উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

বসন্ত উৎসবে দেশীয় পোশাকে সাজ ও এর প্রসার

এসেছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তকে ঘিরে নিজেকে সাজিয়ে তোলার ব্যতিব্যস্ততা চোখে পড়ে সব দিক থেকেই। প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে উৎসব আমেজে মুখরিত হয় বাঙালির সকল ধর্মের মানুষ। বসন্তের কথা চিন্তা করতেই মাথায় চলে আসে চিরাচরিত সেই মুগ্ধ করা সাজ -হলুদ বা হলুদ সবুজ অথবা হলদে রংয়ের ছোঁয়া লাগানো শাড়ি, সাথে মুঠো ভর্তি চুড়ি, মাথায় ফুল। 

প্রকৃতি ও মানুষের মাধ্যমে হলুদ, সবুজসহ নানা বর্ণীল রংয়ে সুসজ্জিত হয় ধরা। বসন্তকে বরণ করে নিতে তরুণ-বৃদ্ধ,শিশু সবাই নানা রং এবং ঢংয়ের পোশাকে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন। তবে হলুদ রংয়ের প্রাধান্য থাকে সব চেয়ে বেশি। পোশাকের উদ্যোক্তাদেরও তখন সকল ব্যস্ততা ছাপিয়ে যায় কিভাবে বসন্ত বরণে নতুন কিছু করা যায় ক্রেতা বা শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য। এমনই সব তথ্য নিয়ে রাইজিংবিডিতে মূল্যবান কথা বলেছেন ই-কমার্স উদ্যোক্তারা ।   

কাকলী তালুকদার (স্বত্বাধিকারী, কাকলী'স এট্যায়ার)

বসন্ত উপলক্ষে দেশীয় শাড়ি নিয়ে মেলার আয়োজন। পহেলা ফাল্গুন বসন্তের প্রথম দিন এই সময় সবাই প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য্যকে বরণ করতে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। আর এসব অনুষ্ঠানে পোশাক হিসেবে নারীদের গাঁয়ে শোভা পায় বিভিন্ন ধরনের রঙিন পোশাক। বসন্ত বরণের এই আয়োজনকে ঘিরে দেশীয় পোশাক নিয়ে মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে দেশীয় বিভিন্ন পোশাক এই মেলায় তুলে ধরতে পারে সবার সামনে। দেশীয় পোশাকের প্রদর্শনী উপলক্ষে বসন্ত বরণের দিনেও করা যেতে পারে। অনেকেই দেখছি ফাল্গুনের পোশাক কেমন হবে তা নিয়ে কাজ করছে যা অবশ্যই দেশীয় পোশাকের প্রচারের জন্য খুব ভালো।

সালমা নেহা (স্বত্বাধিকারী, টেস্টবিডি)  

আমি একজন দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা। দেশীয় কাপড়ে সালোয়ার কামিজ, শাড়ি এবং পাশাপাশি রাজশাহী সিল্ক নিয়েও অনলাইনে ব্যবসা করছি। এবারের বসন্তে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছি সালোয়ার কামিজে। একটা সময় বিদেশি পোশাকের দৌরাত্ম্য থাকলেও এখন দেশীয় পণ্যের জয়জয়কার সর্বত্র জুড়ে। এটি আসলে সম্ভব হয়েছে শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের দেশীয় পণ্যকে নিয়ে গত দু বছরের বেশি সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে।

অন্যান্য সকল উৎসব পার্বণের ন্যায় আমাদের দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তাদেরও এবার বসন্তে ব্যাপক সাড়া দেখেছি। বসন্তের পোশাক নিয়ে বেশ অনেক দিন আগে থেকেই সবাই প্রচারের কাজ শুরু করার ফলে গতবারের তুলনায় এবার দেশীয় বসন্তের পোশাকের চাহিদা অনেক বেড়েছে । কারণ, আমরা অনেকেই চিন্তা করি বসন্তের কালেকশন নিয়ে জানুয়ারিতে প্রস্তুতি নিবো। তখন আসলে প্রস্ততি শুরুর প্রচারের সময় বেশি পাওয়া যায় না। শীতের শালের মতো বসন্তের পোশাক নিয়েও এবার অনেক আগে থেকেই প্রচারের ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ক্রেতা রেসপন্স ছিলো অনেক বেশি। আসলে সকল উৎসব নিয়েই আমাদের উচিত সারা বছর প্রচারণা চালানো। এতে সারা বছর বিক্রি কম হলেও ব্র্যান্ডিং অনেক মজবুত হবে। সারা বছর কাজ করার ফলে যে পরিচিতি তৈরী হবে সেটা অনেক বেশি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করবে যে কোন উৎসবে।

  উম্মে সাহেরা এনিকা (স্বতাধিকারী,তেজস্বী)  

শুরুতেই সকলকে বসন্তের শুভেচ্ছা৷ কিশোরী বয়স থেকেই শাড়ির প্রতি এক ধরনের টান অনুভব করি৷ আম্মা ছিলেন দেশীয় শাড়ি প্রেমি, এর প্রধান কারন আমাদের দেশীয় শাড়ি এবং পোশাক আরামদায়ক।যেহেতু আম্মার শাড়ি পরেই বড় হওয়া তাই আমারও দেশীয় শাড়ি ভালো লাগে।

বসন্ত উৎসব উদযাপন আমাদের সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত৷ বসন্তে আমরা প্রিয়জনের সাথে সারাদিন বাইরে ঘোরাঘুরি করতেই পছন্দ করি৷ তাই অবশ্যই আরামদায়ক কিছু বেছে নেই৷ এ ক্ষেত্রে জামদানী, খেশ, বাটিক, ব্লক, হাফসিল্কের মতো দেশীয় শাড়িগুলোকে প্রাধান্য দিতে পারি৷ সাথে সাজ হতে পারে কপালে টিপ, হাত ভর্তি হরেকরকম কাঁচের চুড়ি। পাট, কাঠ, মাটির মত উপাদান থেকে তৈরী দেশীয় গয়না। আমাদের দেশীয় শাড়ি এমনিতেই ক্লাসি যেকোন সাজেই মানিয়ে যায়। তবে প্রচার বাড়াতে অনলাইনে বসন্ত উৎসবে দেশীয় পোশাকের প্রচারের ক্ষেত্রে কনটেন্টের গুরুত্ব দিতে হবে৷ সাজ কেমন হতে পারে, গয়না, ব্লাউজসহ আনুষাঙ্গিক পণ্য নিয়ে লেখালেখি করলে বিশেষ দিনগুলো দেশীয় পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা সহজ হবে। ধন্যবাদ রাইজিং বিডিকে।

  নিগার ফাতেমা (স্বত্বাধিকারী, আরিয়াস কালেকশন)

  বাঙালিয়ানার বহিঃপ্রকাশ পায় তার পোশাকে। নারী- পুরুষের  পছন্দের  দেশীয় পোশাক  শাড়ি ও পাঞ্জাবি। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের  শাড়ি  তৈরি  হয়। পহেলা  ফাল্গুনে হলুদ, কমলা, লাল বা বিভিন্ন রঙের শাড়ি পরিধান করে নারীরা প্রকৃতির নতুন আমেজ উপভোগ করে। কপালে টিপ, হাতে চুড়ি, খোঁপায়  ফুল ও  নানা বাঙালি সাজে আমাদের মনে জাগায় অপার আনন্দ। পুরুষরাও  নারীদের পাশাপাশি হলুদ বা বিভিন্ন রঙের পাঞ্জাবি পড়ে উদযাপন করে। কেউ কেউ আবার মাথায় বা গলায় ঝোলায় চেকের গামছা। বসন্ত উৎসব তো এমনই হওয়া উচিত, সারাবছরের জীবনযুদ্ধ ভুলে মেতে উঠি আমরা ফাগুন উৎসবে।

বাঙালি বিভিন্ন উৎসবে দেশীয় শাড়ির প্রচার আরো বেশি বৃদ্ধি পায়। সকল বয়সের নারী পুরুষ দেশীয় পোশাকে সুন্দর দেখায় এবং বন্ধু বান্ধবী মহলে নিজেদের পোশাকের চর্চায় দেশীয় পণ্যের প্রচার বৃদ্ধি  পায়। সুন্দর সুন্দর ছবি এবং মুহূর্তগুলো ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন সামাজিক আপলোড করা হলে দেশীয় পোশাক ও গল্পের বৃদ্ধি পাবে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবমুখর দিনগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের দেশীয় পোশাক পড়তে আগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে এবং দেশীয় পোশাক নিয়ে বিভিন্ন তথ্য আলোচনার সভা আয়োজন করা যেতে পারে। বাঙলার উৎসব,বাঙলার গান,বাংলার পোশাক, সংস্কৃতি আদিযুগ  থেকে সমৃদ্ধ। নতুন যুগে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে হবে বিশ্বের মাঝে।

রাকিমুন বিনতে মারুফ জয়া (স্বত্বাধিকারী, পরিধান শৈলী)

আমাদের দেশে পহেলা ফাল্গুনের মতো উৎসবগুলোতে দেশি শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবী ইত্যাদির ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এসব পণ্যের যথেষ্ট প্রচারণার অভাব রয়েছে। যথাযথ প্রচারণা নিশ্চিত হলে এসব পণ্যের চাহিদা, বিক্রি, উৎপাদন এবং উদ্যোক্তার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পহেলা ফাল্গুনের মতো উৎসবগুলোতে দেশি পোশাকের প্রচার, কন্টেন্ট তৈরি ও প্রচারণা বৃদ্ধিতে আলোচনার মাধ্যমে আইডিয়া তৈরি করতে পারলে এর প্রসার হবে অনেক বেশি।