উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘ই-কমার্স’ ক্লাবের প্রয়োজনীয়তা

আলোচনা বিষয়বস্তু যে ‘ই-কমার্স’ তা লেখার হেডলাইনের ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তবে তার আগে আমাদের জানতে হবে ‘ই-কমার্স’ কি ও ক্লাব বলতে আমরা কি বুঝে থাকি? ই-কমার্স বলতে আমরা বুঝে থাকি যে ইলেকট্রনিক কমার্স অর্থাৎ এখানে সব ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংযোগ থাকবে বা ব্যবহার থাকবে। শুধু মাত্র পণ্য কেনাবেচাই ই-কমার্সের ক্ষেত্র নয়। এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজের উৎস।  

ক্লাবের কথা যদি বলি, আসলে ‘ই-কমার্স ক্লাব’ বলতে আমরা অনেক কিছুই বুঝতে পারি। ক্লাব বলতে সাধারণত কোন সংগঠনকে বোঝায় যা সরকারি, বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন হতে পারে। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ক্লাব গঠন হয়ে থাকে মূলত এসব ক্লাব তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ পরিচিত। যেমনঃ রিডিং ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব, বাণিজ্য ক্লাব, মানবিক ক্লাব, ডিবেটিং ক্লাব, কম্পিউটার ক্লাব, ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব ইত্যাদি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যে সমস্ত ক্লাব রয়েছে, তা থেকে কোন না কোনভাবে ক্যারিয়ার গঠনে অনেক শিক্ষনীয় দক্ষতা অর্জন করা যায়।

মূলকথা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এত ক্লাব থাকতে ‘ই-কমার্স ক্লাব’ কেন দরকার এবং এখানে কি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে? প্রশ্নগুলির উত্তর জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে ই-কমার্সের বিস্তৃতি নিয়ে। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে এখন পুরো পৃথিবী আমাদের হাতের মুঠোয়। এর মাধ্যমে আমরা পণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের সেবা নিমিষেই হাতের নাগালে পাচ্ছি। অর্থাৎ আমাদের যে সমস্ত বস্তু বা পণ্য দরকার অর্থাৎ আমরা যা গতানুগতিক উপায়ে বাজারে গিয়ে পাচ্ছি, সেই সেবাগুলিই এখন আমরা ই-কমার্সের মাধ্যমে পাচ্ছি। যেখানে সময়ের সাশ্রয় ও ঝামেলামুক্তভাবে কেনাকাটা করা সম্ভব।

উপরের আলোচনায় বোঝা যায় ই-কমার্স আমাদের প্রয়োজন তবে তার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাব কেনো? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যসব ক্লাবের পাশাপাশি আমরা ই-কমার্স ক্লাব থেকে শিখতে পারবো ক্যারিয়ার গঠনের অনেক কিছুই। আমাদের দেশে ‘ই-কমার্স ক্লাব’ নতুন একটি আলোচনার বিষয়। এ নিয়ে আমাদের অনেকের কাছেই হয়ত স্পষ্ট ধারণা নেই। কেননা আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি ই-কমার্স নিয়ে তেমন কোন কার্যক্রম নেই। অর্থাৎ আমাদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি ই-কমার্স নিয়ে কোন জ্ঞান আমাদের মধ্যে নেই। তাই আমাদের এটি নিয়ে জানা নেই যে এখানে কি হতে পারে?

সকল বিষয়ের উত্তর পেতে হলে আমাদের অনেক কিছুই জানতে হবে। যেমনঃ যখন বিভিন্ন খেলাধুলা বা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান শুরু হয়, তখন যদি ভাবতাম যে এখানে শুধু খেলোয়াড়রাই থাকবে এবং এর সঙ্গে কাজ বা অন্য কিছুর সম্পর্ক থাকতে পারে না। কিন্তু বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এখানে রয়েছে অনেক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। খেলাকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে ক্রীড়া অঙ্গনে।

আবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের কথাই যদি আমরা কল্পনা করি তাহলে দেখা যাবে এখানে শুধুই কেনাবেচাই আসল কাজ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত আছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আবার সেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে কোটি কোটি মানুষের কাজ বা আয়ের উৎস। অর্থাৎ  পুরো বিশ্বই এখন যুক্ত আছে ই-কমার্সে সঙ্গে।

তাই আমরা বলতে পারি যে, ই-কমার্স ক্লাব হলো এমন একটি ক্লাব যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যা আমাদের ব্যক্তিজীবনের ক্যারিয়ার হিসেবে খুবই প্রয়োজন। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা শিখতে পারবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। কারণ, ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত আছে বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার বিষয়। যেহেতু আমাদের দেশে ই-কমার্স এখনো নতুন তাই আমাদের আগে তা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আর জানার জন্য সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হলো আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এজন্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকল ক্লাব ও শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি ই-কমার্স ক্লাব খুবই প্রয়োজন। যেখান থেকে আমরা জানতে পারবো ই-কমার্সসহ এর সঙ্গে যুক্ত যাবতীয়  সবকিছু। কিছু প্রশ্নের মাধ্যমে ক্লাবের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক-

আমাদের জন্য ই-কমার্স ক্লাব কেনো?

এই ক্লাবে যুক্ত হতে পারবে সবাই। কারণ ই-কমার্স এখন আমাদের সঙ্গে ওতপ্রতভাবেই জড়িত। আমরা চাকরির বা যে পেশাতেই নিযুক্ত হই না কেনো সব পেশাই এখন ই-কমার্সের আওতাভুক্ত। তাই যেখানেই ক্যারিয়ার গড়ি না কেনো সেই দিকে আমাদের সম্যক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরী। আর সেই জ্ঞান পাওয়ার জন্য আমাদের ই-কমার্স ক্লাব খুবই সাহায্য করে থাকবে। পড়াশোনা শেষ করেই কিন্তু কোন জায়গায় ভালো কিছু করা যায় না। তাই আমরা যদি বিশ্ববিদ্যালয় চলাকালীন এমন দক্ষতা অর্জন করে থাকি, তাহলে আমাদের তা ক্যারিয়ার গঠনে অত্যন্ত কার্যকরী হবে। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-কমার্স ক্লাব দরকার।

ই-কমার্স ক্লাব শিক্ষার্থীদের জন্য কেনো বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

আসলে এই ক্লাব সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্লাবগুলো যদি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আগে তৈরি হয়ে থাকে, তাহলে তারা আগে সেটিকে কাজে লাগাতে পারবে। কারণ, যখন কোন বস্তু একজন মানুষের বা প্রতিষ্ঠানের খুবই কাছে থাকবে তারাই সেটিকে আগে কাজে লাগাতে পারবে। আমরা পড়াশোনা শেষ করেই আমাদের ক্যারিয়ারে চলে যাই। তা চাকরি বা ব্যবসা বা উদ্যোক্তা যাই করি না কেনো সেখানে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে। আর তার জন্য ই-কমার্স ক্লাব যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে। আমরা একটি জিনিস কখন ব্যবহার করবো যখন সেই জিনিসের সম্বন্ধে আমাদের যথেষ্ট জ্ঞান থাকবে বা ভালো বুঝবো তখনই আমরা সেটিকে ব্যবহার করবো।

ই-কমার্স ক্লাব কিভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে- বেকারত্ব দূরীকরণে ই-কমার্স ক্লাবের ভূমিকা কি?

অন্য দেশের কথা বাদ দিলেও আমরা খুব ভালো করেই একটি শব্দের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত। আর তা হলো বেকারত্ব। এটি এখন আমাদের দেশের জন্য বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে যতগুলো কাজের ক্ষেত্র আছে তার থেকে সেখানে কাজ করার জন্য লোক বেশি রয়েছে। আমাদের দেশে কোটি কোটি লোক বেকার রয়েছে। আর তার জন্যই বাকি লোকজন কর্ম খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা যদি সবসময় চাকরির উপর ভরসা না করে নিজের উপর ভরসা করতে পারি, যেমন- নিজের উদ্যোগে কোন ব্যবসা বা কোন ‍উদ্যোগ নিতে পারি। আর এই উদ্যোগে ই-কমার্স ক্লাব পুরোপুরি ভূমিকা পালন করে থাকবে। আমরা ভাবি যে কোন উদ্যোগ বা ব্যবসা করার জন্য আমাদের সবসময় টাকারই দরকার অর্থাৎ টাকা না হলে এমন ব্যবসা বা উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। এটি একদমই ভুল। কারণ, যখন আমরা ই-কমার্স নিয়ে ভালো বা সম্যক ধারণা নিতে পারছি, তখন আমাদের কাছে তা সহজ হয়ে যাবে। ব্যবসা করতে হলে আমাদের তা নিয়ে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকতে হবে। আর এরকম স্বচ্ছ জ্ঞান আহরণ করা যাবে এরকম ই-কমার্স ক্লাব থেকে।  বেকারত্ব দূর করতে ই-কমার্সকে ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, এখন ঘরে বসেই যেকোন জিনিস বা পণ্য বা সেবা বিক্রি করা যায়। তবে তার জন্য ই-কমার্স এর উপর যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার। তার জন্য ই-কমার্স ক্লাব খুবই প্রয়োজন।

দেশীয় পণ্যের প্রচারে ই-কমার্স ক্লাবের ভূমিকা কি কি ?

কথায় আছে, দরজার ঘাস ঘোড়ায় খায় না। আমাদের দেশে এতো এতো জিনিস থাকতেও আমরা অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি। যেমন- আগে পোশাকের কথা চিন্তা করলেই আগে আমরা চিন্তা করে থাকি ইন্ডিয়ান বা চায়নার পোশাক। এই সব পোশাক কিন্তু আমাদের দেশে রয়েছে। চাইলেই আমরা এগুলো ব্যবহার করতে পারি। তাতে আমাদের দেশের টাকা আমাদের দেশেই রয়ে যাবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো আগের থেকে শক্তিশালী হবে। আর কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। তাই এই প্রচার করার জন্য আমরা ই-কমার্সকে ব্যবহার করতে পারি। ই-কমার্সের মাধ্যমে আমাদের দেশি পণ্যকে দেশ সহ বিশ্ববাজারেও তুলে ধরতে পারি। তার জন্য আমাদের ই-কমার্স নিয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা দরকার হবে। কারণ ই-কমার্স মানেই হলো শিক্ষিত ব্যবসা। এর জন্য প্র্যাক্টিকাল জ্ঞান থাকা দরকার। আর এই জ্ঞান দিতে পারবে আমাদের ই-কমার্স ক্লাব। ক্লাবে আলোচনা হবে সকল দেশি পণ্য নিয়ে এবং সেখানে সকল কিছুর প্রদর্শনী থাকবে।

ই-কমার্স ক্লাব সফল করতে কি কি করা যেতে পারে?

কোন একটি বিষয় শুরু করলেই তার সব কাজ শেষ হয়ে যায় না। কথায় আছে, স্বাধীনতা অর্জন করার চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরো কঠিন। আমরা যদি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ই-কমার্স ক্লাব গড়ে তুলি তা ভালো, তবে তা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।

প্রথমেই আমাদের সবাইকে বোঝাতে হবে কেনো এই ক্লাব? এখানে কি কি করা যেতে পারে? এখান থেকে ভবিষ্যৎে আমাদের জন্য কি কি হতে পারে বা সুফল কি আমাদের জন্য।

পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে নিজেকে সমৃদ্ধশালী করতে হবে। আর এই সমৃদ্ধির ব্যাপারতো আর এমনিতেই হবে না। তার জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। নিজেকে তৈরি করতে হলে তার জন্য চাই জ্ঞান। আর এই জ্ঞান আহরণ করতে ই-কমার্স ক্লাব যথেষ্ট ভূমিকা পালন করবে। নিজেকে সমৃদ্ধ করতে কি কি করার দরকার বা কিভাবে করতে হবে তা সবকিছু নিয়েই এখানে আলোচনা হয়ে থাকবে।

নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটাই পন্থা, তা হলো- নিজের ভালোবাসার কাজটি করা। এই কাজটি করে যেতে হলে দীর্ঘ সময়ের জন্য সেখানে থাকতে হবে আনন্দ। আনন্দের সঙ্গে যেকোন কাজই দীর্ঘ সময়ে করা যায়। আর যখন নিজের কাজটি দীর্ঘসময় নিয়ে করা যায় তখন সেখানে সাফল্য আসে। তাই ই-কমার্স ক্লাবে যা কিছুই করা হোক বা শেখা হোক সেখানে থাকতে হবে আনন্দ। এটি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে যার যে বিষয় ভালো লাগে বা যা ভালো বুঝে এবং যার যেটি প্রয়োজন সেই বিষয় নিয়েই জানতে ও জানাতে পারবে। নিজের মেধাকে বিকশিত করতে পারবে এবং সকল তথ্য ও যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। তাই পরিশেষে বলা যায়, যে নিজের প্রয়োজন ও সবার প্রয়োজন এবং দেশ ও পৃথিবীর স্বার্থে বা কল্যাণে ই-কমার্স ক্লাবের প্রয়োজন আছে।

লেখক: শিক্ষার্থী (পদার্থবিজ্ঞান, বিএসসি ও এমএসসি), সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা।