বেতের ঝুড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছে শত-শত নারী। যাদের অনেকেই এর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এমন দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদের আলোর পথ দেখিয়েছে ই-কমার্স সেক্টর।
একধরনের প্লাস্টিকের বেত দিয়ে তৈরি করা হয় এই ঝুড়িব্যাগ। এটি মূলত ঢাকনা যুক্ত এবং ঢাকনা ছাড়া দুভাবেই বানানো হয়। সাইজ অনুযায়ী তৈরি হয় বলে দামেও তারতম্য রয়েছে। সম্পূর্ণ হাতে তৈরি এই ঝুড়ি ব্যাগগুলোর সুবিধা হল, এগুলো সহজেই ধোয়া ও ব্যবহার করা যায় অনেক দিন।মূলত পার্বত্য এলাকার আদিবাসী নারীরা এই ঝুড়িব্যাগগুলো বানায়। তবে এখন অনেক বাঙালি পরিবারের মেয়েরাও এটি বানিয়ে থাকে। মেয়েদের একটা বিকল্প কর্মসংস্থানের জায়গা হলো এই বেতের ঝুড়ি ব্যাগ শিল্প।
ই-কমার্সে রাঙামাটির বেতের ঝুড়িব্যাগের ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিদিন অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে এই ব্যাগ। এছাড়াও পর্যটকরাও এখান থেকে ব্যাগ হাতে করে নিয়ে যায়। রাঙামাটি থেকে যারা অনলাইনে এই ঝুড়িব্যাগের ব্যবসার করছেন, তারা তুলে ধরেছেন তাদের কথা।
সাইমা সুলতানা (স্বত্বাধিকারী, ইনায়াস ফ্যাশন) আদিবাসীদের হাতে তৈরি পণ্যগুলো বরাবরই আমাকে আকৃষ্ট করতো। ইচ্ছে ছিল আমার জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্যগুলো সবার সামনে তুলে ধরার। যা একমাত্র ই- কমার্সের মাধ্যমেই সম্ভব। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৩৬টি জেলাতে আমার পণ্য পৌঁছে দিতে পেরেছি। যা ই-কমার্সের কারণে সম্ভব হয়েছে।
শ্রেষ্ঠী চাকমা (স্বত্বাধিকারী, তুঙুবি) অনলাইনেই প্রথম আমি ঝুড়িব্যাগ বিক্রি করি। আগে আমি অফলাইনে বিক্রি করতাম। বর্তমানে অনলাইনে ঝুড়ি ব্যাগ নিয়ে অনেক সাড়া পাচ্ছি। আমি অনেক আশাবাদী আমার নিজের বানানো ঝুড়িব্যাগ নিয়ে। ব্যাগগুলো নিজে বানাই, তাই পণ্যের সঠিক তথ্য ক্রেতাকে দিতে পারি সহজেই। পণ্যের মান ঠিক রেখে ভালো ও মজবুত ঝুড়িব্যাগ সবার হাতে পৌঁছে দিতে চাই। এটাই আমার ব্যবসার মূল লক্ষ্য।
রোজিনা ইসলাম রোজী (স্বত্বাধিকারী, লুবাবাহ বুটিক ঘর) অনলাইন ব্যবসায় বেতের ঝুড়ির চাহিদা অনেক। বেতের ঝুড়ির গুনগত মান ভালো হওয়াতে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। আমার সব ক্রেতারা আমাকে বলেছে, ‘আপু ছবির চেয়ে বাস্তবে এটা অনেক বড় এবং সুন্দর’।আমি অনেক ভালো ভালো রিভিউ পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার টাকার ঝুড়িব্যাগ অনলাইনে বিক্রি করেছি।
রুমা আক্তার (স্বত্বাধিকারী, রুমাইসা কালেকশন) দেশ-বিদেশের মানুষ ঝুড়ি সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। যে একবার কিনেছে সেই ক্রেতা পূনরায় অর্ডার করেছে। অনলাইনে ঝুড়িব্যাগ নিয়ে কাজ করে এত সাড়া পাব বুঝতে পারিনি। অনেকটা অনিশ্চিত ভাবে এমন পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি, কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি মানুষের মনে জায়গা করে নেবে বুঝতে পারিনি। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিদেশে প্রোডাক্ট পাঠাতে অসুবিধা হচ্ছে। মানুষের চাহিদা থাকা সত্বেও নানা সমস্যার জন্য পণ্য পাঠাতে পারছিনা। ই-কমার্সের মাধ্যমে দেশের ৫৫ জেলায় আমার ঝুড়িব্যাগ পৌঁছে গেছে। আমেরিকা, ইন্ডিয়া, কানাডা থেকেও আমি অর্ডার পেয়েছি এবং পাচ্ছি। আড়াই মাসে অনলাইনেই প্রায় দুই লাখ টাকার মতো বেতের ঝুড়িব্যাগ বিক্রি করেছি।
কামরুন্নাহার সাখী (স্বত্বাধিকারী, কেএন এস কালেকশন) ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) থেকে সিদ্ধান্ত নেই বেতের ঝুড়িব্যাগ নিয়ে ব্যবসা করার। উইর মাধ্যমে আমি অনলাইনে ঝুড়িব্যাগের অনেক সারা পেয়েছি। অল্প দিনেই দুই লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারি। দেশীয় এমন পণ্যকে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার সামনে তুলে ধরতে পেরেছি। একদিন বিদেশের মাটিতেও আমার উদ্যোগের পণ্য ছড়িয়ে দিতে চাই।
কাশপিয়া সুবাহ (স্বত্বাধিকারী, রাঙাগিরি) আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয়েছে বন্ধুকে সাহায্য করার মাধ্যমে। অনেক সময় টেক্সটাইলে যেতাম, তখন বেতের ঝুড়িব্যাগগুলো দেখে ভালো লাগতো। শখের বশে একবার পাবনার একটা আপুকে বেতের ব্যাগের ছবি দেখালাম। আপুর অনেক পছন্দ হলো একসঙ্গে ১৫টি ব্যাগের অর্ডার পেলাম। ই-কমার্সের মাধ্যমে পাহাড়ের এমন বেতের ব্যাগ বিক্রি করে অনেক আপুই এখন স্বাবলম্বী।
জান্নাত আরা (স্বত্বাধিকারী, রঙিন পাহাড়) বর্তমান সময়ে ই-কমার্সে বেতের ঝুড়ির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কেনোনা ই-কমার্স হচ্ছে এমন একটা ক্ষেত্র, যা আমাদের পণ্যকে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও নিয়ে যেতে পারে। এর বহুমূখী ব্যবহার এবং স্থায়িত্বের কারণে এমন পণ্যের প্রচলন বাড়ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এর বেশ চাহিদা রয়েছে।
লেখক : স্বত্বাধিকারী, এস এস এগ্রো প্রোডাক্ট।