উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

জামদানিতে অনলাইন ক্রেতাদের ঘরোয়া বৈশাখ

বরাবরের মতো ফিরে এসেছে নতুন বছর, কিন্তু একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। গত এক বছর থেকে শুধু আমাদের দেশে নয় সারাবিশ্ব করোনা মহামারির কারণে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে। পহেলা বৈশাখ বাঙালির জন্য অনেক আশা নিয়ে আসে। কারণ এ সময় মানুষের মধ্যে যেমন আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়, সেই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের মধ্যে থাকে কেনাবেচা নিয়ে অনেক আশা। মূলত পহেলা বৈশাখে সাধারণ মানুষ দেশীয় পোশাককে বেশি পছন্দ করেন এবং সেই হিসেবে কেনাকাটাও করে থাকেন। তবে কেনাকাটার ক্ষেত্রে গতবছর এবং এবছরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। চলুন জেনে নেওয়া যাক অনলাইনে কেনাকাটা নিয়ে ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা।

কাকলী তালুকদার (স্বত্বাধিকারী, Kakoly's Attire) সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা। একজন ই-কমার্সের অনলাইন উদ্যোক্তা হিসেবে যদি বলতে যাই তাহলে বলতে হয়, মানুষের মধ্যে অনলাইনে কেনাকাটার আগ্রহ অনেক বেড়েছে। যেহেতু গতবছর থেকে মহামারির একটা প্রকোপ চলছে সারাবিশ্বে। তাই সাধারণ মানুষ নিজেদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে অফলাইনে কেনাকাটা থেকে সরে এসে ধীরে ধীরে অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হচ্ছেন।  গতবছরের তুলনায় এবছর অনলাইন কেনাকাটায় চাহিদা অনেক বেড়েছে। যেহেতু এবার পহেলা বৈশাখ এবং ঈদ দুইটি অনুষ্ঠান প্রায় কাছাকাছি। তাই অনেকে দেখা যাচ্ছে বৈশাখের কেনাকাটার সঙ্গে ঈদের কেনাকাটাও এখন থেকেই শুরু করে দিয়েছেন। ক্রেতার কথা বলতে গেলে তাদের ভালো রেসপন্স পেয়েছি এবারের বৈশাখী কেনাকাটায়। ঘরে বসে নিজের পছন্দের পণ্যটি পেয়ে তারা সবাই সন্তুষ্ট। আমার উদ্যোগ যেহেতু জামদানি নিয়ে তাই এই পণ্যের প্রতি মানুষের যে আলাদা একটা অনুভূতি রয়েছে, তা পণ্য হাতে পাওয়ার পর তাদের কথা শুনে বুঝা যায়। দেশের মানুষের মধ্যে দেশীয় পণ্যের প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছে তা ক্রেতাদের চাহিদা থেকে বোঝা যায়।

জান্নাতুল ফেরদৌস (অনলাইন ক্রেতা) আজ পহেলা বৈশাখ। বাঙালির জীবনে আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। আজকের সূর্যোদয়ের মধ্যে দিয়ে সূচনা হয়েছে বাংলা ১৪২৮ সালের। উৎসবহীন এই বৈশাখে নিজেকে প্রকৃতিতে ছড়িয়ে দিতে না পারলেও, অনলাইন ভিত্তিক কিছু প্ল্যাটফর্মের ছোঁয়ায় বৈশাখের সামান্য আমেজ নিতে পেরেছি বলে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার ‘Kakoly's Attire’-র। গত ১২ এপ্রিল আমি অনলাইন ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম থেকে একটি মসলিন জামদানি শাড়ি কিনেছিলাম যা আমার জীবনে সেরা জামদানি শাড়ি গুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে ‘কোভিড-১৯’ পরিস্থিতিতে অনলাইন শপিংয়ের যেন জুড়ি নেই। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশেও অনলাইন শপিং অনেক এগিয়েছে। নিঃসন্দেহে এর কিছু সুবিধা রয়েছে যেমন-

যেকোনো সময়ে শপিং - যেকোনো সময়ে যেকোনো স্থান থেকে শপিং করার এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে অনলাইন শপিং।

সহনীয় মূল্য - অনলাইন শপিংয়ে কোনো ৩য় পক্ষ /মিডিল ম্যান/দালাল থাকে না বলে তুলনামূলক সহনীয় দামে পণ্য কেনাবেচা করা যায়।

বৈচিত্র্যতা - সময় বাঁচিয়ে বিভিন্ন জায়গায় না ঘুরে হরেক রকম পণ্যের নির্ভরযোগ্য জায়গা হচ্ছে অনলাইন শপিং।

ভিড় থেকে মুক্তি - বাজারের ভিড় অনেকেই সহ্য করতে পারেন না। ফলে তাদের পছন্দমত কোন জিনিস অনেক সময় কিনতে পারেন না। শুধুমাত্র অনলাইন শপিং-ই ভিড় থেকে মুক্তি দিয়েছে মানুষকে।

উপহার - অনলাইন শপিং সাইটগুলো ক্রেতা-বিক্রেতার সুসস্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য ক্রেতাদের উপহার দিয়ে থাকে, যা অফলাইনে চিন্তাই করা যায় না।

অপছন্দের পন্য কেনা থেকে বিরত থাকা - অফলাইনে শপিংয়ের সময় দোকানদারের চাপাচাপিতে অনেক কিছু পছন্দ না হলেও কিনতে হয়, এর থেকে মুক্তি পেতে অনলাইন শপিংয়ের বিকল্প নেই।

সুবর্না সাথী (স্বত্বাধিকারী, ‘Achyuta-অচ্যুত’) প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে অনলাইন থেকে কেনাকাটা করি। কারণ এখানে নিজের রুচিসম্পন্ন শাড়ি, ড্রেস, পাঞ্জাবি কিনতে পারি। তাছাড়া নিজের চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন সম্পন্ন কাস্টমাইজ শাড়ি, ড্রেস নির্দিষ্ট বাজেটের মধ্যে অর্ডার করতে পারি। এবছরও আমি পরিবারের সকলের জন্য অনেক কিছু কিনেছি। আমি আমার কেনা জিনিসগুলো নিয়ে বেশ খুশি।

অভিজ্ঞতার কথা বলতে গেলে এ এক চমৎকার অভিজ্ঞতা। অনলাইনে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক খুব আন্তরিক হচ্ছে। এখানে পারস্পরিক একটা মেলবন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে আমি চাইলে নতুন কোনো ক্রিয়েশন সম্পর্কে জানতে পারি। বর্তমানে অনলাইনে বিক্রেতারা পণ্যের মানের দিকে খেয়াল রাখে না বরং নিরাপদভাবে ক্রেতারা তাদের ক্রয়কৃত পণ্য পাচ্ছে কী না তাও খেয়াল রাখে।আমি মনে করি এটাই সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক প্ল্যাটফর্ম।

এবার যেমন ‘Kakoly's Attair’-র কাকলী আপুর থেকে আমি নিজের জন্য তার নিজস্ব নকশা করা এক্সক্লুসিভ শাড়ি ও কাস্টমাইজ শাড়িও নিয়েছি। কারণ ‘জামদানি’ ছাড়া যেকোনো উৎসব অসম্পন্ন। আর কাকলী আপু আমাকে জামদানি সম্পর্কে আশ্বস্ত করতে পেরেছে। পণ্যের গুনগত মান, কাউন্ট, দামের তারতম্য। এখানে বিশ্বস্ততা তৈরি হয়েছে। আমরা মার্কেটে গেলে কাউন্ট, নকশা না জেনে দামি জামদানি কিনে আনতাম। কিন্তু অনলাইনের প্রেক্ষাপটে কাকলী আপু এতো করে জানিয়েছে যে, আমার অফলাইন কেনাকাটার আগ্রহ নেই বললেই চলে। আপুর নতুন নতুন ফিউশন আনার যে প্রচেষ্টা যেমন কুশন কভার। এটা অনলাইন ছাড়া অফলাইনে হয়তো জনপ্রিয়তা পেতো না। আমি নতুন নতুন ফিউশনের জন্যই জামদানির প্রতি আকৃষ্ট এবং এর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সবসময় কাজ করে।

এরপর এবার প্রথম ভেজিটেবল ডাই কিনলাম এনিকা আপুর ফেসবুক পেজ ‘তেজস্বী’ থেকে। আপুর ক্রিয়েশন আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই গরমে বাটিক, ডাইয়ের উপর শান্তি নেই। এছাড়াও মসলিনের উপর ডাই করে শাড়িটা সফট করে ফেলার এক অসাধারণ ক্রিয়েশন তার। এই সৃষ্টিশীলতা জানতে পেরেই তার থেকে কেনাকাটা করেছি নিজের জন্য আমার পরিবার ও কাছের মানুষদের জন্য।

ফেসবুক পেজ ‘আরিয়াস কালেকশন’-র নিগার আপুর থেকে প্রথম খেশ শাড়ি কিনেছি। পণ্য সম্পর্কে জেনে খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে এরপর গাউনসহ এক্সক্লুসিভ শাড়ি নিয়েছি। সত্যিই খেশ শাড়ি সম্পর্কে জানতে হলে অনলাইনের বাইরে জানাটা হয়তো হতো না।

এবার বলবো ‘উইম্যান্স অ্যাটায়ার’ ওনার অফ ফারহানা খান। আপু মূলত জামদানি কাটা ওয়াশ নিয়ে অনেক জানিয়েছেন ক্রেতাদেরকে। আশ্বস্ত করেছেন একটা পুরাতন জামদানিকে কাটা ওয়াশের মাধ্যমে কীভাবে পূর্নাঙ্গ রূপ দেওয়া যায়।  আপুর থেকেও অনেক ওয়ান পিস ও শাড়ি নিয়েছি গিফটের জন্য।

অনলাইনে কেনাকাটা আমার কাছে নিরাপদ মনে হয় কেনোনা সময় সাশ্রয় হয়। এছাড়া ঘরে বসেই আমি আমার কাঙ্খিত পণ্যটি সাধ্যের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি।

সর্বোপরি একটা কথা বলবো, তা হচ্ছে এই যে অনলাইন উদ্যোক্তারা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের কাছে একটা বিশ্বস্ততা অর্জন করেছে, এতে দেশি পণ্যের প্রচার এবং বিক্রেতাদের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এভাবে নতুন নতুন ফিউশন এবং গুনগত মানসম্পন্ন পণ্য উদ্যোক্তারা তাদের ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরছে।