মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন, মাগুরা : মনের আনন্দে তিনি কেটে সাফ করে চলেছেন বনের গাছ। হাজার গাছ ইতিমধ্যেই কাটা সারা। তিনি একজন ইউপি সদস্য, আবার স্থানীয়ভাবে সরকার সমর্থিত দলের নেতা- তাই তিনি এখানকার রাজা! তিনি কাটলে কার কী অাছে বলার? নির্বিঘ্নে যখন হাজার গাছ খতম, তখন বোঝাই যায় তার দাপট কতখানি!
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের রায়পুর মোড় থেকে কাশিপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের সহস্রাধিক মূল্যবান গাছ প্রকাশ্যে কেটে নেওয়া এই ইউপি সদস্যের নাম সিরাজুল ইসলাম। এক সপ্তাহ ধরে গাছ কাটা চললেও প্রশাসন নিশ্চুপ বলে স্থানীয়রা জানান। এই গাছের মালিক বন বিভাগ। এর সুফলভোগীর দাবিদার স্থানীয় সামাজিক বনায়ন সমবায় সমিতির সদস্যরা। কিন্তু ইউপি সদস্যের দাবিটা যে তার চেয়ে বড়!
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ইউপি সদস্য সিরাজের নেতৃত্বে শ্রমিকরা গাছ কেটে ভ্যানে তুলছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংবাদকর্মীদের সামনে উত্তেজিত হয়ে কিছু বলবেন না বলে জানান মহম্মদপুর সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের এই ইউপি সদস্য।
দেখা যায়, সড়কের দুই পাশে কেটে নেওয়া গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। রেইনট্রি, মেহগনি, শিশু, নিম, বাবলা ও গামারি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। বসুরধুলজুড়ি বাজারের পাশের সড়কে পাঁচ-ছয়টি মূল্যবান গামারি ও রেইনট্রি গাছ কাটছেন ১০-১২ জন শ্রমিক। ভ্যানযোগে গাছ অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
সময়ের আগেই অপরিপক্ব কাছ জোর করে কেটে ফেলায় সামাজিক বনায়ন সমিতির ১১০ জন সদস্য চরম ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বিষয়টি তারা ইউএনও, পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মহম্মদপুর উপজেলা সদরের রায়পুর মোড় থেকে-কাশিপুর পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে স্থানীয় বসুরধুলজুড়ি সামাজিক বনায়ন সমিতি প্রায় ১০ বছর আগে বিভিন্ন বনজ ও ফলদ গাছের চারা রোপণ করে। বন বিভাগের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী গাছ পরিপক্ব হলে গাছ বিক্রির টাকা সমিতির ১১০ জন সুফলভোগী শতকরা ৬৫ ভাগ ও বন বিভাগ ৩৫ ভাগ হারে ভাগ পাওয়ার শর্ত রয়েছে।
সামাজিক বনায়ন সমিতির সভাপতি বসুরধুলজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা লোকমান মোল্যা বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্টে তিল তিল করে গাছগুলো বড় করেছি। এখন ইউপি সদস্য সিরাজ প্রভাব খাটিয়ে লোকজন নিয়ে গাছগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
গাছ বহনকারী ভ্যানচালক আলী মোর্তজা জানান, সিরাজ মেম্বার গাছগুলো পার্শ্ববর্তী রায়পুর গ্রামর কাঠের ব্যাপারী আসাদ মোল্যার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এক সপ্তাহ ধরে ছোট-বড় প্রায় এক হাজার গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। যার বাজার দর আনুমানিক দেড় লাখ টাকার বেশি।
ব্যাপারী আসাদ মোল্যা জানান, ‘আমার কাছে খড়ি (জ্বালানি কাঠ) বিক্রি করবে এই শর্তে শ্রমিক লাগিয়ে আমি সিরাজ মেম্বারকে গাছ কেটে দিচ্ছি। গাছের গুঁড়ি তিনি (ইউপি সদস্য) বিক্রি করবেন।’
ওই এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পরিপক্ব হওয়ার আগেই কয়েক হাজার গাছ কেটে নিচ্ছেন ইউপি সদস্য ও তার লোকজন।’
মাগুরা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোহদ্দীন হোসেন জানান, ‘সামাজিক বনায়নের গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ইউপি সদস্য সিরাজ অন্যায়ভাবে গাছ কাটছেন।’
মহম্মদপুর থানার ওসি আতিয়া শেখ বলেন, ‘সিরাজ মেম্বারকে আটকের চেষ্টা করছে পুলিশ।’
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুল হাসান বলেন, অভিযুক্ত ইউপি সদস্যকে আটকের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’
রাইজিংবিডি/মাগুরা/২৪ জুন ২০১৫/আনোয়ার শাহীন/টিপু/এএন