উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

‘কন্যাসুন্দরী’ নিয়ে সফল মনিকা 

মনিকা আহমেদের জন্ম কুমিল্লায় হলেও বর্তমানে ঢাকার মিরপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ‘হোম ম্যানেজমেন্ট ও হাউজিং’ বিষয়ে স্নাতক শেষ করেন তিনি। স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। পাশাপাশি নিজের ডিজাইন করা তাঁতের শাড়ি নিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করছেন। 

মনিকা ২০১৭ সালে ছোট পরিসরে দেশীয় তাঁত ও বাটিকের থ্রি-পিস নিয়ে কাজ শুরু করেন। এ সময় ক্রেতাদের চাহিদা মিটিয়ে প্রশংসাও অর্জন করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, শো-রুম দেওয়ার ভুল সিদ্ধান্তে ব্যবসা নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। শো-রুম ডেকোরেশন ও পণ্য স্টকের কারণে প্রায় সাত লাখ টাকা লোকসানের পর ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যেসব ক্রেতারা কথা দিয়েছিল শো-রুমে গিয়ে দেখেশুনে পণ্য নেবেন, পরবর্তী সময়ে দেখা মেলেনি তাদেরও। হতাশা যখন চরমে, ঠিক সেই মুহূর্তেই নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

উত্তরঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ,  দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁতিদের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করেন। কারণ, পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে পৌঁছাতে হবে সঠিক জায়গায়। বিভিন্ন রঙের কম্বিনেশনের কাপড়ে নিজের করা ডিজাইন দিতে সরাসরি কথা বলেন তাঁতিদের সঙ্গে। এভাবে কাজ করতে করতে ফিরে পান নিজের হারানো মনোবল। ২০১৯ সালে পুনরায় ‘কন্যাসুন্দরী’ নামে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে আট থেকে দশটা শাড়ি দিয়েই হয় অনলাইন ব্যবসার যাত্রা।

তিনি বলেন, ‘ফেসবুক গ্রুপ উই’র (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ) শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের কাছ থেকে ব্যবসা সম্পর্কে দিকনির্দেশনা পেয়ে কঠিন কাজকে সহজে আয়ত্ব করতে পেরেছি। উইতে এসে ‘পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং’ অর্থাৎ নিজস্ব পরিচিতিই ছিল আমার সফলতার মূলমন্ত্র। এই একটি কারণে দেশ ও দেশের বাইরের ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের অর্ডার পেয়েছি অনেক। প্রথমে একজন ক্রেতা পণ্য নিত শুধু আমার পেজ দেখে। এখন ক্রেতারা আমাকে চিনে আমার সঙ্গে কথা বলে নিজের চাহিদামতো পণ্য নিতে পারছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি মানুষের ভেতরে প্রতিভা আছে। আর উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বের হয়ে আসে প্রতিভা। প্রতিদিন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। এই সমস্যা নিরসনে কাজ করতে হলে আমাদের পড়াশুনার কোনো বিকল্প নেই। আমি যা জানি সেই বিষয় নিয়ে প্রতিদিন কিছু না কিছু পড়ছি। নিজের কাজ ও উদ্যোগ নিয়ে পড়াশুনার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে পারছি এভাবেই, যা ব্যবসার শুরুর দিকে করতাম না। ফলে প্রথম দিকে ঝরে পড়েছি অনেকবার, কিন্তু মনোবল হারাইনি।’  

‘কন্যাসুন্দরী’ নামেই যেন ফুটে উঠেছে রমণীর শোভা। উদ্যোক্তা মনিকার নিজের  ডিজাইন করা নরম ও আরামদায়ক এক একটা শাড়িই যেন বহন করে তার মেধা আর প্রতিভার পরিচয়। হোলসেলার থেকে শুরু করে তাঁতিদের কাছে কাপড়ের বুনন পর্যন্ত তার একটাই চাওয়া, তার ডিজাইন করা শাড়ি অন্য কোথাও বিক্রি হবে না। ভবিষ্যতে তার ডিজাইন ও পণ্যকে উন্নতমানের ব্র্যান্ডে পরিণত করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি। 

লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।

ঢাকা/মাহি