উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ই-কমার্সে মেহেরপুরের লিচুর সম্ভাবনা

লিচু অত্যন্ত সুস্বাদু ও রসালো একটি ফল।  এর উৎপত্তিস্থল চীন হলেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জনপ্রিয়তা রয়েছে।  বাংলাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল, উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল এছাড়াও বিশ্বের অনেক অঞ্চলে লিচুর চাষ হয়। লিচু বিশ্বের রোমান্টিক ফল হিসেবেই পরিচিত। এই ফলটি পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।  দেখতে যেমন লালচে গাঢ় রুপ ধারণ করে তেমনি খেতেও অসাধারণ।

গ্রীষ্মের দ্বিতীয় মাস জ্যৈষ্ঠ। বাহারি রঙের বিভিন্ন ফলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে তোলে চারপাশ। বছরজুড়ে কম-বেশি ফল পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এ মাসেই। সুস্বাদু ফলের সরবরাহ বেশি থাকায় সবার কাছে মাসটি ‘মধুমাস’ নামেই পরিচিত। মধুমাসের ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম লিচু। আর মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে এখন লিচুকে ঘিরেই চলছে ব্যস্ততা। এ যেন লিচুর উৎসব।

চলতি মৌসুমে মুকুলের আবরণ পেরিয়ে লিচু বড় হতে শুরু করেছে।  জৈষ্ঠ্যমাস আসতে কয়েকদিন বাকি। বৈশাখের শেষে লিচুর সবুজ গুটি থেকে টকটকে লাল রঙে রাঙিয়েছে গ্রাম। লিচুর রাজ্যে পরিণত হয়েছে মেহেরপুরের অনেক এলাকা। মাটির গুণাগুণ উর্বর হওয়ায় কারণে এই অঞ্চলের লিচু আঁটি ছোট, মোটা আঁশযুক্ত ও রসালো হয়। ফলে মেহেরপুরের লিচুর চাহিদাও অনেক। লিচু বাগানে পাখিদের আনা-গোনা, নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ এ অঞ্চলের পথচারী ও এলাকাবাসী।

স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত ৭১৬ বর্গ কিলোমিটারের এই কৃষিভিত্তিক জেলা মেহেরপুর। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়েছে এই জেলার আমের সুনাম৷ মেহেরপুর জেলার আম স্বাদের দিক থেকে যেমন প্রথম, তেমনি এ জেলার লিচুর গুনগত মান ও স্বাদ দেশব্যাপী বেশ প্রশংসনীয়। মেহেরপুর, গাংনি ও মুজিবনগরসহ  অন্যান্য উপজেলা ও গ্রামে লিচু চাষের চাহিদা বেড়েছে। মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে মেহেরপুর অঞ্চলে ৩৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৮ টন হারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক আগেই এই জেলার লিচু বাজারজাত হয়। এরফলে বাজারে এই লিচুর চাহিদা বরাবর বেশি। মোজাফফর জাতের আঁটি ও বোম্বাই লিচু, এই দুটো লিচুর চাষ মেহেরপুরে বেশি হয়। তবে ইতোমধ্যে  চায়না ৩ লিচুও চাষ হচ্ছে। এই অঞ্চলের মাটির গুনগত মান অনেক বেশি উর্বর। যে কারণে এই অঞ্চলের লিচুর স্বাদ ও মান অনান্য জেলার থেকে বেশ এগিয়ে।

ই-কমার্স এখন আমাদের জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করে তুলছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে গ্রাহকের সহজলভ্যতা হিসেবে মেহেরপুরের লিচুর সম্ভাবনা বেশ চোখে পড়ার মতো। এর মাধ্যমে খুব সহজেই মেহেরপুর জেলার লিচু বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই জেলার দারিদ্র্য বিমোচনে ও টেকসই উন্নয়নে ই-কমার্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই জেলার চাষীদের লিচু চাষে উদ্বৃত করা গেলে, ই-কমার্সে লিচুর বাজার বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে অঞ্চলের লিচু চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করতে সক্ষম হবে।

রাজধানী থেকে মেহেরপুরের দূরত্ব বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের চাষীরা লিচুর নায্যমূল্য পান না। যোগাযোগ সমস্যার কারণে পণ্যের সঠিক মূল্য না পেয়ে অনেক লিচু চাষী চরম হতাশায় ভোগে। অথচ মেহেরপুর ভালো মানের লিচু সুবিধাবাদী অসাধু ব্যবসায়ীরা অল্প মূল্যে ক্রয় করে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেশি দামে বিক্রি করছে। 

লিচুকে যদি ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির আওতায় আনা যায়, তবে উৎপাদক যেমন লাভবান হবে তেমনি উপকৃত হবেন ক্রেতারা। অপরদিকে ক্রেতারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে দেশের যেকোন প্রান্তে বসে বাগানের লিচু সঠিক মূল্যে নিতে পারবে। সেই সঙ্গে নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস পাবে। সুতরাং ই-কমার্সে মেহেরপুর জেলার লিচুর সম্ভাবনার গুরুত্ব অনেক। এখন প্রয়োজন শুধু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।

লেখক : স্বত্ত্বাধিকারী, বিডিম্যানগ্রোভ ডটকম