জেলা প্রতিবেদকমেহেরপুর, ১৬ এপ্রিল : বাংলাদেশের অতি পরিচিত পাখির মধ্যে ঘুঘু অন্যতম। এই পাখি নিয়ে যেমন রয়েছে প্রবাদ বাক্য, তেমনি রয়েছে গল্প। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আজ এ পাখি হারিয়ে যেতে বসেছে। এ পাখি সংরক্ষণ করা না গেলে আমাদের নতুন প্রজন্ম বর্ণমালা শিখতে শুধু বইয়ের পাতায় পড়বে ঘ-তে ঘুঘু পাখি দিচ্ছে ডাক অথবা ঘুঘু করে ঘু-ঘু। আর শিশুকে সত্যিকারের ঘুঘু পাখি দেখাতে মাঠঘাটে নয়, নিয়ে যেতে হবে চিড়িয়াখানায়।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে পরিবেশও। এখন আর মাঠেঘাটে ঘুঘু পাখি দেখা যায় না। শোনা যায় না ঘুঘু পাখির ডাক। অথচ একসময় বাংলার মাঠেঘাটে ঘুঘু পাখি ছিল ভূরি ভূরি। অবাধ বিচরণ ছিল প্রকৃতিতে। নিষ্ঠুর পাখি শিকারিদের গুলি আর ফাঁদে যখন পরিবেশ থেকে ঘুঘুসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি হারিয়ে যাচ্ছিল, সরকার আইন করে পাখি শিকার নিষিদ্ধ করে। তার পরও কি ঘুঘু প্রাণে রক্ষা পেয়েছে? ঘুঘুর প্রধান খাদ্য ধান, গম ও ডালবীজজাতীয় খাদ্য। আমাদের কৃষকরা সচেতনতার পরিচয় না দিয়ে ফসল উৎপাদনে খেতে মাত্রাতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছেন। এতে প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিষমিশ্রিত খাদ্য খেয়ে ঘুঘুসহ কয়েক প্রজাতির পাখি প্রকৃতি থেকে উজাড় হচ্ছে।মেহেরপুরের পাখিপ্রেমী মিজান জানান, ঘুঘু পাখির জন্য নিরাপদ খাদ্যের যেমন অভাব, তেমনি নিরাপদ বাসস্থানেরও অভাব দেখা দিয়েছে। মাঠের খাদ্যে বিষ! অন্যদিকে চোরা শিকারির কারণে গাছে বসা নিরাপদ নয়; তবে কীভাবে তারা প্রকৃতিতে টিকে থাকবে? তিনি বলেন, ২০১২ সালে মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা বিজিবি ক্যাম্পের অগ্নিনির্বাপক সামগ্রীর ঘরে একজোড়া ঘুঘুকে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটাতে দেখেছি। এরপর আর মেহেরপুরের কোনো স্থানে ঘুঘু চোখে পড়েনি। মেহেরপুরের আরেক পাখিপ্রেমী আবু লায়েচ লাবলু জানান, আগের দিনে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মাঠেঘাটে নানা প্রজাতির প্রচুর ঘুঘু দেখা যেত। ঘুঘুর ডাক শোনা যেত। এখন আর এমনটি দেখা মেলে না। ঘুঘুর ডাক শোনা যায় না। মুজিবনগর কমপ্লেক্সের পাশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা একটি চিড়িয়াখানায় দেখা গেল চার-পাঁচটি ঘুঘু। সংরক্ষণ করা না গেলে এ পাখি চিরতরে হারিয়ে যাবে।
রাইজিংবিডি/মহাসিন আলী/টিপু/আবু মো.