উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

৯০০ টাকার ব্যবসায় চলছে পাপিয়ার সংসার

‘ভেজালের ভিড়ে খাঁটির খোঁজে’ এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন পাপিয়া সুলতানা মুন্নি। জন্ম ও শৈশব কেটেছে চুয়াডাঙ্গা জেলার চিৎলা গ্রামে। তিনি ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। পড়াশোনায় বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। উচ্চমাধ্যমিকের পর বিয়ে হয়ে যায় পাপিয়ার। স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে নিজ জেলা সদর কোট পাড়াতে বসবাস তার।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাতে যখন স্থবির ছিল সবকিছুই, ওই সময়ে চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েন পাপিয়ার স্বামী। সংসারের টানাপোড়েন ও বাচ্চা নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। টেকনোলজির উন্নয়নের যুগে ফেসবুকে খুঁজে পান উই (উইমেন অ্যাান্ড ই-কমার্স) গ্রুপ। এতে অন্য মেয়েদের পোস্ট-কমেন্ট দেখে কাজ করার আগ্রহ জন্মে।

জানুয়ারি ২০২০ থেকে ‘খাঁটির খোঁজে’ নামক ফেসবুক পেজ দিয়ে শুরু হয় পাপিয়ার উদ্যোক্তা জীবন। সব রকমের কৃষি পণ্যই (গমের লাল আটা, কুমড়া বড়ি, যাতায় ভাংগানো মসুর ডাল, খাঁটি সরিষার তেল, ঢেঁকি ছাটা চাউলের গুড়া, মসুর ও মাসকলাইয়ের ডাল, আখের লাল চিনি) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

পাপিয়া বলেন, “আমি গ্রামের মেয়ে। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম মা-চাচিরা যাতায় ভেঙে মুড়ি-মুড়কি, চিড়া ও চাউল খাদ্যদ্রব্য বানিয়ে খেতেন। বাড়ির বড় মেয়ে হওয়ার সুবাদে কষ্ট না করলেও খুব কাছ থেকে দেখেছি কীভাবে তারা কাজ করছেন। আমার ব্যবসা যখন শুরু করি, তখন থেকেই ভাবতাম ক্রেতাদের কাছে কীভাবে খাঁটি পণ্যের সমাহার পৌঁছে দেবো। মূলত এজন্যই সিদ্ধান্ত নেই চুয়াডাঙ্গায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করার। শুরুটা ছিল গমের লাল আটা হোমডেলিভেরির মাধ্যমে।

ব্যবসার শুরুটা সব সময়ই কঠিন। একজন উদ্যোক্তাকে সবসময় চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমার শুরুটাও তাই এত সহজ ছিল না। অনলাইন সম্পর্কে কোনো জ্ঞান ছিল না। কী করে অনলাইনে সফল বা পারদর্শী হওয়া যায়, তার কোনো ধারণাই ছিল না। চুয়াডাঙ্গাতে আমার কাস্টমার অনেক কম।

প্রথম অনলাইনে অর্ডার আসে ঢাকা থেকে। প্রথম অর্ডারের পর আমার আত্মবিশ্বাস বহুগুণে বেড়ে যায়। এরপর উইতে অ্যাক্টিভ হই। কীভাবে উইতে যুক্ত হয়েছি জানি না। সেই এক অন্য রকম অনুভূতি। অভাবের ও হতাশার ভেতর আলোর দেখা পাওয়া।’’

কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে পাপিয়া বলেন, ‘‘কাজ করতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন অনেকবার হয়েছি। আমার কাজ নিয়ে চারপাশের মানুষ হাসাহাসি করেছে, কটু কথা বলছে। এটাও শুনতে হয়েছে ‘মুদি দোকান’ দিয়েছি। মেয়ে মানুষ হয়ে মুদিগিরি করি। এত দাম দিয়ে কি এসব কেউ নেবে? চলবে না। 

আমি প্রথম যখন অর্ডার পেয়েছিলাম, আমার কাছে ওজন মাপার মেশিনও ছিল না। দিশাহারা লাগছিল কীভাবে কী করব ভেবে। পরে ম্যানেজ করে ডেলিভারি দিয়েছলাম। কত রেভিনিউ হয়েছে, তা বলবো না, বর্তমান পুরো সংসার আমার ব্যবসার উপর চলছে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি উই গ্রুপ, নাসিমা আপু ও শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের প্রতি।’’

করোনাকালীন স্বামীর বেকারত্বে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জীবনযোদ্ধা পাপিয়া সুলতানা মুন্নি। তিনি ৯০০ টাকায় শুরু করা অনলাইন ব্যবসা করে পুরো সংসারের দায়িত্ব নিয়েছেন উদ্যোক্তা জীবনে।

ঢাকা/মাহি