ফাগুনের মলাট

নিজেকে মূল্যায়ন করার জন্য লিখি : আশরাফ জুয়েল

আরিফ সাওন : কেন লিখি- এ প্রশ্নের উত্তর এককথায় দেয়া খুব কঠিন। আমার প্রথম বইয়ের ফ্ল্যাপে একটা কথা লিখেছিলাম; সেটা ছিলো এমন যে, নিজেকে নতুন ভাবে মূল্যায়ন করার জন্য লিখি। এটাই আমার লেখার মুল কারণ। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সমকালীন সাহিত্য ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে নিজের লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া বিষয়ে বলতে গিয়ে এ কথাই বলেন কবি আশরাফ জুয়েল। এই প্রথমবারের মতো অমর একুশে গ্রন্থমেলায় ‘সমকালীন সাহিত্য ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি ডটকম-এর স্টলে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আশরাফ লেখালেখি শুরু করেন ছাত্রাবস্থায়। তবে মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার কারণে দীর্ঘ বিরতি ঘটে। এরপর আবার শুরু করেন লেখালেখি। তিনি বলেন,  ‘লেখা শুরু করতে গিয়ে আমি নিজেকে এক ধরনের আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে যেতে থাকলাম। আমার চিন্তার জায়গাটা কোথায় সঞ্চালন করছি, আমার ফোকাসটা হচ্ছে কোথায়, ঠিক এই জায়গাটা। আমাকে আবিস্কারের একটা বিষয় পেয়ে বসলো। লেখা শুরু করলাম। কার জন্য লিখছি? যেহেতু নিজেকে আবিস্কারের ব্যাপার, সেহেতু নিজের জন্যই লিখছি।’ অতীতের সাহিত্য আড্ডা আর বর্তমান সময়ের আড্ডা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কিন্তু পেছনে তাকানোর ‍সুযোগ নেই। সেটা আপনি সাহিত্যে বলেন, আর অন্য কিছুতে বলেন। বৈশ্বিক যে পরিস্থিতি তাতে কেবল পুরুলিয়ার লেখকই নয়, আমি চেচনিয়ার কবির সাথেও কথা বলতে পারছি। আজকেও আমি এখানে আসার দুই ঘণ্টা আগে জার্মানির একজন কবির সঙ্গে সীমিত আকারে হলেও যোগাযোগ করতে পেরেছি। বিউটি বোর্ডিং বা শাহবাগ কেন্দ্রিক যে আড্ডা ছিলো, আজকে আমার আসতে যে দেরি হলো, আমি বের হয়েছি অনেক আগে। কিন্তু রাস্তা, এই যে সামগ্রিক জটিলতায় আমরা জড়িয়ে যাচ্ছি, তাতে আড্ডাটা ওই ভাবে খুব কঠিন। গ্রন্থমেলায় এ ধরনের আড্ডার ব্যবস্থা করায় তিনি রাইজিংবিডিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এই ধরনের আড্ডা ঘন ঘন করা যেতে পারে। শুধু আমাদের বসয়ী নয়, সব বয়সীদের সম্পৃক্ত করে গঠনমূলক ভাবে এটা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে রাইজিংবিজিকে মাসে একবার এ ধরনের আড্ডা করার প্রস্তাব দিচ্ছি। তাতে গঠনমূলক ভাল কিছু রেবিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।’

 

সমাজকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সাহিত্য ভাবনা কতটুকু  ভূমিকা পালন করছে- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলবো, একটা দুর্নীতির ব্যাপার অনেক বড়ভাবেই চলে এসেছে। গোটা বিশ্বে দুর্নীতি হচ্ছে কিন্তু আমার যে অবজারভেশন আমাদের বাংলাদেশে দুর্নীতি ব্যক্তি পর্যায়ে চলে গেছে। একজন রিকশাওয়ালা চিন্তা করছে আমি ১৫ টাকার জায়গায় ২১ টাকা নিলে ৬ টাকা লাভ। আমি একজন ডাক্তার; আমি চিন্তা করি আমার ভিজিট পাঁচশ টাকায় জায়গায় নয়শ টাকা নিলে আমার লাভ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সাহিত্যের ক্ষেত্রে যুগে যুগেই টার্ন এসেছে। এ ধরনের পরিবর্তন সবসময় সাহিত্যিকদের হাত ধরেই এসেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বরাবরই এটা হয়ে এসেছে। ব্যক্তিপর্যারের দুর্নীতি আমরা যদি কাটিয়ে উঠতে পারি তাহলে সামগ্রিক সমাজে আমাদের যে ভাবমূর্তি তা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো।’ রাইজিংবিডির নির্বাহী সম্পাদক তাপস রায়ের সভাপতিত্বে কবি শিহাব শাহরিয়ারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন এ সময়ের জনপ্রিয় ছয় তরুণ কবি। এর মধ্যে আশরাফ জুয়েল ছাড়া অন্যরা হলেন পিয়াস মজিদ, গিরীশ গৈরিক, জব্বার আল নাঈম, রাসেল রায়হান ও সালেহীন শিপ্রা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাইজিংবিডির সহকারী বার্তা সম্পাদক রাসেল পারভেজ, কবি অহ নওরোজ ও রাইজিংবিডির সহসম্পাদক সাইফ বরকতুল্লাহ। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ