পরিবেশ

সুন্দরবনে অভয়ারণ্য বাড়ল

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা : সুন্দরবনের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণের আরও বারোটি কম্পার্টমেন্ট যুক্ত করে নতুন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে অভয়ারণ্য এলাকার আয়তন নতুন করে বাড়ল ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫০ দশমিক ৫৮৪ হেক্টর। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ইসতিয়াক আহমদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে সম্প্রতি এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে ১০টি কম্পার্টমেন্ট নিয়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকার আয়তন ছিল ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর। যা পুরো সুন্দরবনের ২৩ শতাংশ। নতুন ১২টিসহ বর্তমানে ২২টি কম্পার্টমেন্ট নিয়ে মোট আয়তন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ দশমিক ০৮ হেক্টর। যা পুরো সুন্দরবনের ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন সুন্দরবনের নতুন অভয়ারণ্য ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বর্তমানে গেজেট আকারে প্রকাশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। অভয়ারণ্য এলাকায় বাঘসহ অন্যান্য প্রাণির নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিত করতে সব ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে এসব এলাকায় সব ধরণের বনজ সম্পদ আহরণও নিষিদ্ধ করা হবে। তবে তার আগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বনজ সম্পদ আহরণকারী, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী এবং বন সংলগ্ন অধিবাসীদেরকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হবে।’ নতুন অভয়ারণ্যভূক্ত এলাকা : সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ১, ২, ৩, ৮ (অংশ), ৯ ও ৪৫ (অংশ) নম্বর কম্পার্টমেন্ট (দুধমুখী ডলফিন অভয়ারণ্য ব্যতীত ১৭০ দশমিক শূন্য হেক্টর) নতুন অভয়ারণ্যভূক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। যার উত্তরে বগা খাল, মাইটার ভারানী, বড় শিয়ালা খাল, শেলা গাং, হরিণটানা ক্যাম্পের ভাটায় লাটিমারা খালের ওপর থেকে বেতমোর গাং হয়ে দুধমুখী ক্যাম্প, দাবুরী ভারানী খাল হয়ে ভোলা নদীর সংযোগ পর্যন্ত। পূর্বে বলেশ্বর নদী। পশ্চিমে পশুর নদী থেকে নামুর সমুদ্র নদী পর্যন্ত এবং দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর (দুবলার চর ব্যতীত)। এর আগে পূর্ব বিভাগের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর কম্পার্টমেন্ট পুরো এবং ৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টের অংশ নিয়ে অভয়ারণ্য ছিল। যার উত্তরে আরজবানী ও বেকি খাল, বলেশ্বরের সংযোগস্থল পর্যন্ত সুপতি খাল, পূর্বে বলেশ্বর নদী, পশ্চিমে বেতমোর এবং চরাবেতমোর গাং ও দক্ষিণে ডিমেরচরসহ বঙ্গোপসাগর। সুন্দরবন দক্ষিণ বিভাগের ১৮ ও ১৯ নম্বর কম্পার্টমেন্ট নতুন যুক্ত হয়েছে। যার উত্তরে পাটকষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদীর ওপরের দিক দিয়ে পাঠাকাঠা ভারানী পর্যন্ত, পূর্বে মরজাত নদী হয়ে নুমুদ সমুদ্র নদী পর্যন্ত, পশ্চিমে আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও বড় পাঙ্গা নদী থেকে মালঞ্চ নদী পর্যন্ত এবং দক্ষিণে পুটনী দ্বীপসহ বঙ্গোপসাগর। এর আগে দক্ষিণ বিভাগের ৪৩ ও ৪৪ নম্বর কম্পার্টমেন্ট’র পুরো অংশ নিয়ে অভয়ারণ্য ছিল। যার উত্তরে কাগানদী এবং দোবেকী খাল, পূর্বে কাগা-কাংগা এবং মোরজাত নদী, পশ্চিমে মালঞ্চ ও গংগা নদী এবং দক্ষিণে পাটনী দ্বীপসহ বঙ্গোপসাগর।

 

সুন্দরবনের নতুন অভয়ারণ্য ঘোষণা করে জারিকৃত প্রজ্ঞাপন

 

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের ৫১ (এ), ৫১ (বি) ও ৫১ নম্বর কম্পার্টমেন্ট নতুন অভয়ারণ্যে যুক্ত হয়েছে। যার উত্তরে যমুনা নদী বা মাহমুদা নদী হয়ে ফিরিঙ্গি গাং পর্যন্ত, উত্তর-পশ্চিমে কাচিকাটা খাল, পূর্বে আড়পাঙ্গাসিয়া নদী ও বড় পাঙ্গা নদী থেকে মালঞ্চ নদী পর্যন্ত, পশ্চিমে হরিণভাঙ্গা নদী হয়ে রায়মঙ্গল নদী পর্যন্ত এবং দক্ষিণে তালপট্টিসহ বঙ্গোপসাগর। এর আগে পশ্চিম বিভাগের ৫৩, ৫৪, ৫৫ পুরো এবং ৪৯ নম্বর কম্পার্টমেন্ট’র অংশ নিয়ে অভয়ারণ্য ছিল। যার উত্তরে বুড়ির গাং, সিলমারী, যমুনা নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত নোটাবেকি খাল, পূর্বে যমুনা নদী, পশ্চিমে হরিণভাঙ্গা নদী এবং দক্ষিণে তালপট্টিসহ বঙ্গোপসাগর। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় (বন শাখা-২) থেকে ২৯ জুন প্রকাশিত এই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ) আদেশ ১৯৭৩ এবং বাংলাদেশ বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ) (সংশোধন) আইন ১৯৭৪’র ২৩ (১) (২) ধারার ক্ষমতাবলে ১৯৯৬ সালের ৬ এপ্রিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে সুন্দরবনের পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে উক্ত অভয়ারণ্য এলাকা সম্প্রসারণের প্রয়োজন হওয়ায় বন অধিদপ্তরের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বন্যপ্রাণি (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২’র ধারা ১৩’র ক্ষমতাবলে আগের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন অধিকতর সংশোধনক্রমে সরকার সংরক্ষিত এলাকাকে বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সুন্দরবনের বাঘ মনিটরিং সার্ভে প্রকল্পের পরিচালক ও খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধূরী বলেন, ‘আগে সুন্দরবনের ২৩ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য ছিল। নতুন প্রস্তাব বাস্তবায়নের ফলে ৫২ শতাংশ অভয়ারণ্য হিসেবে পরিগনিত হবে। ফলে জীববৈচিত্র রক্ষা হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নতুন অভয়ারণ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বন বিভাগের মূল দায়িত্ব বর্ধিত এলাকার যথাযথ পরিচর্যা করে বন্যপ্রাণির নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্র নিশ্চিত করা।’ রাইজিংবিডি/খুলনা/৩০ জুলাই ২০১৭/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু