উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

করপোরেট প্রফেশনাল থেকে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা তাসনুভা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেই করপোরেট প্রফেশনাল হিসেবেই ক্যারিয়ার সূচনা করেছিলেন চট্টগ্রামের মেধাবী তরুণী তাসনুভা আকবর চৌধুরী। কিন্তু নিজের ভেতরের ক্রিয়েটিভ চিন্তাধারা আরো বড় কিছু করার স্বপ্ন করপোরেট লাইফ তাকে স্বস্তি দেয়নি। 

এখন তিনি চট্টগ্রামে দেশীয় পণ্যের একজন বহুল পরিচিত উদ্যোক্তা। তাসনুভার মাধ্যমেই সারাদেশে ২০ থেকে ২৫ জন তরুণ বিনা পুঁজিতে ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছেন। দেশীয় শিল্প ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে ইকো ফ্রেন্ডলি বাণিজ্যিক কার্যক্রম তাসনুভাকে করে তুলেছে অন্যদের থেকে আলাদা। তাসনুভার জনপ্রিয় অনলাইন ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ময়ুরাক্ষী’। রাইজিংবিডিকে তাসনুভা জানিয়েছেন করপোরেট লাইফ ছেড়ে দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প।

তাসনুভা আকবর চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং-এ বিবিএ সম্পন্ন করার পর দেশের বৃহৎ একটি আবাসন কোম্পানিতে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে তিনি চাকরি শুরু করেন। কিন্তু করপোরেট লাইফের বাঁধা-ধরা নিয়ম আর নিজের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগানোর খুব একটা সুযোগ না থাকায় চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পরিকল্পনা ঘুরতে থাকে মাথার ভেতর। ঠিক এই পরিকল্পনা থেকেই ২০২০ সালের শুরুর দিকেই ইতি টানেন করপোরেট লাইফ। 

একই বছরের আগস্ট মাসে শুধু দেশীয় শিল্প ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে দেশীয় পণ্য নিয়েই শুরু করেন ‘ময়ুরাক্ষী’। ময়ুরাক্ষীর সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত তার সহযোগী হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা আরিফুল হক। মূলত তাসনুভা এবং আরিফুল হক দুজন মিলেই ময়ুরাক্ষীকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তাসনুভার দেশীয় পণ্য এখন জনপ্রিয়তা লাভ করে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারাদেশে।

তাসনুভা জানান, তিনি প্রধানত দেশীয় কাপরের হ্যান্ড পেইন্ট শাড়ি. তাঁতের শাড়ি, ডাই শাড়ি, খাদি শাড়ি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীর হাতে বোনা শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়া তার অন্যান্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি ফতুয়া, মাটির তৈজসপত্র, পাটের ব্যাগ, হাতে তৈরি দেশীয় গহনা। ময়ুরাক্ষীর পণ্য তৈরি, বিপণন থেকে ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়া পর্যন্ত পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব (ইকো ফ্রেন্ডলি) পণ্য হিসেবে নিশ্চিত করা হয়। প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও কোথাও কোনো প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হয় না।

তাসনুভা আরো জানান, বর্তমানে একটি ছোট্ট কারখানায় ময়ুরাক্ষীর পণ্য তৈরির কার্যক্রম চলছে। এতে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি টিম কাজ করছে, এদের রয়েছে নিজস্ব সৃজনশীলতা এবং শৈল্পিক কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা। 

সারাদেশে কমপক্ষে ২৫ জন তরুণকে বিনা পুঁজিতে ময়ুরাক্ষীর পণ্য নিয়ে বিজনেস করার সুযোগ করে দিয়েছেন তাসনুভা আকবর চৌধুরী।

চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিংয়ে এমবিএ অধ্যায়নরত তাসনুভা আকবর চৌধুরী বলেন, ‘আমি দেশকে ভালোবাসি। দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে আমি আমার পণ্য তৈরি ও বিপণনের মাধ্যমেও তুলে ধরি। ময়ুরাক্ষীর ক্রিয়েটিভ টিম সবসময় দেশের বিলুপ্তপ্রায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে শাড়ি গহনায় উপস্থাপন করে’। সারাদেশে ময়ুরাক্ষীর আরো বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যকে ব্র্যান্ডিং করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তাসনুভা আকবর চৌধুরী।