সাইমা সুলতানা, জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাঙামাটিতে। রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। বর্তমানে সেখানেই তার বসবাস। সংসারের পাশাপাশি নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সাইমা।
করোনাকালীনে ঘরে বসে সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে? সেই ভাবনা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। ভেবেছিলেন নিজ উদ্যোগে কিছু একটা করবেন। কিন্তু পুঁজির অভাবে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলেন সাইমা। অবশেষে মায়ের দেওয়া পাঁচ হাজার টাকায় উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন তিনি। তার ফেসবুক পেজের নাম “ইনায়া’স ফ্যাশন”। রাঙামাটি জেলার আদিবাসীদের হাতে তৈরি প্লাস্টিকের বেতের ঝুড়ি ব্যাগ, বাচ্চাদের পিনন হাদি সেট, থ্রি পিস নিয়ে ব্যবসা করছেন।
সাইমা সুলতানা বলেন, ‘আমি ২০২০ সালের মার্চ মাসে ব্যবসা শুরু করি। আমার মা আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দেন আর বলেন শুরু কর। সেই টাকায় ১৫ টা দেশীয় থ্রি পিস কিনে আনি। অবাক করা বিষয় হলো মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সবগুলো থ্রি পিস অফলাইনে বিক্রি হয়। এতে করে আমার কনফিডেন্স বেড়ে যায়। সেখান থেকে আমার ব্যবসার হাতেখড়ি। পরবর্তীতে জুলাই ২০২০ সালে আমার বড়বোন আমাকে ব্যবসা নির্ভর ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) যুক্ত করেন। মূলত তখন থেকে অনলাইনে আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু।
‘রাঙামাটি আদিবাসীদের বেতের পণ্যগুলো বরাবরই আমাকে আকৃষ্ট করত। তাছাড়া বাইরের জেলাগুলোতে যথেষ্ট গ্রহণ যোগ্যতা ছিল এই পণ্যের। নিজ জেলার পণ্যগুলো সবার সামনে তুলে ধরার জন্য মূলত আমার এসব পণ্য নিয়ে কাজ করা। কে কী বলবে, কী মনে করবে সেটা নিয়ে চিন্তা না করে কাজ করে গিয়েছি। কারণ আমি যে কাজটা করে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, সেটা নিয়েই কাজ শুরু করতে পেরেছি। আর একজন উদ্যোক্তাকে অবশ্যই ধৈর্য্যশীল হতে হবে। সেই ধৈর্য্য নিয়েই আজ আমি আমার ব্যবসা পরিচালনা করছি’।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার উদ্যোক্তা জীবনে সফল হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আমার মায়ের। মা আমাকে সবসময় সাহস যোগান। যদি কখনো চিন্তা করি আমাকে দিয়ে আর হবে না, তখনই মা বলেন- তুই পারবি,তোকে দিয়েই হবে। মায়ের এই কথাগুলো আমার উদ্যোক্তা জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অনুপ্রেরণা যোগায়। আসলে আমাদের সমাজে মেয়েরা ব্যবসা করবে সেটা অনেকেই পছন্দ করে না। আমিও যেহেতু একজন মেয়ে আমাকেও অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল এবং এখনো হয়। কিন্তু সেগুলো সামলে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস আমার আছে। কারণ ‘আমরা নারী, আমরাই পারি’।
পাঁচ হাজার টাকার পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে বর্তমানে সাইমার বিক্রি দাঁড়িয়েছে দুই লক্ষাধিক টাকার উপরে। রাঙামাটির বেতের পণ্যের মতো পণ্যগুলোকে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরাই তার মূল লক্ষ্য। বর্তমানে বেতপণ্য নিয়ে শো-রুম দেওয়ার ইচ্ছে আছে তার।
লেখক : স্বত্ত্বাধিকারী, এসএস এগ্রো প্রোডাক্ট