উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

ই-কমার্স ব্যবসা ও পড়াশোনায় ডিএসবির রিডিং সিলেবাস

ডিএসবি (ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ), এটি শুধু একটি ফেসবুক গ্রুপের মধ্যেই সীমাসীমাবদ্ধ নয়। ডিএসবি এখন লাখো উদ্যোক্তা ও ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে পড়াশোনার গুরুত্বপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম । ‘ডিজিটাল স্কিল’স’ নামেই যেন অনেক ভয়। না জানি এ কিসের গ্রুপ ও কতটা কঠিন এর বিষয়বস্তু ? 

কিন্তু বাস্তবতা বলে অন্য কথা। ব্যবসা, আইটি ও পড়াশোনার যে কোন বিষয়ে বাংলা ভাষায় খুব সহজ ও সাবলীলভাবে আলোচনা করা হয় গ্রুপটিতে। ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সাবেক প্রেসিডেন্ট   রাজীব আহমেদ যিনি কিনা, শুধুমাত্র পড়াশোনার জন্যই তৈরি করেছেন এটি। তার অনবদ্য এক সৃষ্টি এই ডিএসবি গ্রুপ। পড়ালেখা কিংবা অনুশীলন প্রতিটা ধাপই এখানে  গোছানো এবং পরিপাটি। পড়াশোনার কঠিন ব্যপারগুলি সহজভাবে আয়ত্ত্ব করার মাধ্যমই হলো ডিএসবি। ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষ এবং ই-কমার্স উদ্যোক্তারা জানার মাধ্যমে জীবনে ভালো কিছু করতেই গ্রুপটিতে একটিভ থাকেন ।   

ডিএসবিতে নেই কোন বয়সের বাধ্যবাধকতা। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে অবসর প্রাপ্ত চাকরিজীবী, গৃহিণী ও উদ্যোক্তারা শিখতে পারছে যে যার প্রয়োজন অনুযায়ী। ফেসবুককে শুধুমাত্র বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে না নিয়ে বরঞ্চ এটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করছে গ্রুপের অনেক সদস্যরা। পাঁচ লাখের অধিক সদস্যের এই গ্রুপটি যেন পড়ুয়াদের কাছে হয়ে ওঠেছে অমূল্য সম্পদ। পড়া ও জানার মাধ্যমে  সময়ের সঠিক ব্যবহার করার অন্যতম এক মাধ্যম ডিএসবি।

‘জীবন তো পেরিয়ে এসেছি,সোনালী সময় এখন আর নেই,ইশ যদি আরেকটু পড়ার সুযোগ পেতাম, তাহলে নিজের জন্য অনেক কিছুই করে দেখাতে পারতাম’এমন চিন্তা নিয়ে যারা হতাশায় নিমজ্জিত থাকেন, তাদের অনেকের জীবনে সেইসব চিন্তা ভাবনার অবসান এনেছে ডিএসবি। এখানে সংসার, বাইরে বেরিয়ে ক্লাস করতে না পারা ও বাচ্চা নিয়ে পড়াশোনা না করতে পারা কোন বাঁধা নয়। চেষ্টা আর মনোবল থাকলে এখানে সব সম্ভব। কোন নির্দিষ্ট সময় নয় বরঞ্চ সুবিধামত সময়ে নিজের দক্ষতার পরিধিকে বাড়ানো যায় গ্রুপটিতে । আর এভাবেই ডিএসবি থেকে বিভিন্ন টপিকে  লেখাপড়ার মাধ্যমে অনেকের জীবনে পড়াশোনার মূল ভিত্তি গঠন হচ্ছে।

ডিএসবি পড়াশনার জন্য এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যা সকল দলাদলির ঊর্ধ্বে। যেখানে কোন অনিয়ম, বিতর্কিত বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্ক  কিংবা পক্ষে বিপক্ষের যুক্তির কোন সুযোগ নেই। এখানে অভিভাবকের ভূমিকায় রয়েছেন লাখো মানুষের শ্রদ্ধেয় মুখ  রাজিব আহমেদ স্যার। সুশৃঙ্খল একটা পরিবেশের জ্ঞান অর্জনের জলন্ত উদাহরণ ডিএসবি গ্রুপ।

একটা ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা বাড়ানো ও জীবনে পরিবর্তন আনা যায়? কি করে সম্ভব হচ্ছে এসব? হ্যাঁ সবই সম্ভব হচ্ছে। এসব শুধু বলার কথা নয়, যা এখন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মনের কথা। ছোট্ট করে কিছু অনুশীলনের কথা উল্লেখ করি-

☞১০ মিনিট রাইটিং প্রাকটিস পোষ্ট:

২ মিনিটে একটি পোষ্ট পড়ে ৮ মিনিট সময় নিয়ে লম্বা একটা কমেন্ট,এই সামান্য কাজটায়  জীবনে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে। একের ভেতর যে কত কিছু এই অনুশীলনই তার প্রমান। জীবনে নিয়মিত না থাকার কারণে ঝরে পরে বেশিরভাগ মানুষ। আর ১০ মিনিটের এই ক্ষুদ্র কাজটিই অনেকের জীবনে নিয়মিত কোন কাজে লেগে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়। অনেক সময় আমাদের জীবনের লক্ষ্য ঠিক থাকে না,আমাদের ভালো লাগে কোন কাজে সেটাই আমরা বুঝতে পারিনা। নিজের জীবনের লক্ষ্য  স্থির এবং কাজের দক্ষতা বৃদ্ধিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ১০ মিনিটের এই অনুশীলন । 

ই-কমার্স ব্যবসার উদ্যোক্তারাই এই প্ল্যাটফর্মে সময় দিয়ে অর্জন করছে ব্যাবসায়ীক দক্ষতা। তার মধ্যে অন্যতম হল কন্টেন্ট লিখতে পারা। অনলাইন ব্যবসায় কন্টেন্ট লিখতে পারার গুরুত্ত্ব কতটা যা একজন উদ্যোক্তায় জানেন। আর এর অপারগতা ব্যবসার শুরুতেই আমাদের কয়েকধাপ পিছিয়ে দেয়। অথচ ১০ মিনিটের এই অনুশীলন আমাদের লেখার হাত কতটা উন্নত করতে পারে তা যার করছেন,তারাই অনুধাবণ করতে পারেন। আমরা অনেকেই ই-কমার্সে ব্যবসা করতে চাই কিন্তু নিজের পণ্য নিয়ে কন্টেন্ট লিখতে পারিনা। নিজের উদ্যোগের পণ্যকে ক্রেতার সামনে  সুন্দরভাবে তুলে ধরতে ই-কমার্সে কন্টেন্ট লেখার বিকল্প নেই।

☞রিডিং সিলেবাস

লিখতে গেলে পড়তে হবে। আর কি পড়ব এজন্য দরকার সিলেবাস।  আমরা স্কুল কলেজে একটা সিলেবাসকে অনুসরণ করেই পড়াশোনা করেছি। ডিএসবিতেও রয়েছে কি পড়বেন তার সিলেবাস। রাজিব স্যারের সেরা একটা কাজ হলো রিডিং সিলেবাস। যা দিয়েছেন ইংরেজি শেখার এক নতুন মাত্রা। এর মধ্যে রয়েছে ১ম থেকে ১০ শ্রেনী, মাধ্যমিক ও অনার্স পর্যন্ত ইংরেজির মূল বই এবং ইংরেজি পত্রিকাসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির ইংরেজি বই ইত্যাদি। যে কেউ যদি এই রিডিং সিলেবাস সম্পূর্ণ করেন, তাহলে অনেকাংশেই ইংরেজিতে তার ভীতি ও বিরক্তি কেটে যায়। আর যাই হোক ইংরেজি পড়তে পারবোনা, এই চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা যায়। এতে করে  ইংরেজি রিডিং স্কিল ও পড়ার গতি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বাড়ে ইংরেজি পড়ে বুঝতে পারার দক্ষতা । ইংরেজি পরিণত হয় মজার একটি বিষয়ে। 

☞প্রেজেন্টেশন পোস্ট

প্রেজেন্টেশন বা উপস্থাপনা এই শব্দটির সঙ্গে সকল পেশার মানুষ পরিচিত। পড়াশোনা, চাকরী কিংবা ব্যবসা সব জায়গায় নিজেকে বা নিজের কাজকে তুলে ধরতে এই প্রেজেন্টেশন ব্যাপারটা লাগবেই। একজন উদ্যোক্তার জন্য এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ । অনেক ভাবেই নিজেকে বা নিজের কাজকে প্রেজেন্ট করা যায়। হোক সেটা বলার মাধ্যমে বা লিখিত । ডিএসবিতে ১০০ টিরও বেশি টপিক আছে, যা পড়ে বুঝে নিজের ভাষায় লেখার অভ্যাস করলে সহজেই যেকোন বিষয়ে যানা যায়।এরফলে যে কোন বিষয় গুছিয়ে লেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। একটা বিষয়ে সার্চ করে পড়ে আবার তা লেখার সুন্দর অভ্যাস হয়ে যায়।

উপরউক্ত বিষয় ছাড়াও নানাভাবে ডিএসবিতে অনুশীলন করা যায়। ই-কমার্সের  খুঁটিনাটি সকল বিষয়ের তথ্য নিয়ে অনেক কন্টেন্ট রয়েছে। যা একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য অতি দরকারি । ডিজিটাল যে কোন বিষয়ের উপর সহজ বাংলা ভাষায় তথ্যবহুল কন্টেন্ট অন্য কোথাও খুজে পাওয়া মুশকিল । ডিএসবিতে সার্চ দিলেই মেলে এমন সকল সমস্যার সমধান। তা হতে পারে ফেসবুক কিংবা পেজ রিলেটেড, পার্সোনাল ব্রান্ডিং, মার্কেটিংয়ের বিষয়বস্তু এবং ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ে অসাধারন সব ইনফরমেশন।  

পড়ালেখার পাশাপাশি নিজের ভেতর থেকে পরিবর্তন আনতে ও ডিএসবি গ্রুপ সেরা। পড়াশোনাকে ভালোবেসে অনুশীলন করতে ও লিখতে লিখতে জীবনের লক্ষ্যের এমন পরিবর্তন হয়ে যায় যে, হতাশা নামক শব্দটাই আর থাকে না।  সারাদিন ফেসবুকে ফানি ভিডিও দেখা  ছেলেমেয়ে গুলিও আজ ডিএসবিতে এসে জীবনকে নিয়ে পজিটিভ কিছু ভাবতে শুরু করেছে। আর এই সংখ্যা ডিএসবিতে অসংখ্য। ফেসবুকে আবার কিসের পড়াশুনা?এই ধারণাটাই পাল্টে দিয়েছে ডিএসবি। দুজন মানুষের সামনে দারিয়ে কথা বলতে ভয় পাওয়া মেয়েটাও ডিএসবিতে এসে পাবলিক স্পীকিংয়ে  দক্ষ হয়ে যায়। আবার সারাদিন সংসারের কাজে হাপিয়ে উঠা গৃহিণীও এখানে মন খুলে নিঃশ্বাস নিতে পারে এবং নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সময় দিতে পারে। নিজের পছন্দের কাজে ডেডিকেশন দিয়ে সফল হওয়ার গল্পও রয়েছে অনেকের। সংসারে ধামাচাপা পরা নারীও আজ এখানে অনুশীলন করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছে। বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়ে হয়ে ওঠছে স্বাবলম্বী। একঘেয়েমি জীবনে এসেছে নতুন মোড়।

রাত দিন সচল ৫ লাখেরও অধিক সদস্যের এই গ্রুপটি । সচল  এক ঝাঁক এডমিন মডারেটর প্যানেল। যারা রাত দিন পোষ্ট এপ্রুভ করেন এবং  নিয়মের ব্যতিক্রম হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণ করেন। চলছে রাত দিন পড়াশুনা। সবার পোষ্ট পড়লে বোঝা যায় কত দক্ষ দক্ষ ভাইয়া আপুরা এখানে নিজেদের লেখা দিয়ে, তাদের জায়গা করে নিয়েছেন অনেকের মনে। হয়ে যাচ্ছেন পার্সোনাল ব্রান্ডিংয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ। সম্পুর্ণ বিনা পয়সায় অনুশীলনের সেরা একটা মাধ্যম ফেসবুকের এই গ্রুপটি। শুধুমাত্র সময়কে ইনভেস্ট করেই আনন্দ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলছেন অনেকেই। সময়কে নিজের ভালোবাসার কাজে ইনভেস্ট করলে তবেই তো আসে সফলতা। যার দেখা মেলে ডিএসবির প্রাঙ্গণে।

পরিশেষে নিজের কথা বলে শেষ করতে চাই, আমার মনে কোন সংশয় নেই।  পরপর দুইটা বাচ্চার মা হয়ে ভেবেছিলাম আর উঠে দাড়ানো হবেনা।  আমি আজ মুক্ত বিহঙ্গের মত লিখতে পারি। একটা টপিক দিলে আগে যেখানে ১০ টা মানুষের সামনে কথা বলতে গলা কাপতো, আজ হাজারটা মানুষের সামনেও কথা বলতে পারবো ইন শা আল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ্‌  এতটা আত্নবিশ্বাস পেয়েছি ডিএসবি থেকে। আমার সব অর্জন  জুড়েই রয়েছে ডিএসবি এবং রাজীব আহমেদ স্যারের অবদান। নিয়মিত লেগে থেকে নিজের কাজে ডেডিকেটেড হওয়া সবই এখানে এসেই যোগ হয়েছে । ভালোবেসে সময় দিলে কাউকেই ফিরিয়ে দেয়না ডিএসবি। এই প্ল্যাটফর্মের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।

লেখকঃ স্বত্ত্বাধিকারী, ইপ্পি শপিং ।