উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

হ্যান্ডপেইন্টিংয়ে উদ্যোক্তা সুমীর ভবিষ্যৎ

আফসানা সুমী। পরিবারের বড় সন্তান। গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর হলেও জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন তিনি।

সুমী একজন দেশি পণ্যের ই-কমার্স উদ্যোক্তা। তার উদ্যোগের নাম গুটিপোকা। অনলাইনে তার ফেসবুক পেজের সব পণ্যের মধ্যে নিজ হাতে আঁকা পণ্যই অন্যতম। তিনি তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডিতে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া।

রাইজিংবিডি: কেমন আছেন?

আফসানা সুমী: ভালো আছি, তবে একটু ব্যস্ততা তো আছেই।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুর গল্পটা যদি বলতেন।  

আফসানা সুমী: ব্যবসার শুরুটা ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। সারাজীবন চাকরি করবো এমনটাই পরিকল্পনা ছিল। আমার মা একজন উদ্যোক্তা। মায়ের ছত্রছায়ায় থেকে নিজের মতো কিছু করার ইচ্ছা থাকলেও সেটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেবো ভাবিনি কখনো। তাই শুরুটা যখন করি তখন অনেক ভালোভাবে গুছিয়ে করা হয়নি। পুঁজি বলতে ছিল শুধু নিজের ছবি আঁকার যোগ্যতা। কীভাবে ছবি তুলবো, ক্রেতার সঙ্গে ডিলিংস কেমন হবে, ডেলিভারি সিস্টেম কী হবে, সবই কাজ করতে করতে শিখেছি।  

রাইজিংবিডি: কি কি পণ্য নিয়ে কাজ করছেন?

আফাসানা সুমী: হাতে আঁকা পোশাক ও গহনা তৈরি করি মূলত। তবে জুতা, ব্যাগসহ নানা পণ্যও আছে।

রাইজিংবিডি: ঠিক কোন ধরনের চিন্তা-ভাবনা থেকে হ্যান্ডপেইন্ট পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা হলো? 

আফসানা সুমী: ওই যে বললাম, আমার পুঁজিই ছিল আঁকার ক্ষমতা। তাই এ নিয়েই শুরু করি। এই বিষয়েই আমার জ্ঞান ভালো, দক্ষতা ভালো।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কি অনলাইন কেন্দ্রিক, নাকি অন্য কোনো উপায়ে ছিল?

আফসানা: অনলাইন কেন্দ্রিক।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?

আফসানা সুমী: নিজের এবং আমার পার্টনারের। গুটিপোকার সহ-স্বত্তাধিকারী খন্দকার মহিউদ্দিন। তার পরিশ্রম ও দূরদর্শিতা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি মননে শিল্পী, ব্যবসায়ী নই। ব্যবসাকে সঠিক গঠনে নিয়ে আসতে মহি অনেক শ্রম দিয়েছে। তাছাড়া আমার মা-বাবার প্রতিও আমি অনেক কৃতজ্ঞ। মা সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। পাশে থেকেছেন।

রাইজিংবিডি: আপনার ব্যবসার সফলতার কথা জানতে চাই।

আফসানা সুমী: গত ২৩ জানুয়ারি গুটিপোকার জন্মদিন। বয়স মাত্র ৭ বছর। এই অল্প সময়ে গুটিপোকা তার ৫ জন টিম মেম্বারের আর্থিক দায়িত্ব নিতে পেরেছে। এছাড়া গুটিপোকার কাঁচামাল যারা সরবরাহ করেন, যারা এর টেইলারিংসহ ছোটখাট আরো কাজে হাত বাড়ান সবার আয়ের একটি অংশ বহন করে। শিল্পের কদর খুব কম লোকে করে, এমন একটি দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই গুটিপোকার পণ্য পৌঁছে দিতে পারছি। ক্রেতা বাড়ছে, তাদের খুশি করতে পারছি, প্রবাসী অনেকেই দেশি পোশাক হিসেবে গুটিপোকাকে বেছে নেয়। সাফল্য বলতে এই অর্জনটাই আছে আমাদের।

রাইজিংবিডি: বর্তমান প্রেক্ষাপটে আপনার ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনা কী?

আফসানা সুমী: গুটিপোকা একদিন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা পাবে এটাই স্বপ্ন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে গুটিপোকার শাড়িতে দেখতে চাই।

রাইজিংবিডি: নতুন উদ্যোক্তারা এই পেশায় আসতে চাইলে, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

আফসানা সুমী: অনলাইন ব্যবসা সহজ মনে হলেও অফলাইন ব্যবসার তুলনায় কম জটিল নয়, বরং কিছু ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে এখানে। তাই দীর্ঘস্থায়ী ব্যবসা করতে চাইলে নতুনদের উচিত পরিশ্রম করার মানসিকতা নিয়ে আসা। আগে থেকে নিজের দক্ষতার জায়গা খুঁজে বের করা। ব্যবসায় ব্যর্থতা আছে, আয়ও রাতারাতি হয় না। অন্তত ৩ বছর ব্যবসায় বিনা লাভে শ্রম দেওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি।

রাইজিংবিডি: ধন্যবাদ আপনাকে।

আফসানা সুমী: আপনাকে ও রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ।