উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

জামদানি রানি কাকলীর ‘স্টার্টআপ’ 

কাকলী রাসেল তালুকদার। জন্ম ও বেড়ে ওঠা নরসিংদী জেলায়। বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান কাকলী। নরসিংদীর নারায়ণ পুর সরাফত উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তী সময়ে  ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও  ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১০ সালে ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্টের উপরে বিবিএ করেন। 

কাকলী ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত এডেক্সেল ট্রেইনার হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে তিনি একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কাকলী’স অ্যাটিয়্যার’। তার ফেসবুক পেজের সব পণ্যের মধ্যে দেশের ঐতিহ্য জামদানি পণ্যই অন্যতম। তিনি তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডিতে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতি সিনথিয়া। 

রাইজিংবিডি: আপনার ব্যবসার শুরুর গল্পটা জানতে চাই। 

কাকলী: বিয়ের পরে পারিবারিক কারণে শিক্ষকতা পেশাটা ছেড়ে দেই। তখন বাসায় ছিলাম, ভাবতাম ঘরে বসে কী করা যায়। যেহেতু জামদানির প্রতি আমার দুর্বলতা অনেক আগে থেকেই ও জামদানি নিয়ে আমার কয়েক বছরের অভিজ্ঞতাও আছে। তখন আমার মায়ের ও স্বামীর অনুপ্রেরণায় মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে আমার ফেসবুক ভিত্তিক উদ্যোগ কাকলী’স অ্যাটিয়্যারের সূচনা হয় ২০১৯ সালের ১৩ জুন। শুরুতে তেমন সাড়া না পেলেও মায়ের উৎসাহ ছিল সবসময়।  মা বলতেন, তোমার শাড়ি বিক্রি না হলে আমি কিনে নেব, তাও হাল ছেড়ো না। সেই থেকে নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।

তবে আমার ভাগ্য ভালো যে, উই’র (উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম) দেখা পাই অনলাইনে। ২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ২৪ তারিখে আমি উইতে জয়েন করি। যেখানে শুধু দেশি পণ্যের প্রচারের জন্য রাজীব স্যার দিনরাত চেষ্টা করছিলেন। সেখান থেকে স্যারের সঙ্গে পথচলা শুরু ও একজন উদ্যোক্তা হতে হলে কি কি করতে হবে, তার সবটাই স্যারের কাছ থেকে শিখি। নাসিমা আক্তার নিশা আপু উই প্ল্যাটফর্ম তৈরি না করলে হয়তো এমন সুযোগ পেতাম না। তার জন্য আপুর কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ। তার জন্যই আজ হাজারো নারী দেশি পণ্য নিয়ে নিজেদের উদ্যোগ নেওয়ার সাহস করছেন ও সফলতাও পাচ্ছেন।

রাইজিংবিডি: কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করেন?

কাকলী: শুরুতে আমার পেজে অন্য কাপড় থাকলেও বর্তমানে শুধু জামদানি দিয়ে তৈরি পণ্য নিয়ে কাজ করছি। জামদানি শাড়ি, পাঞ্জাবি, টু-পিস, থ্রি-পিস ও আমার জামদানি নিয়ে প্রথম ফিউশন বাচ্চাদের জামদানি গাউন। এছাড়াও জামদানি নিয়ে আরও কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

রাইজিংবিডি: কেন জামদানি পণ্য নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ছিল?

কাকলী: জামদানির প্রতি অনেক আগে থেকেই আমার আলাদা একটি ভালোবাসা ছিল। এ নিয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সুযোগ পেলেই ওই পল্লিতে ঘুরে বেড়াতাম। যেহেতু জামদানি নিয়ে আমার সাত-আট বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই উদ্যোগ নেওয়ার সময় এটিই সবার আগে বেছে নেই।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইনেই ছিল?

কাকলী: আমার ব্যবসার শুরুটা অনলাইন কেন্দ্রিক ছিল সবসময়।

রাইজিংবিডি: কাজ করতে গিয়ে কখনো বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন?

কাকলী: কাজ করতে গিয়ে অনেক ধরনের পরিস্থিতির মুখেই পড়তে হয়েছে, আর এটা হওয়াটাও স্বাভাবিক। তাই নিজের কাজে ফোকাস রেখেই এসব এড়িয়ে চলেছি।

রাইজিংবিডি: নতুনরা এই পেশায় আসতে চাইলে তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

কাকলী: তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে প্রথমে অন্তত এক বছর যে পণ্য নিয়ে কাজ করতে চাইছেন, সেই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানা। যেহেতু অনলাইন ভিত্তিক উদ্যোগ, তাই অবশ্যই টেকনিক্যাল দিকেও বেসিক ধারণা থাকতে হবে। শখের বসে কেউ যদি উদ্যোক্তা হতে চায় তাহলে তাদের জন্য বলবো, এই পেশা বেছে না নেওয়ার জন্য। কারণ, এখানে প্রতিনিয়তো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই সিরিয়াসভাবে নিজের উদ্যোগ নিতে হবে।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে অনুপ্রেরণায় কারা ছিল?

কাকলী: মায়ের অনুপ্রেরণা ও স্বামীর সহযোগিতা আমাকে শুরু থেকেই উৎসাহিত করেছে। কিন্তু যার কথা না বললেই নয়, আমার দিকনির্দেশক রাজীব আহমেদ স্যার, যার প্রতিটি উপদেশ আমাকে সাহায্য করেছে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে। রাজীব স্যারের প্রতিটি পরামর্শ আমি মেনে চলেছি, বিধায় আজকে সবাই আমাকে এক নামে চেনে। এই তিনজন মানুষের অবদান আমার সফলতার মূলমন্ত্র বলতে পারেন। 

রাইজিংবিডি: ব্যবসা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

কাকলী: আমার ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে জামদানিকে দেশের ৬৪ জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। প্রবাসীদের মাধ্যমে জামদানিকে বিশ্বে পরিচিত করতে চাই আমার উদ্যোগের মাধ্যমে। ভবিষ্যৎ জামদানি নিয়ে স্টার্টআপ করার কথাও চিন্তা করছি।

রাইজিংবিডি: আপনার সফলতার কথা জানতে চাই।

কাকলী: সফলতার কথা যদি বলি, তাহলে দেশের বিভিন্ন জেলাসহ বিশ্বের ১৩টি দেশে নিয়মিত আমার জামদানি বিক্রি হচ্ছে।

রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে। 

কাকলী: আমাকে ও আমার ব্যবসাকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য রাইজিংবিডি পরিবারকেও ধন্যবাদ।  

ঢাকা/মাহি