মন এবং মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা একজন নারীকে সফল উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করতে পারে, এর অন্যতম উদাহরণ চট্টগ্রামের পরিচিত মুখ ‘চারকন্যা’র উদ্যোক্তা সাবিহা বীথি। অনার্সে পড়াকালীন সময়ে বিয়ে হয়ে গেলেও একজন সু-গৃহিণী থেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন দুই সন্তানের জননী বীথি।
এখন তার ডিজাইন করা সব বয়সী নারীদের যে কোনো ধরনের পোশাক কিংবা শাড়ির কদর চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারাদেশে। বীথির প্রতিষ্ঠানের নাম ‘চারকন্যা’। রাইজিংবিডিকে বীথি জানিয়েছেন নানা প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘চারকন্যা’।
বীথি জানান, ২০১০ সালে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর সম্পন্ন করেন ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই সন্তানের মা হয়ে যাওয়ায় সন্তান সংসার সামাল দিয়ে কোনো চাকরিতে যোগ দেওয়ার সাহস করেননি। তবে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু করার তাগাদা ছিল মনের ভেতর। সেই তাগাদা থেকেই ২০১৭ সালে নিজের ডিজাইন করা নারীদের পোশাক নিয়ে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে শুরু করেন ‘চারকন্যা’।
বীথি বলেন, খুব ছোটবেলা থেকেই আমি নিজের পোশাকের ডিজাইন নিজে করতে পছন্দ করতাম। কলেজ লাইফে বান্ধবীরা খুব উৎসাহ দিতো, পছন্দ করতো আমার ডিজাইন। নিজেরও খুব ইচ্ছে ছিল ফ্যাশন ডিজাইন সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করবো। কিন্ত শেষ পর্যন্ত ম্যানেজমেন্ট সাবজেক্ট নিয়ে মাস্টার্স শেষ করি। সবসময় একটা স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করবো। সেই ভাবনা থেকেই চারকন্যা নামকরণে আমার পথচলা।
চারকন্যা নামকরণ প্রসঙ্গে বীথি বলেন, অনেকেই ভাবেন হয়তো চার বোন কিংবা চার মেয়ে থেকেই এই নামকরণ। আসলে আমরা প্রতিটি মেয়েই এই চারটি মৌলিক সম্পর্ক বয়ে চলেছি। প্রতিটি মেয়েই জন্মলগ্ন থেকে কখনো কন্যা, কখনো বোন, কখনো স্ত্রী কখনো বা মা। প্রতিটি সম্পর্কই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অনেক দায়িত্বের। এই অনুধাবন থেকে আমার উদ্যোগের নাম চারকন্যা।
তিনি আরো বলেন, আমার কাজের মূল থিম হচ্ছে দেশ এবং প্রকৃতি। দেশীয় কাজকে ভালোবেসে চারকন্যার পথচলা। দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে স্বতন্ত্র ও আধুনিকভাবে আমরা সুই-সুতা দিয়ে সুনিপুন কাজ করে যাচ্ছি। উচ্চ শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত, শহর কিংবা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা ‘চারকন্যা’র কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সাবিহা বীথি জানান, তার উদ্যোগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী। নিজস্ব কারখানায় নিজস্ব ডিজাইনে তিনি নারীদের সব ধরনের থ্রি পিস, শাড়ি, ফতুয়া, লেহেঙ্গা এবং পুরুষের পাঞ্জাবি তৈরি করেন। চট্টগ্রাম ঢাকা ছাড়িয়ে সারাদেশেই রয়েছে চারকন্যার রিপিটেড গ্রাহক। স্বতন্ত্র এবং নান্দনিক ডিজাইনকে প্রাধান্য দিয়েই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট নিয়ে পোশাক তৈরি করে চারকন্যা। ফলে রিপিটেড ক্রেতার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে বলে জানান বীথি।
বিদেশি পোশাকের আধিপত্যের কারণে দেশীয় পোশাক নিয়ে কাজ করা পুরোপুরি চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। একদম স্রোতের বিপরীতে কাজ করার মতো। সেই দিক থেকে নিজের মনোবল নিজে ধরে রেখে যে কাজ করে যাচ্ছি, এজন্যই আমি নিজেকে নিজে ধন্যবাদটা দিতে চাই।
এক পুত্র এবং এক কন্যা সন্তানের জননী বীথির স্বামী আলমগীর আলম একজন ব্যবসায়ী। নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে স্বামীর সহযোগিতা এবং অবদানকে স্বীকার করে বীথি বলেন, আমার স্বামী অনেক সাপোরটিভ। তিনি প্রতিনিয়ত আমাকে উৎসাহ যোগান, প্রয়োজনে কাজে সহায়তা করেন।
চারকন্যা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আরো বহুদূর যাওয়ার স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে বীথি বলেন, শুরুটা চট্টগ্রাম থেকে হয়েছে। স্বপ্ন রয়েছে এর পরিসর আরো অনেক বড় হবে। ঢাকাতে চারকন্যার বড় শো-রুম করার পরিকল্পনা রয়েছে সাবিহা বীথির।