উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ঈদকে ঘিরে রাঙ্গামাটির উদ্যোক্তাদের ব্যস্ততা

উৎসব এবং পার্বনে বাঙালিদের কেনাকাটা ছাড়া জমেই না। অল্প কিংবা বেশি, শপিং হওয়া চাই-ই চাই। এবারের করোনার পরিস্থিতি ও ঘোষিত লকডাউনের কারনে পরিবেশ ভিন্ন থাকায় অনেকেই সরাসরি মার্কেটে যাওয়া হতে বিরত রয়েছেন। তবুও কি কেনাকাটা থেমে রয়েছে? সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই বিগত কয়েকদিনে বিপণিবিতানগুলোতে লক্ষ্য করা গেছে উপচে পড়া ভিড়।

মার্কেটের পাশাপাশি ক্রেতাদের রয়েছে অনলাইন শপগুলোর প্রতিও বাড়তি আকর্ষন। ঘরে বসে  ঝামেলা ছাড়াই সহজে কেনাকাটা সম্ভব হওয়ায় ই-কমার্সের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েই চলেছে। গত বছরের মত এবারও অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা গিয়েছে। দেশজুড়ে উদ্যোক্তাগনও অনলাইনে তাদের পেজগুলো সাজিয়েছেন নানান বাহারি পণ্যের পসরা নিয়ে । ঈদের বাকি রয়েছে আর মাত্র একদিন। শেষমুহূর্তের বেচাকেনায় ব্যস্তসময় পার করছেন প্রতিটি অঞ্চলের উদ্যোক্তারাও। রাইজিংবিডির আজকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রমজান ও ঈদকে ঘিরে রাঙ্গামাটির কয়েকজন উদ্যোক্তাদের তাদের উদ্যোগ নিয়ে ব্যস্ততা এবং অভিজ্ঞতার গল্প। চলুন শোনা যাক তাদের কাছ থেকেই-

শ্রেষ্ঠী চাকমা, স্বত্ত্বাধিকারী- তুঙোবি অব হিল

ঈদ মানেই কেনাকাটার ধুম। সে হিসেবে এবারের ঈদেও ক্রেতাদের আগ্রহ ও চাহিদা বেশ ভালো ছিল। আমি মুলত কাজ করি প্লাস্টিকের তৈরি ঝুড়ি ব্যাগ নিয়ে, যা আমার নিজের হাতেই বানানো। যদিও এবার আমার নিজস্ব পেজ থেকে তেমন বিক্রি আসেনি, তবে আমি প্রতিনিয়ত ফেসবুক গ্রুপ উইতে(উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম)  পণ্য নিয়ে পোস্ট করার বদৌলতে আমার সম্মানিত গ্রাহকদের পেয়েছি। তারাই আমাকে ইনবক্সে নক করে পণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস ও অর্ডার করেছে।

গ্রুপ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ায় এবারের ঈদে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতে হয়েছে আমাকে। যদিও ঝুড়িব্যাগ বানাতে একটু সময় লাগে, তবুও উৎসবের বিষয়টি মাথায় রেখে ঈদের আগে সময়মতই দেশের সকল জায়গায় পৌঁছে দিয়েছি আমার পণ্যকে। উল্লেখ্য, আমাকে পণ্যের ডেলিভারির জন্য যেতে হয় রাঙামাটি সদরে। বাড়ি থেকে লঞ্চে করে সদরে যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। তবুও যতো সমস্যাই হোক না কেনো, সঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে আমি বদ্ধপরিকর।

আমার পণ্যের পরিচিতি ও বিক্রয়ের যাবতীয় ক্রেডিট উইর প্রাপ্য। এটি কোন সেল গ্রুপ নয়।  উই মূলত দেশীয় পণ্যের একটি বিশাল প্লাটফর্ম, যেখানে উদ্যোক্তারা  ভালো কন্টেন্ট লেখার মাধ্যমে নিজ পণ্যের পরিচিতি বাড়ায়। বাকিদের অত আমিও উইর একজন গর্বিত সদস্য।

কুহেলী চাকমা, স্বত্ত্বাধিকারী- উদোন্দি

স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যে কোন উৎসবে মানুষের কেনাকাটার পরিমানটা একটু বেশিই থাকে। যেহেতু করোনার কারনে পরিস্থিতি ভিন্ন, তাই ক্রেতারা অনেকেই মার্কেটে যাওয়া থেকে বিরত আছেন। তাদের সুবিধার্থেই আমার ফেসবুক পেজ থেকে পণ্য বিক্রয়ের পোস্ট দেয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত লাইভের মাধ্যমেও এবারের পুরো রমজান মাস জুড়ে ক্রেতা ও দর্শকদের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এতে বেশ সুফলও পেয়েছি। পেজ থেকেই পণ্যের প্রচুর অর্ডার এসেছে। কিছু কিছু পণ্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় এখনও অর্ডার পেয়ে যাচ্ছি। ক্রেতাদের সাড়া পেয়ে আমি বেশ অভিভুত। তাই আমার ব্যবসায়ের সুনাম রক্ষায় যখন যে অর্ডারটি কমপ্লিট হচ্ছে, তখনই দেরি না করে সেটি ডেলিভারি দিয়ে দিচ্ছি। ঈদের আগে যেন সব ডেলিভারি শেষ করতে পারি, সেই চেষ্টাতেই  বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে আমাকে।

রোজিনা ইসলাম রোজি , স্বত্ত্বাধিকারী- জে আর উডল্যান্ড

সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য কেনাবেচার জন্য নির্ভরযোগ্য জায়গা হয়ে উঠেছে ই-কর্মাস । যার ফলে দেশের যে কোন অঞ্চল থেকেই এখন ব্যবসায়িক কার্যক্রম হয়ে উঠেছে বেশ সহজ। মানুষ চাইলেই এক জেলা থেকে অন্য জেলার পণ্য ক্রয় করতে পারছে। আমি রাঙ্গামাটিতে থাকলেও ই-কমার্সের বদৌলতে পৌঁছে যেতে পারছি যে কোন স্থানের ক্রেতাদের দ্বারপ্রান্তে। অনলাইনে যে কেউ আমার পণ্য অর্ডার করতে পারছে সহজেই।

আমি কাজ করছি কাঠের তৈরি ডিজাইন করা ফার্নিচার নিয়ে। সবার ঘরকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলাই হচ্ছে আমার কাজ। এবারের রমজান ও ঈদ মিলিয়ে অন্যান্য উদ্যোক্তাদের মত আমাকেও বেশ ব্যস্ত সময় পার করতে হচ্ছে। এবারের রোজায় ১২টি আইটেমের ফার্নিচার অর্ডার পেয়েছি। কিছু ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে, বাকীগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। ঈদের পরে সেগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিব ইন-শা-আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, শুধুমাত্র এই রমজানেই ৪,৮১,১০০/-টাকার পণ্য বিক্রয় করতে সক্ষম হয়েছি। আমার এই সফলতার জন্য আমি উইর  কাছে পরম কৃতজ্ঞ।

কানিজ ফাতেমা, স্বত্ত্বধিকারী- আলিয়ানাস রং

আলহামদুলিল্লাহ্, খুবই ব্যস্ততম সময় পার করছি বিগত কয়েকদিন। সংসার সামলানো ও বাচ্চাদের দেখাশোনার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগের কাজে সময় দিতে হচ্ছে। এবারের রমজান ও ঈদ মিলিয়ে ক্রেতাদের কাছ থেকে আমার পেজ “আলিয়ানাস রং” এ বেশ ভাল সাড়া পেয়েছি। এবছর মার্চের মাঝামাঝি সময় হতে অদ্যবধি মে পর্যন্ত শুধুমাত্র পেইজের মাধ্যমেই প্রায় ১,৩০,০০০ টাকার পন্য বিক্রি করেছি। যেহেতু আমি থ্রি-পিস ও বেবীড্রেস নিয়ে কাজ করছি, তাই আমার পণ্যের বিক্রয়টা মার্চ থেকেই শুরু হয়েছে। পণ্যের সেলাইয়ের কাজ থাকায় সময়মত সম্পন্ন হবার জন্য ক্রেতারা আগে থেকেই কেনাকাটায় আগ্রহী হয়েছিলেন।

সম্প্রতি লকডাউনের কারনে যেসব ক্রেতারা সেলাইয়ের ঝামেলার জন্য ড্রেস নিতে অনিচ্ছুক প্রকাশ করেছিলেন, তাদেরকে আমি পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি টেইলারিং সুবিধাও দিয়েছি। এবার প্রচুর বেবীড্রেস এর অর্ডার পেয়েছি। যেহেতু আমি কাস্টমাইজ বেবীড্রেস নিয়ে কাজ করি, তাই ক্রেতারা আমার কাছে ইউনিক পণ্য পায়। চাহিদা অনুযায়ী বেবীড্রেসগুলো বানিয়ে দেয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তবে আমি চেষ্টা করছি সময়মত সকলের কাছে পণ্য পৌঁছে দেয়ার। ড্রেস পেয়ে যখন তাদের খুশি হওয়া দেখতে পাই, তখনি মনে হয় আমার কষ্ট করা সার্থক। এবারের ঈদে দেশের বাইরে থেকেও বেবীড্রেসের অর্ডার পেয়েছি এবং সময়মত ডেলিভারিও সম্পন্ন করেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা সব কিছুর জন্য।

রুমা আক্তার,  স্বত্ত্বাধিকারী- রুমাইসা কালেকশন

আলহামদুলিল্লাহ, এবারের ঈদে আমার অনলাইন পেইজে পণ্য বিক্রিতে বেশ সাড়া পেয়েছি। ক্রেতারা খুব আগ্রহ এবং ভরসা করে প্রোডাক্ট অর্ডার করেছেন। নিজের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য আনন্দ সহকারে কেনাকাটা করেছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রয় করেছি। কিছু কাস্টমাইজ অর্ডার কনফার্ম হয়ে আছে, সেগুলো ঈদের পর ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিবো ইন-শা-আল্লাহ।

এবারের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে, ক্রেতাগন খুব সাপোর্ট করেছিলেন । নিজেদের পছন্দ মত পণ্যের কালার, ডিজাইন ও সাইজ পেয়ে তাদের ফিডব্যাক ছিল খুবই সন্তোষজনক। যদিও বহু ক্রেতাকে তাদের পছন্দের সাইজ মত পণ্য দিতে পারিনি, তবুও তারা ফিরে যায়নি। আমার উপর ভরসা করে কাস্টমাইজ অর্ডার করে দিয়েছেন।

সব মিলে ভীষণ ব্যস্ততম সময় কাটছে। সংসার এবং বাচ্চা সামলেও সারারাত জেগে কাজ করেছি।  শত ব্যস্ততার মাঝে আমার তৃপ্তির এবং ভালো লাগার জায়গা হচ্ছে নিজের পণ্যকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারা। খুব টেনশনে ছিলাম সময় মত কাস্টমার প্রোডাক্ট হাতে পায় কিনা, তবে আল্লাহ্‌র রহমতে প্রতিটা কাস্টমারকেই ঠিক সময়ে পণ্য ডেলিভারি দিতে সক্ষম হয়েছি।