উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ছাদবাগানে উদ্যোক্তা তামান্নার মাশরুম চাষ  

ঢাকার মেয়ে তামান্না মুসা আভা। পরিবারের বড় সন্তান। জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ব্যবসায় বিভাগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। বর্তমানে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন।

তামান্না পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হতে অনলাইনে হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। তার ফেসবুক পেজের নাম ‘মাশরুমের হাট’। তার পেজে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অর্গানিক মাশরুম, স্পন, আচার, রেডিমেট স্যুপ, শুকনা ও পাওডার মাশরুম।

যান্ত্রিক এই ঢাকায় আমরা সবাই এক একটা যন্ত্র। সবাই আমরা এটা ভেবেই চলি যে, লোকে কি বলবে তার উপর নির্ভর করে। তামান্নাও তার ব্যতিক্রম ছিল না। যেহেতু ব্যবসায় বিভাগের ছাত্রী থেকে আচমকা সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে নিযুক্ত হন তিনি, এই ব্যাপারটাই ছিল সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জই তামান্নাকে দিয়েছে উদ্যোক্তা জীবনের সব থেকে বড় শিক্ষা।

তামান্না আভা বলেন, “উদ্যোক্তা হওয়ার আগে এক বছর শুধু ভেবেছি কী পণ্য নিয়ে কাজ করব। করোনাকালীন সময়ে ঘরে বসে থাকলেও থেমে থাকিনি। ওই সময়টা দেখলাম আমরা তরুণ রক্ত চাইলেই সুস্থ অগ্রযাত্রার সূচনা করতে পারি। আমাদের ই-কমার্স সেক্টর আরও বেমি জমজমাট হয়ে উঠলো। জামাকাপড়, জুতা, খাবার থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্যসামগ্রী নেই, যার অনলাইন মার্কেট নেই।

যেহেতু মহামারির সময়ে অনলাইনের উপর আমরা অনেকটা নির্ভর, তাই আমিও চাচ্ছিলাম অনলাইনভিত্তিক কাজ করতে। অনলাইনে বিজনেস করার জন্য দরকার একটা ভালো নেটওয়ার্কিং। পণ্য অর্ডার ক্রয় বিক্রয় থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত সব কাজের বিশ্বস্ততা।

এই ভাবনা নিয়ে কেটে গেলো আরও ৫টা মাস। তখন ভাবতে শুরু করলাম এমন কী ধরনের পণ্য, যা অনলাইনে একটা মার্কেট প্লেস পাওয়ার পাশাপাশি নিম্ন আয়ের লোকগুলোকেও আমি কাজে লাগাতে পারবো। তখন মনে হলো কৃষিপণ্য নিয়ে কাজ করবো। কিন্তু জায়গা সংকট। এরপর একদিন ইউটিউবে মাটি ও মানুষের একটা পর্ব দেখলাম এক মাশরুম চাষীকে নিয়ে। তখন মাশরুম নিয়ে পড়াশোনা করলাম। অনলাইনে ছোট ছোট কোর্স করলাম। ফাইনালি আমি প্রস্তুত।’’

তিনি আরও বলেন, “সবকিছু ঠিক থাকলেও পুরোপুরি ব্যবসায় নামিনি। কারণ ফিল্ড যাচাই করতে হবে। যাকে রিসার্চের ভাষায় পাইলট টেস্টিং বলে। সব থেকে মজার যে জিনিস, তা পাইলট টেস্টিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারলাম নতুন তথ্য। মাশরুম নাম শুনলেই আমাদের দেশের কিছু মানুষ সেই চাইনিজে ব্যবহৃত মাশরুমকেই বোঝে। কিন্তু এর যে বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, তা হয়তো অনেকেরই অজানা।

সাধারণত মাশরুম এক ধরনের ভোজনযোগ্য ছত্রাক। বিভিন্ন ধরনের মাশরুম রয়েছে, যেমন- ওয়েস্টার, বাটন, মিল্কি। ওয়েস্টার মাশরুম এমন এক প্রজাতি, যা সারাবছর কম বেশি হয়। কিন্তু শীতের মৌসুমে এর ফলন ভালো হয়। এটি সাদা বর্ণের ঝিনুক আকৃতির। আর বাটন মাশরুম আমরা ক্যানে করে কিনে খাই ও চাইনিজ খাবারে এর প্রভাবই বেশি। কিন্তু বাটন মাশরুম উৎপাদন কষ্টসাধ্য। তখন মনে হলো অবশ্যই এ সম্পর্কে আমার দেশের মানুষের জানা উচিৎ।

এরপর শুরুতে নিজের বাসার ছাদে ছোট পরিসরে শুরু করি। সকাল-বিকাল এর পরিচর্যা করি। দুই সপ্তাহের মাথায় এর ফলন শুরু হয়। প্রথমবার ২ কেজির মতো হলো। পরিবারের চাহিদা পূরণের পর পরিচিতদের কাছে বিক্রি শুরু করি। এরপর এলাকার দুইজন মহিলা নিয়োগ করলাম সহযোগি হিসেবে। তাদের রোজ হিসেবে কিছু টাকা দিতাম। এরপর তাদেরকেই কিছু স্পন বা বীজ কিনে দিলাম। তাদের আমার সঙ্গে রেখে কাজ শিখিয়েছি। তাদের ফলনও ভালো।’’

মাত্র ৩৫০ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন তামান্না। ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) ও ই-ক্যাবের (ই- কমার্স অ্যাসোসিয়েশ অব বাংলাদেশ) সাবেক প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে বেকারত্ব নিরসনে নিজের উদ্যোগ নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে চান তিনি।   

ঢাকা/মাহি