অন্য দুনিয়া

কুমিল্লায় গৃহকর্মীর ওপর বর্বরতা : পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা : কুমিল্লায় গৃহকর্মী হত্যার ঘটনায় পুলিশের এক এসআই‘র স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।

 

বুধবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করা হয়। আটককৃতের নাম- লিপি আক্তার। তিনি ফেনীর ফুলগাজী থানার এসআই জাহিদ মোল্লার স্ত্রী।

 

সূত্র জানায়, বুধবার দুপুরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে কাটা, থেতলানো জখমের চিহ্নসহ রিনা আক্তার (১৭) নামে এক গৃহকর্মীকে লিপি আক্তার কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তার কাছে রোগীর নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি তার স্বামীকে পুলিশের অফিসার উল্লেখ করে স্বামীর নাম জাহের মোল্লা, পিতা আলী হোসেন মোল্লাহ নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকায় বাসা বলে জানান। চিকিৎসকরা রোগী নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ওই নারী পালিয়ে যান।

 

চিকিৎসকরা ওই রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পান। এরপর ওই নারীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে  নগরীর টমছম ব্রিজসহ বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে ওই নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে কুমিল্লার সংবাদকর্মীরা ওই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তৎপর হয়ে ওঠে। নগরীর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে কান্দিরপাড় জিলা স্কুল রোডে সমতট ল্যাগাসি নামে ১২ তলা ভবনের তিন তলায় লিপি আক্তারের সন্ধান পায়। পরে ওই বাসায় পুলিশ আসে। এখানে সাংবাদিকরা লিপি আক্তারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন কোতোয়ালি থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে লিপি আক্তারকে আটক করা হয়।

 

হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রিনা আক্তারের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাতের আঙ্গুলে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। নখগুলো থেতলানো। বাম হাতের আঙ্গুলের নখ উপড়ানো। কাঁধে বড় বড় ক্ষতের চিহ্ন। পিঠের একাংশ গরম পানিতে পোড়ানো চিহ্নসহ হাত মুখসহ গোটা শরীরে ক্ষত।

 

এ বিষয়ে কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সালাহউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘মেয়েটিকে হাসপাতালে রেখে অজ্ঞাত নারী পালিয়ে যায়। রিনা আক্তার নামে ওই মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আঘাতগুলো অনেক দিনের পুরোনো বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

 

এ ব্যাপারে লিপি আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি অসংলগ্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘রিনা আক্তারকে জ্বীনে মেরেছে। তাকে তাবিজও দেওয়া হয়েছে।’

 

শরীরের আঘাতের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আলগা আছরের আঘাত। সেই সঙ্গে তার শরীরে কয়েকদিন আগে ভাতের মাড় পড়ে। এ জন্য তাকে ‘লিবেক’ নামে এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে।’

 

চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে তিনি নিজেই লিবেক দেন বলে জানান।

 

এসআই শফিউদ্দিন রিনা আক্তারের শরীরে আঘাতের চিহ্নের কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মৃতদেহ মর্গে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে বিস্তারিত বলা যাবে।’

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ভবনের একজন বাসিন্দা জানান, পুলিশ অফিসারে ওই বাসায় প্রায়ই গৃহপরিচারিকাকে নির্যাতন করা হতো। তার চিৎকার প্রায়ই শোনা যেত। পুলিশ অফিসারের বাসা বলে কেউ বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামায়নি।

 

পুলিশ অফিসার ফেনীর ফুলগাজী থানায় চাকরি করলেও তার পরিবার কুমিল্লায় থাকে। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবায়। গৃহকর্মীর বাড়ি একই জেলার নবীনগরে।

 

কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সামছুজ্জামান জানান, এসআই জাহিদ মোল্লার স্ত্রীকেজিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

     

রাইজিংবিডি/কুমিল্লা/৭ মে ২০১৫/মহিউদ্দিন মোল্লা/রুহুল