উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে সিলেটের বেতপণ্য

সুলতানা পারভীন, জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে। সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছেন। বর্তমানে পরিবারসহ সিলেটেই তার বসবাস। করোনার সময় চাকরি হারিয়ে হতাশা থেকে উদ্যোক্তা হয়েছেন সুলতানা। তার ফেসবুক পেজের নাম ‘চিরাচরিত’। এছাড়াও তিনি ব্যবসার পাশাপাশি ব্যবসাবিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ উই’র (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) মডারেটর ও সিলেট জেলার উদ্যোক্তা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।  দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে তার উদ্যোগের গল্প বলেছেন। সুলতানার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাইজিংবিডি ডটকমের উদ্যোক্তা পাতার সহ-সম্পাদক মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া।

রাইজিংবিডি : কেমন আছেন? সুলতানা পারভীন: ভালো আছি। 

রাইজিংবিডি : ব্যবসা শুরুর গল্পটা জানতে চাই। সুলতানা পারভীন :  জি অবশ্যই শুরুটা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিল। কেননা আমার ব্যবসার শুরুই ছিলো গত বছর এপ্রিলে করোনার সময়ে। শুরুতে আমি একজন কাপড়ের উদ্যোক্তা ছিলাম পাশাপাশি চাকরি করতাম। কিন্তু করোনার কারণে আমার চাকরি চলে যায়। তখন অনেক হতাশ হয়ে ঘরে বসে ছিলাম। উই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিলেটের ঐতিহ্য বেতপণ্য নিয়ে কাজ করি। ব্যবসাকে যখন প্রাধান্য দিয়েছি ঠিক তখনই লকডাউনের জন্য পণ্য ডেলিভারি দিতে অনেক ঝামেলা হতো। কারিগররা ঠিকমতো কাজ করতে পারতো না। এদিকে লোকের কথা তো ছিলই। বেত পণ্য নিয়ে কাজ করা ছেলেদের জন্যই নাকি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। সেখানে একজন মেয়ে হয়ে এমন পণ্য নিয়ে আমি নাকি সফল হতে পারবো না। এমন অনেক কথা শুনেছি। কিন্তু তাদের কথায় দমে যাইনি।

রাইজিংবিডি: কী কী পণ্য নিয়ে কাজ করছেন? সুলতানা পারভীন : আমি সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প নিয়ে কাজ করছি। বেতের তৈরি সকল পণ্য এবং হোম ডেকর, এছাড়াও কাস্টমাইজ ডিজাইন ও বেতের নানান ফিউশন নিয়েও কাজ করি। পাশাপাশি নিজের ডিজাইন করা পোশাকও রয়েছে আমার পেজে।

রাইজিংবিডি: বেতপণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা কেন ছিল? সুলতানা পারভীন : সত্যিকার অর্থে উই’তে যখন দেশীয় পণ্যের সিলেবাস নিয়ে কাজ শুরু হয়, তখন অন্যান্য উদ্যোক্তারা সিলেটের নানান পণ্য নিয়ে কাজ করার কথা বলেন। আমি একটু ভিন্ন চিন্তা করি সবসময়ই। বেত আমাদের সিলেটের ঐতিহ্যবাহী একটি শিল্প।  বর্তমানে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে অথচ এই শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। আমি চিন্তা করি এই শিল্পকে বাঁচাতে। এর সঙ্গে জড়িত কারিগরদের কষ্টের কথা চিন্তা করেই বেতপণ্য নিয়ে আমি কাজ শুরু করি।

রাইজিংবিডি: ব্যবসার শুরুটা কী অনলাইনকেন্দ্রিক নাকি অন্যকোন উপায়ে ছিল? সুলতানা পারভীন : জি, অবশ্যই শুরুটা অনলাইনকেন্দ্রিক ছিল। উই’র সঙ্গেই আমার উদ্যোগের যাত্রা শুরু এবং এখনো ভালোভাবে আমার ব্যবসা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। 

রাইজিংবিডি: আপনার ব্যবসার সফলতার কথা জানতে চাই। সুলতানা পারভীন : এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র উই’তেই আমার বিক্রি ২১ লাখ টাকার বেশি। দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতে আমার পণ্য পরিচিত করাতে ও পৌঁছে দিতে পেরেছি। দেশের বাইরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি দেশে আমার পণ্য গিয়েছে।  কানাডা ও কুয়েত থেকেও অর্ডার পেয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে অনেক ভালো কিছু করতে পেরেছি।

রাইজিংবিডি: উদ্যোক্তা জীবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল? সুলতানা পারভীন : ব্যবসা শুরু করি শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা নিয়ে। তাই স্যারের ভূমিকা অনেক বেশি ছিল।  কৃতজ্ঞতা ফেসবুক গ্রুপ উই-র প্রতি।  উই না থাকলে আমি দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা হতে পারতাম না। উই’র প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কাজ ও কথায় অনুপ্রেরণা পেতাম সবসময়।  নিশা আপু অনেক চেষ্টা করছেন আমাদের ব্যবসায়িক দক্ষতা বৃদ্ধিতে।  এজন্য তিনি উই থেকে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে আমাদের নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছেন। এছাড়াও আমার স্বামী, পরিবার, কারিগর ও ক্রেতারা সবাই অনেক বেশি সহযোগিতা করেছেন। মূলত তাদের জন্যই আজকের এই আমি।

রাইজিংবিডি : ব্যবসা নিয়ে পরিকল্পনা কী? সুলতানা পারভীন : আমার ব্যবসা নিয়ে আমি অনেক দূর যেতে চাই। বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় এমনকি প্রতিটি ঘরে বেতপণ্য পৌঁছে দেওয়া আমার স্বপ্ন। বিদেশে রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতি বৃদ্ধিতে অংশ নিতে চাই। এই শিল্পকে একটা আধুনিক রূপ দিয়ে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করাই আমার একমাত্র উদ্দেশ্য। 

রাইজিংবিডি : উদ্যোক্তা জীবনের শুরু কতদিন ধরে এবং রেভিনিউ কেমন? সুলতানা পারভীন : আমার উদ্যোক্তা জীবন আসলে শুরু সেই ২০১১ সাল থেকে। তখন আমি অনার্সে পড়াশোনা শুরু করি। তবে বেত নিয়ে কাজ শুরু করি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে। রেভিনিউ সেইভাবে হিসাব করা হয়নি। কারণ আমার একটাই ইচ্ছে ছিল একদম সীমিত লাভে ক্রেতার কাছে সঠিক পণ্য পৌঁছে দেওয়া। বেতকে সবার কাছে নতুন করে পরিচয় করা। যাতে এই শিল্প হারিয়ে না যায়। বেত শিল্প যেন পুনরায় ফিরে পায় তার আপন ঐতিহ্য।

রাইজিংবিডি : নতুনদের জন্য কিছু বলুন। সুলতানা পারভীন : এই শিল্পের সম্ভাবনা অনেক। যে কেও এটা নিয়ে কাজ করতে পারে। তবে অবশ্যই বেত নিয়ে অন্তত তিন মাস পড়াশোনা  করতে হবে। এতে সঠিক তথ্য দিয়ে ক্রেতাদেরকে আকৃষ্ট করতে সহজ হবে। গতানুগতিক ডিজাইনের বাইরে সৃজনশীল ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। নিজের ব্যবসা নিয়ে সততার সঙ্গে কাজ করলে সফলতা আসবেই।

রাইজিংবিডি : ধন্যবাদ আপনাকে । সুলতানা পারভীন : আপনাকে ও রাইজিংবিডি পরিবারকেও অনেক ধন্যবাদ।