ফাগুনের মলাট

গর্বের দিন একুশে ফেব্রুয়ারি

||অমিতাভ রক্ষিত|| মাতৃগর্ভের অপরিণত প্রাণে, জীবনের কারণবারির নিরঙ্কুশ অন্ধকারের ধীহীন অচৈতন্যে, ভেসে  ছিলাম কোনো এক সময়ে অস্তিত্বের এক দুর্বল হৃৎস্পন্দন সম্বল করে। বহির্জগত থেকে আগত শব্দের রণনে সে তমসার অবসান হলো একদিন; শ্রুতিচেতনার উন্মেষে বর্ণময় হয়ে উঠল পৃথিবী। দৃষ্টিরও আগে আরধ্য এই ইন্দ্রিয়ের প্রজনক আমার মাতৃকণ্ঠের মাতৃভাষা, আমার অনাগত জগতকে ভরিয়ে দিলো ধ্বনিময় অর্থপূর্ণতায়। ক্রমে আমার দ্যুলোক, ভূলোক, ত্রিলোক মাতৃভাষার মাপকাঠিতেই পরিব্যাপ্ত হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। আমার উৎপত্তি, সত্তা ও স্থিতির মৌলিকতম উপাদান সংমিশ্রিত হলো বাংলায়। আমার আকাশ, বাতাস, জগত-এর যাবতীয় বস্তুর নাম লেখা হয়ে গেল বাংলায়। আমার মানসে, গোপনে, স্বপনের যত কিছু সব চিন্তা-ভাবনা বাঙ্ময় হয়ে উঠল বাংলায়। ধর্ম, সীমানা ও বিশ্বাস বিরহিত, শব্দ,ছন্দ ও ধ্বনির সংমিশ্রনে রণিত, আমারই মতন লক্ষ কোটি মানুষের মুখের মিলিত ভাষায়, নিখিল ভুবনে প্রসারিত হলো নির্ভিক এক বাঙালি জাতি। আমার এই ভাষার প্রমিত শক্তির প্রতি ঈর্ষায় একদিন তাকে সমূলে ধ্বংসের চেষ্টায় উদ্যত হলো ঘাতক। তখনই রুখে উঠেছিল তারা অতীতের এক একুশে ফেব্রুয়ারি। রক্তঝরা মূল্য দিয়ে শহীদ কিছু জীবন তুচ্ছকারী। স্মরণীয় তাঁরা, সূর্যের মত উজ্জ্বল; রক্তিম তারা, আমি না ভুলিতে পারি। আসে আসে তাই, বারেবারে মনে, প্রতি দিনান্তে বৎসরান্তে, সেদিনের স্মৃতি, অদম্য প্রীতি; বেদনায় ভরা, একুশে ফেব্রুয়ারি।

   

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/তারা