আজ সকাল ৫টা ২২মিনিটে অনু হোসেন (বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা, আজ বইমেলা উদ্বোধন) শান্তির জগতে চলে গেল’-ফেসবুকে যখন এই স্ট্যাটাস দেখতে পাই, তখন আমি ব্যক্তিগত কাজে ট্রেনে কিশোরগঞ্জের পথে। মৃত্যুর খবর জেনে একটা ধাক্কা খেলাম। ট্রেনটিও ক্রসিংয়ের জন্য থেমে গেল। হালকা শীত। রোদ উঠেছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি আকাশে সাদা মেঘের ওড়াউড়ি। অনু ভাইয়ের নানা স্মৃতির দৃশ্য হৃদয়ে বারবার ধাক্কা দিচ্ছে।
২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯আজ মেলায় গেলাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখলাম। বইমেলায় অধিকাংশ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের নতুন বই এখনো মেলায় আনতে পারেনি।
আজ জলাধারের পাশের বইমেলার স্টলগুলোতে ঘুরাঘুরির সময় ভালোই শীত অনুভব করলাম। অন্য যেকোনো বারের তুলনায় এবার স্টল বিন্যাস ভালো হয়েছে। স্টলের ডেকোরেশন মানও অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে অনেক লেখককে দেখলাম, কয়েকজন ছাড়া কারো সঙ্গেই কথা হলো না।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯পুরুষ শব্দটি মনে হয় অনেক আকষর্ণীয়। ২০১৮ বইমেলায় পেলাম ইশরাত তানিয়ার গল্পগ্রন্থ ‘বীজপুরুষ’। আর ২০১৯ বইমেলায় পেলাম নাহিদা নাহিদের গল্পগ্রন্থ ‘পুরুষপাঠ’।
৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯বইমেলা যাই ভালোবাসা পাই। চলুন একটি কিংবা দুটি হলেও বই কিনি। আজ বইমেলায় চারটি নতুন বই কিনলাম অটোগ্রাফসহ।
এই কাঠ ফাটা রোদেও প্রচণ্ড শীত। বইমেলায় যেন আজ অন্যরকম আবহাওয়া।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯২০১৯ বইমেলায় কিছু মুহূর্ত ক্যামেরায় বন্দি করলাম। বইমেলা থেকে ফিলে ছবিগুলো রাতে যখন ফেসবুকে আপ করলাম তখন বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিল।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯আজ আমার দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘তিন নম্বর লোকাল’ গ্রন্থ নিয়ে বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা হলো। কৃতজ্ঞতা বন্ধুদের, আজ যারা আড্ডায় যোগ দিয়েছিলেন। অনেকের সঙ্গে ছবি তোলা সম্ভব হয়নি, বই শেষ হওয়ায় অনেকেই সংগ্রহ করতে পারেননি-এজন্য দুঃখিত। তবে আপনাদের ভালোবাসায় আনন্দিত।
ঢাকায় অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। বইমেলার সকালের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রকাশক মজিবর রহমান খোকা ভাইয়ের তোলা বৃষ্টিভেজা বইমেলার ছবি ফেসবুতে বন্ধুদের জন্য শেয়ার করলাম।
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯আল মামুন। জীবনে প্রথমবার বইমেলায় এসেছেন তিনি। তার কবিতার বইও বেরিয়েছে। তিন নম্বর লোকাল গল্পগ্রন্থ কিনলেন। অটোগ্রাফ নিলেন। ছবি তুললেন। পারমিতা হিমের সঙ্গে দেখা হতেই তার নতুন উপন্যাস নিয়ে কথা হলো। অর্জন স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে শামস সাইদ অটোগ্রাফ দিয়েই যাচ্ছেন। তখন সন্ধ্যা। জলাধার থেকে শীতল হাওয়ায় ফাগুনের আমেজে মুখর বইমেলা।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯আকাশে হালকা মেঘ। পাঠক, দর্শক, লেখক ও প্রকাশকরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরছেন। লেখক মঞ্চে পাপড়ি রহমানকে উচ্ছ্বাসিত উদ্দেলিত দেখলাম। স্বকৃত নোমান তাকে কথাসাহিত্য নিয়ে প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। পাশেই একদল কফিতে আড্ডায় মত্ত। প্রাণের বইমেলা যেন সুখের নীড়।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯এক পশলা বৃষ্টির পর পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বাংলা একাডেমি চত্বর। বহেরা তলায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটি প্রজাপতি এসে আমার কাঁধে বসল। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে সেলফি তোলার চেষ্টা করতেই উড়াল দিল। আমি কিছুটা সময় আনমনা হয়ে হাঁটতে লাগলাম।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯দুপুর দুইটা। আমি বইমেলায় ঢুকতেই কবি মাসুদুজ্জামান ভাইয়ের ফোন। মেলায় জাস্ট পাঁচমিনিট চক্কর দিয়েই ছুটলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। স্লোভেনিয়ার কবি গ্লোরিয়ানা ভিবার ও অনূবাদক রাজিয়া সুলতানার সাথে সাক্ষাৎ করলাম। সাক্ষাৎকার নিলাম। যখন তাদের কাছ থেকে বিদায় নেই তখন সময় সাড়ে ৩টা। দ্রুত রিকশা নিয়ে ছুটলাম অফিসের উদ্দেশে।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯পাউল ব্রিতো। কলোম্বিয় লেখক। কলোম্বিয়ার Actual সাহিত্য সাময়িকীর সম্পাদক। বইমেলায় উপলক্ষে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। আজ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে পাউল ব্রিতোর লেখা ‘একিলিসের আদর্শ’ গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠান হলো। স্প্যানিশ ভাষায় আমাকে অটোগ্রাফ দিলেন। ‘একিলিসের আদর্শ’ গ্রন্থটি স্প্যানিশ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন রাজু আলাউদ্দিন। পরে বইমেলায় এ ঝলক ঘুরে অফিসে চলে এলাম।
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯কিছু বই কিনে দাও গো হরিণী।
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯তখন সন্ধ্যা। শিশু চত্বরে বাচ্চাদের হইহুল্লোড়। দেখা হলো কয়েকজন তরুণ লেখকের সঙ্গে। সবার মুখেই মিষ্টি হাসি। হঠাৎ কয়েকজন ঢাকার বাইরে থেকে আসা পাঠক যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে। আলাপে আলাপে ওঠে এল সাহিত্যের নানা প্রসঙ্গ। তরুণ লেখকদের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক ফোকাস লেখকদের চেয়ে। পাঠক বন্ধুরাও বললেন, তরুণদের বই তারা বেশি কিনেছেন। জয় হোক তরুণ লেখকদের।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯বইমেলায় আড্ডা চলছে। অর্ণব বলল, আমি জামালপুর থেকে এসেছি। কিছু লিস্ট আছে বইয়ের। লিস্টের বইগুলোর লেখক কোনো প্রচার পায় না। ওদের বইয়ের প্রকাশনিও নামকরা নয়। কিন্তু ওরা ভালো লিখে। তানিন বলল, যেসব লেখকের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে মিডিয়া তাদের চিনে না। আরসানাল বলল, আমি একজন লেখক। আমার কোনো গোষ্ঠী নেই। বন্ধু সার্কেল নেই। যে কারণে আমার বই নিয়ে কেউ পোস্ট দেয় না। সানজিদা বলল, জনপ্রিয় লেখক হতে চাই। হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। ওরা খাবারের দোকানে ঢুকলো। বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই।
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯এক. মেলার ২৬ তম দিনেও আশাহত হলাম। অবশ্য আবহাওয়াও ছিল বেশ বৈরি। শীতল আবহাওয়া। নিজের তালিকায় থাকা দুটি বই মেলায় গিয়েও কিনতে পারলাম না আজ। বইমেলায় স্টলে গিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে সেলসম্যান জানালেন, এখনো আসেনি। তার মানে এখনো ছাপাখানায়। দেখতে দেখতে বিদায় নিতে চলেছে বইমেলা।
দুই. সকাল এগারটায় যখন বাজার করতে যাই তখনও প্রচণ্ড রোদ ছিল। যে কারণে হালকা শার্ট গায়ে দিয়ে বের হই। এরপর বিকেলের দিকে শাহবাগে ঢুকতেই শীত শীত আবহাওয়া শুরু। আমার সঙ্গে শামস সাইদ। এরই মাঝে ফোন এল হারুন পাশার। বইমেলায় যখন ঢুকি তখনই দেখা হয়ে গেল জাপান প্রবাসী লেখক জুয়েল আহসান কামরুলের সঙ্গে। সেই ২০১৪ সালে বইমেলায় দেখা হয়েছিল। এরপর ২০১৯-এ দেখা। তারপর অটোগ্রাফসহ বই দেওয়া কফিপর্ব শেষে বিদায় জানালাম।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জলাধারের পাশে দিয়ে হাঁটছি। শীতল বাতাসে হৃদয়টা নাচছে। আকাশে হালকা মেঘ। তখন দেখলাম জলাধারের পাশে অ্যাডর্ন পাবলিকেশন্সের সৈয়দ জাকির হোসেন, তুষার আব্দুল্লাহসহ আরো কয়েকজন লেখক আড্ডা দিচ্ছেন। পাশে ঘোরাঘুরি করতেই অন্যপ্রকাশে দেখি চিত্রনায়ক রিয়াজ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করছেন।
এরপর মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। বাতাস বইছে। আবহাওয়া শীতল কিন্তু রোমান্টিক। জলাধারের পাশে অনেককেই দেখলাম এই শীতে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। এরমধ্যে তরুণ-তরুণীও আছেন। মেলায় ঘুরছি। অন্বয় প্রকাশের সামেন আসতেই ইসহাক খানের সঙ্গে দেখা। জড়িয়ে ধরলেন। বই গিফট করলেন।
তিউড়ি প্রকাশনের সামনে দাঁড়াতেই কয়েকজন পাঠক এসে অটোগ্রাফসহ (গল্পগ্রন্থ তিন নম্বর লোকাল) বই কিনলেন। পরে লেখক মঞ্চের সামনে গেলাম। দেখা হলো মালেকা আপা, ইশরাত তানিয়ার সঙ্গে। কুশল বিনিময় হলো। এরপর সন্ধ্যায় দেখা হলো জ্যোৎস্নালিপি, সোলায়মান সুমন, বাবলি আপা, কাজী মোহিনী ইসলাম, অন্বয়ের সঙ্গে। ছবি তোলা পর্ব শেষে আবারও কফি খেলাম সবাই একসঙ্গে।
বইমেলায় হাঁটছি। ঠান্ডা লাগছে। শীতের কাপড় নেওয়া হয়নি। কথা প্রকাশের সামনে যেতেই আফসানা বেগম কয়েকজন লেখকের সঙ্গে কথা বলছেন। আমিও যোগ দিলাম। বইমেলা ও বই নিয়ে কথা হলো। আবারও জলাধারের সামনে আসলাম। দেখা হলো শামীম রেজা ভাই, মোজাফফর হোসেন, খালিদ মারুফসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে।
এরপর প্রথমবারের মতো দেখা হলো সোমা সোবহানের সঙ্গে (তার এবার প্রথম বই এসেছে)। এরপর আমি, শামস সাইদ, কৌশিক, সন্তোষ রয় মেলা থেকে বের হয়ে পল্টনের দিকে হাঁটলাম। তখন মোবাইলে ক্রিং ক্রিং শব্দ। প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন রিসিভ করতেই মাসউদ আহমাদ এর কণ্ঠ। বললাম ভাই চলে যাচ্ছি।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯BREAKING news
বইমেলা ২ মার্চ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
১ মার্চ ২০১৯২০১৯ বইমেলায় এ পর্যন্ত (ফেব্রুয়ারি ১ থেকে ২৮ পর্যন্ত) নতুন বই এসেছে ৪,৬৮৫টি। এর মধ্যে ১,১৫১টি গ্রন্থকে মানসম্পন্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলা একাডেমি।
২ মার্চ ২০১৯এক. পর্দা নামল অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ এর। বইমেলা হিসেবে এবার আমার দারুণ কেটেছে। এত পাঠকের উন্মাদনা, ভালোবাসা, সত্যিই অভিভূত আমি। মুগ্ধ আমি। অনেক অচেনা পাঠক এসেছেন, তিন নম্বর লোকাল কিনেছেন। শুধু আমাকে ভালোবেসে নয়, আমার গল্প পছন্দ হয়েছে বলেই পাঠক বইটি নিয়েছে। আপনাদের ভালোবাসাই আগামী দিনের ভালো লেখার অনুপ্রেরণা। বই নিয়ে সারা বছর আলোচনা অব্যাহত থাকুক এটাই এখন প্রত্যাশা
দুই. বিদায় বইমেলা, সময় রাত ৮.৫৮ মিনিট, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, মেইন গেইট, ঢাকা।
[বইমেলা জর্নালের ঘটনাপ্রবাহ লেখা হয়েছে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ, ২০১৯ সালে] ঢাকা/সাইফ