আমিনুল ই শান্ত : ১৯৩৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। মানিকগঞ্জ জেলায় একটি হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন হেনা ভট্টাচার্য্য নামের একটি মেয়ে। যে মেয়েটি পরবর্তীতে বাংলা চলচ্চিত্রে হয়ে ওঠেন জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। অমূল্য লাহিড়ী নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। তবে পরবর্তীতে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদও ঘটে। তারপর চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয় সুমিতা দেবী নামে। এখানে এসেই তার সঙ্গে পরিচয় ঘটে খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের। তারপর সময়ের টানে কিংবা ব্যক্তিগত অনুধাবনে কিংবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক না কেন তিনি ধর্মান্তরিত হন। এবং তার নতুন নামকরণ করা হয় নিলুফার বেগম। ১৯৬১ সালে জহির রায়হানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। তাদের এ সংসারে দু’টো পুত্র সন্তানও জন্ম নেয়। তাদের দু’সন্তানের একজন অনল রায়হান। পঞ্চাশ দশকের এ অভিনেত্রীর বর্ণাঢ্য কর্মজীবন নিয়ে এ রচনা। ১৯৫৭ সাল। আসিয়া চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন হেনা ভট্টাচার্য। এ চলচ্চিত্রের পরিচালক ফতেহ লোহানি তার এ নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন সুমিতা দেবী। কিন্তু সুমিতা অভিনীত এ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৬০ সালে। আসিয়া ছবিতে সুমিতা নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।এরই মধ্যে এহতেশাম পরিচালিত সুমিতা দেবী অভিনীত এ দেশ তোমার আমার সিনেমাটি মুক্তি পায়। যা ছিল সুমিতের ২য় চুক্তিবদ্ধ ও প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্র। তারপর মুক্তি পায় ফতেহ লোহানির আকাশ আর মাটি ছবিটি। প্রথম দিকের বাংলা চলচ্চিত্রে নায়িকার চরিত্রে অভিনয়ের কারণে তাকে বলা হতো ‘ফার্স্ট লেডি’। সুমিতা দেবীর উল্লেখযোগ্য ছবিগুলো হলো, সোনার কাজল। এ সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন খলিল (১৯৬২)। কাঁচের দেয়াল সিনেমায় নায়কের চরিত্রে অভিনয় করেন আনোয়ার হোসেন (১৯৬৩)। এই তো জীবন চলচ্চিত্রে সুমিতার বিপরীতে নায়ক ছিলেন রহমান (১৯৬৪)। দুই দিগন্ত সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় দেখা যায় আনোয়ার হোসেনকে (১৯৬৪)। এ ছাড়াও উর্দু ভাষায় নির্মিত হয়েছিল ধূপ ছাঁও সিনেমাটি। এ চলচ্চিত্রে তার নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন এজাজ (১৯৬৪), জনম জনম কি পিয়াসি (১৯৬৮), ১৯৬৩ সালে নির্মিত সঙ্গম সিনেমায় সুমিতার সঙ্গে অভিনয় করেন খলিল। অশান্ত প্রেম সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন নায়ক হায়দার শফী (১৯৬৮)। এরপর সুমিতা দেবী ১৯৬৭ সাল থেকে নায়িকা বা কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা থেকে সরে যান। শুরু করেন সহ অভিনেত্রী অর্থাৎ মা/ খালা/ ভাবি বা বড়বোনের চরিত্রে অভিনয় করা। সর্বশেষ ২০০০ সালে আশিক মোস্তফা পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ফুলকুমার সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৪ সালে ৬ জানুয়ারি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুমিতা দেবী। এরই সঙ্গে নিভে য়ায় বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক নক্ষত্র। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ অক্টোবর ২০১৪/শান্ত