উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

অনলাইনে দেশীয় শাড়ির ওয়েভ নিয়ে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপার অনুভূতির গল্প

দেশীয় শাড়ি মানেই দেশ ও দেশীয় পণ্যের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। নিজের দেশের সূতায় বুনন করা আবেগি পোশাক শাড়ি। দাওয়াতে কিংবা বন্ধুদের আড্ডাতে অনেকেই কুর্তা-লেগিংস বা জিনস ও টি-শার্টের মতো পোশাকে স্বাচ্ছন্দ বোধ করলেও শাড়িতে নারীর কদর বা সৌন্দর্যের জুড়ি মেলা ভার।

শাড়ি পরা বলতে অনকে সময় পয়লা বৈশাখে বা কোনো বিয়ের আয়োজনকেই বুঝি। তবে এখন এই প্রচলনটা ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটছে। ক্লাসের প্রেজেন্টেশনে কিংবা অন্যান্য আয়োজনে কিশোরী বা তরুণী নির্বিশেষে পরছেন শাড়ি। কোনো উপলক্ষ ছাড়াই দেশি শাড়ির নিজেস্ব ধাঁচের বিভিন্ন ধরনের শাড়ির সাজে এখন দেখা যাচ্ছে আধুনিকতার ছোঁয়া। 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ই-কমার্স ব্যবসার ঊর্ধ্বগতিতে অনেকেই ফেসবুক পেজ বা গ্রুপ নির্ভর ব্যবসায় আগ্রহী হয়ে উঠছে। দেশের প্রায় পাঁচ কোটির মতো মানুষ জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকের সঙ্গে জড়িত থাকায় অনলাইন ব্যবসা ও কেনাকাটা সহজ হয়েছে। 

এরই প্রেক্ষাপটে ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)সাবেক সভাপতি রাজিব আহমেদ গত ২৭ নভেম্বর (শনিবার) ফেসবুক লাইভে ১ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহ জুড়ে অনলাইনে দেশি শাড়ির ওয়েভ এর ঘোষণা দেন।  এতে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপের এডমিন-সহ অংশগ্রহণ করেন বিশেষ ব্যক্তিরা।

দেশীয় শাড়ির এমন ওয়েভে যুক্ত হন দেশের ৩ বার জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। নিজের ফেসবুকে হেশট্যাগে দেশীয় শাড়ি ওয়েভ লিখে আবেগঘন পোস্ট লিখার মাধ্যমে সাপোর্ট করেন উদ্যোক্তাদের। পরবর্তীতে দেশীয় শাড়ির এমন ওয়েভ নিয়ে যোগাযোগের চেস্টা করলে তিনি বাঙ্গালির ঐতিহ্য শাড়ি নিয়ে অনেক কথা বলেন। 

বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী, যদিও তিনি নিজেকে কণ্ঠশ্রমিক বলতেই পছন্দ করেন, কনকচাঁপা  বলেন, ‘‘সত্যিকার অর্থে শাড়ির প্রেমে পড়ি মায়ের শাড়ি পরা দেখে। যা কৈশোরেই অন্তরে গেঁথে গিয়েছে। বাইরে বেরুনোর সময় মা অবশ্যই পরিপাটি হয়ে বেরুতেন। কিন্তু রোজকার সাংসারিক  রুটিনে দুপুরের রান্না শেষে অতিশয় রূপবান মা আমার যখন গোসল শেষে মাজা ছাপানো চুল গামছায় ঝাড়ার পরে তিব্বত স্নো মাখতেন, তখন কল্পনা প্রবন আমি ভাবতাম, এই মানুষটি মা হলেও আসলে আকাশ থেকে নেমে আসা পরি। টকটকে ফর্সা মা আমার যখন গোলাপি, কমলা, গম রংয়ের পাবনা বিটি শাড়ির সুতাপাড় বা ডুরে শাড়ি এক প্যাচ করে পড়ে সামনে দাঁড়াতেন,তখন আমার সত্যিই মাকে ফুলপরি মনে হতো।

‘তখন থেকেই আমি দেশীয় সুতি শাড়ির প্রেমে পড়ি। মাড় দিয়ে টানটান করে শুকোতে দেয়া কাপড় পরার পরে মনে হতো ইস্ত্রি করা। যত ফুলছাপা, নানা ডিজাইনের শাড়িই হোক না কেন এই পরিনত বয়সেও আমার ওই রকম পাড় ওয়ালা এক রঙের সুতি শাড়িকেই  মৌলিক শাড়ি বলে মনে হয়। আমি আমার পছন্দের বাইরে গিয়ে যুগের সাথে কখনও তাল মেলাইনা। এসব ক্ষেত্রে আমি একরোখা বটে। এই রকম শাড়ি ভাবনা থেকেই  আমার শাড়ি বাছাই করা।আর দেশের শাড়ি বলে তো আলাদা একটা গর্ব কাজ করেই।” 

শাড়ির পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করতেই গুনি এই শিল্পী বলেন, ‘দেশি সব শাড়িই পছন্দ। টাঙ্গাইলের হালকা সুতার কাজ করা সুতির শাড়িই বেশি পছন্দ তবে উৎসবের বা মঞ্চের আমেজের ব্যাপারে মসলিন পরি।তবে সচ্ছতার জন্য একটু অস্বস্তি বোধ করি বিধায় অনেক গুলো সেফটিপিন লাগাতে হয়। এতে অবশ্য সারাক্ষণ শাড়ি ছিঁড়ে যাওয়ার ভয়ে থাকি। সেক্ষেত্রে সফট কাতান ও পছন্দ। কিন্তু দ্বৈত চরিত্রের শাড়ি আমার অপছন্দ। যেমন কাতানের উপর আবার আঠা দিয়ে জরিচুমকি বসালে শাড়ির বংশপরিচয় বলে কিছুই থাকে না’।

বিশেষ দিনে কাছের মানুষের উপহারের জন্য কি দেশী শাড়ি উপহার দেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই নিজে যা ব্যবহার করিনা তা কখনও অন্যকে দেওয়া উচিত নয়।দেশি শাড়িই উপহার দেই। সেক্ষেত্রে যাকে দেব তার গায়ের রঙ বয়স তার পছন্দ মাথায় রাখি’। 

দেশী শাড়ির ব্যবহারে উপদেশ বানীতে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তারকা খ্যাত কনকচাঁপা আরও বলেন, ‘উপদেশ দিয়ে দেশী শাড়ির ব্যবহার খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব নাও হতে পারে। খুব আমার মা-বোনদের ভেতর থেকে এই অনুভব আসতে হবে। অনেকেই যেমন নির্বিকার ভাবে নির্বিচারে বিজাতীয় ভাষার সিরিয়ালে মত্ত তেমন বিজাতীয় শাড়িতেও অন্ধ! আমি অনেকের ভাবনার অগভীরতা দেখে দুঃখে নিমজ্জিত হই। এক শ্রেণির মা-খালা আছেন জ্বর থেকে সেরে ওঠা উপলক্ষেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যান শাড়ি কিনতে। তাদের জন্য আমার করুণা হয়। আর ফেসবুক তো আছেই। সেই শাড়িগুলোর অবাধ প্রদর্শনী আমাকে ব্যথিত করে। কিন্তু অত ব্যথিত না হয়ে আস্তে করে আমি আনফ্রেন্ড করে দেই। এ ধরনের কথা শুনতে খুব ভালো না লাগলেও আসলেই আমি এটা করি।কারণ আমার দেশ আমার মা আমার নিজস্ব সবকিছুর জন্য আমি খুব স্বার্থপর।’   আমি আমার দেশের শাড়ি,আমার দেশের মানুষ,আমার  বাংলা ভাষা, আমাদের সংস্কৃতি সবকিছুকে এতো ভালোবাসি, যেমন ভালোবাসি আমার মাকে এবং আমি কখনো কথার কথা বলিনা। যা বলি মন থেকেই বলি। আমাদের চাওয়া মতো একদিন বিদেশি শাড়ির আগ্রাসন একদম বন্ধ না হলেও কমে আসবে ইন শা আল্লাহ। মা বোন খালামনি আর কন্যারা নিজ আদর্শে জেগে ওঠো।দেশকে ভালোবাসা দেওয়ার এটাই সময়’। 

এছাড়াও দেশি শাড়ির ওয়েভ নিয়ে রাজিব আহমেদ জানান,ফেইসবুকে ২২৬ টি গ্রুপ দেশি শাড়ির ওয়েভে যোগ দিয়েছে। তাই এটি মোটামুটি কয়েক লাখ মানুষের নজর কাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। 

লেখকঃ  স্বত্বাধিকারী,জলরঙ।