উদ্যোক্তা/ই-কমার্স

অফলাইনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে সফল মেহেরুন

যেকোনো সূচনার পথে বাধা আসবেই, এটাইতো স্বাভাবিক। তবে প্রচণ্ড ইচ্ছে ও দৃঢ় মনোবল থাকলে কোনো কিছুই  অসম্ভব নয়। নিজের প্রচেষ্টায় নানা কটুক্তি ও সমালোচনাকে সামলে অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মেহেরুন। দেশবাসীর কাছে নামাজের হিজাব ও নানা ধরনের পণ্যের জন্য এক বিশ্বস্ত নাম মেহেরুনের নিডস অ্যান্ড ফ্যান্সি।

এই নারী উদ্যোক্তার পুরো নাম মেহেরুন নেছা, ডাকনাম লিপি। মরহুম মো. আব্দুল্লাহ ঢালী ও মোসা. নূরজাহান বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ লিপি। জন্ম শরীয়তপুরের নড়িয়ায়, ১৯৮০ সালে। বাবা সরকারি প্রকৌশলী হওয়ায় বদলি জনিত কারণে বিভিন্ন জায়গায় থাকার সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে থাকছেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে।

মেহেরুনের অনলাইন ব্যবসার যাত্রাটা মোটেও সহজ ছিল না। নারী হওয়ায় নানা বাধা-বিপত্তি যেন একটু বেশিই আসতো। তবুও এসব সামলে সন্তান-সংসার দেখভাল করার পাশাপাশি পরিচালনা করছেন ব্যবসা। শুধু দেশ নয় দেশের বাইরেও পণ্য সরবরাহ করে থাকেন তিনি।

করোনা ভাইরাসের সময় দেশব্যাপী লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়া সবকিছুর সঙ্গে থেমে যায় মেহেরুনের স্বামীর আয়ের উৎস অ্যাড ফার্মসহ, শোরুম, অফিস সবকিছুই। সে সময় অনলাইন ব্যবসায় জোর দেয় মেহেরুন। ই কমার্স গ্রুপ উইতে যুক্ত হয় ছোটবেলার বান্ধবীর মেয়ের মাধ্যমে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। উই থেকেই শিখেছেন ব্যবসার নানা কৌশল। কিভাবে ছবি তুলতে হয়, ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথা বলতে হয়, মার্কেটিং করতে হয় ইত্যাদি। শুরুতে ফেসবুক, অনলাইন দুনিয়া বুঝতে সহজ না হলেও একে একে সব দিকে দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন তিনি।

ব্যবসা শুরুর ক্ষেত্রে মেহেরুন প্রথম বাধা পান তার স্বামীর কাছে। তার স্বামীর পরিচিতরা তাকে কটাক্ষ করতো 'বউকে দিয়ে অনলাইনে ব্যবসা করাচ্ছো' এসব বলে। শুরুর সেসব ঝামেলা ও নানাজনের নানা কথা পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন নিজেকে।

বাড়ির বড় বউ হওয়ায় শুরু থেকেই সবার জন্য কেনাকাটা করার দায়িত্ব থাকতো তার কাঁধে। একসময় পোশাক কিনতে এভাবেই পটু হয়ে উঠেন তিনি। বাড়িতে পোশাকের কয়েকটি সেট আনতেন এবং আত্মীয়-স্বজন পছন্দসই পোশাকগুলো কিনে নিতেন তার কাছ থেকে। সেই অফলাইনের অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়েছেন অনলাইনে। বুটিকে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় বেশ সুফল পেয়েছেন তিনি।

মেহেরুনের নিডস অ্যান্ড ফ্যান্সি পেজে পাওয়া যায়- ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, হ্যান্ড পেইন্ট বেডসীট, থ্রিপিস, নামাজের হিজাব, কুশিকাটাসহ নানা ধরনের পন্য। এসব পণ্য শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও কিনে নেয় অনেকেই।

অনুভূতি প্রকাশ করে মেহেরুন বলেন, বিজনেস রিলেটেড কোনো শিক্ষা আমার ছিল না। উই থেকে বিজনেস পরিচালনা থেকে শুরু করে ফটোগ্রাফি, পণ্যের মূল্য নির্ধারণ, ক্রেতা হ্যান্ডেল- সব শিক্ষা পেয়েছি বেসিক এবং অ্যাডভান্স মাস্টার ক্লাসের মাধ্যমে। এছাড়াও সফট স্কিলসহ বিভিন্ন ওয়ার্কশপে প্রতিনিয়ত শিখছি। উই থেকে সবসময় সাপোর্ট পাই এগিয়ে যাওয়ার।

তিনি বলেন, একজন নারীর প্রথম প্রায়োরিটি থাকে সন্তান, সংসার। এইদিক থেকে নারী যতটুকু সাপোর্ট পায়, ততটুকুই এগিয়ে যাওয়া সহজ হয়। তাই উদ্যোক্তা জীবন এবং সংসার জীবনে অনেক ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করে চলতে হয়। তাহলে মানসিক শান্তি থাকে, প্রতিবন্ধকতা কম সৃষ্টি হয়। আলহামদুলিল্লাহ আজকে আমি যতটুকু এগিয়েছি সবটাই আল্লাহর রহমতে উই’র উছিলায়। সেই সঙ্গে পরিবারের সহযোগিতা সর্বোপরি আমার চেষ্টায় আমি আজ সাবলম্বী। আমার নিজের নামে সবার কাছে পরিচিত হতে পেরেছি।