন মোশাররফ করিম; তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তবে ভার্সেটাইল এই অভিনেতার চলার পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না।
১৯৮৯ সাল। মোশাররফ করিম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু ফল প্রকাশিত হয়নি। তখন জানতে পারেন, তারিক আনাম খান নতুন একটি নাটকের দল গড়ছেন। এ দলের সদস্য হতে অডিশনে অংশ নিতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক পাস। তারপরও আবেদন করেন। ১ হাজার ৪০০ আবেদনকারীর মধ্য থেকে ২৫ জনকে চূড়ান্ত করা হয়, তারই একজন মোশাররফ করিম।
কয়েক দিন আগে নাট্যকন্দ্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল। এ উপলক্ষে কেক কাটার পাশাপাশি আড্ডারও আয়োজন করা হয়। এ আসরে উপস্থিত ছিলেন দলটির সদস্য তারিক আনাম খান, জাহিদ হাসান, তৌকীর আহমেদ, মোশাররফ করিমসহ অনেকে। সেখানে স্মৃতিচারণ করেন মোশাররফ করিম।
এ অভিনেতা বলেন, “আমার ইচ্ছা থিয়েটার করব। কিন্তু কীভাবে করব তা জানি না। পরে নাট্যকেন্দ্রে যুক্ত হই। একদিন দেখি ব্যায়াম করাচ্ছে, তো এটা দেখে মনে মনে বলি, এই করার জন্য নাটকের দলে ঢুকলাম। আমি আসলেই কিছু জানতাম না। দেখি নানাভাবে ব্যায়াম করাচ্ছে।”
পরের ঘটনা বর্ণনা করে মোশাররফ করিম বলেন, “আমার প্রশ্ন, ব্যায়ামটা কেন করাচ্ছে? আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যায়ামটা করে যাই। পরে ব্যায়াম করলাম। এই যে ব্যায়াম করলাম, কেন করলাম? এই প্রশ্নের উত্তর ৩ বছর পরে পেয়েছি। ব্যায়াম করার সময়ে আমরা বুঝতে পারি না। কিংবা মঞ্চে এই লাইটটা কেন? এসব বোঝার জন্য যে ধৈর্য্য দরকার, সেটা অনেকেই ধারণ করি না।”
তারিক আনাম খানের সঙ্গে তিক্ত-মধুর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মোশাররফ করিম বলেন, “আরজ চরিতামৃত’ নাটকের সময়ে একজন আসেন নাই। মঞ্চে হারিকেন নিয়ে হেঁটে যাওয়ার একটি দৃশ্য ছিল। ওই হাঁটাটা আমি হাঁটলাম। এই কাজটা আমার ছিল না, আমি করে দিই। কিন্তু তারিক (তারিক আনাম খান) ভাই গালিগালাজ শুরু করলেন। আর সবগুলো গালি ইংরেজিতে দিলেন। আমার খুব খারাপ লাগছিল। বুঝতেছিলাম না, কাজটা করার পরও কেন এমনটা করলেন। পরে বুঝলাম, আমার ভুলটা কোন জায়গায় ছিল। মূলত, আমি কাজটা দায়সারা গোছের করেছিলাম। চরিত্রে ঢুকে আমার হাঁটা দরকার ছিল; যা করিনি।”
পরের ঘটনা বর্ণনা করে মোশাররফ করিম বলেন, “ব্রেকের সময়ে একজন আমাকে বললেন, মোশাররফ ভাই আপনি মন খারাপ কইরেন না। তারিক ভাই কিন্তু আপনাকে অনেক পছন্দ করেন। মেজাজ খারাপ হয়েছে, তাই গালাগালি করেছেন।’ আমি বললাম, ‘এসব নিয়ে আমি চিন্তিত না। এ গালি আরেক দিন আরেকজনকে দিয়েছিলেন।’ আমি যেটা দেখলাম, তারিক ভাই একটা গালিও বাংলায় দিতে পারেন না, সবগুলো ইংরেজিতে দেন।”
নাট্যকেন্দ্রের সদস্য তৌকীর আহমেদকে নিয়েও স্মৃতিচারণ করেন মোশাররফ করিম। এ অভিনেতা বলেন, “তৌকীর ভাইকে বুঝতে আমার সময় লেগেছে। টেলিভিশনে উনাকে রোমান্টিক মুডে দেখতাম। রোমান্টিক মানেই তো—শুধু প্রেম-টেম করে বুদ্ধি-সুদ্ধি কম। কিন্তু থিয়েটারে এসে দেখি, এই লোক একেবারেই উল্টা। এত পরিশ্রম করতে পারেন অথচ উনাকে দেখে তা মনেই হয়নি। সেট ভাঙাগড়ার কাজ করতেন। এই যে কাজ করছেন, তা দেখে লোকে কী ভাববে সে দিকে কোনো খেয়াল নেই। তৌকীর ভাইয়ের এই ব্যাপারটা আমাকে খুব টানে। ভাবি, এই লোকটা এত পরিশ্রম করেন!”
১৯৯০ সালের ১১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যতম নাট্যদল নাট্যকেন্দ্র। কয়েক দিন আগে ৩৬ বছরে পদার্পন করেছে। নাট্যদলটির উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে বিচ্ছু, তুঘলক, সুখ, জেরা, হয়বদন, আরজ চরিতামৃত, প্রতিসরণ, প্রজাপতি, ডালিমকুমার, মৃত মানুষের ছায়া, দুই যে ছিল এক চাকর, বন্দুকযুদ্ধ, গাধারহাট, তীর্থযাত্রী, পুণ্যাহ।