অন্য দুনিয়া

এখনো পুলিশ প্রহরায় দিন কাটছে ববিতার

ফরহাদ খান, নড়াইল : নির্যাতনের এক বছর পূর্ণ, নড়াইলে শালবরাত গ্রামে গাছে বেঁধে নির্যাতনের শিকার হওয়া গৃহবধূ ববিতা খানম এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেননি। নির্যাতনের এক বছরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে এখনো তাকে ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে। চাকরির আবেদন করেও আশায় কেটেছে সময়। রাজমিস্ত্রি বাবার দরিদ্র সংসারে অনেক কষ্টে দিন যাচ্ছে তার। এদিকে, নিরাপত্তার জন্য এখনো পুলিশি প্রহরা রয়েছে ববিতার।  

 

ববিতা খানম জানান, কোমরে, পেটে, বাম পায়ের হাটুতে যন্ত্রণাসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভূগছেন তিনি। লোহাগড়ায় কর্মরত ডাঃ মায়া রানীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে তার। এখনো তাকে ওষুধ সেবন করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে পুলিশের এক কর্মকর্তা তাকে প্রায় এক হাজার টাকা ওষুধ কিনে দিয়েছেন।

 

দরিদ্র সংসারে হাল ধরার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেও চাকরি পাননি ববিতা। এ বিষয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর লোহাগড়া পৌর মেয়রকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংস্থাপন শাখা থেকে পত্র প্রেরণ করেও কোনো কাজ হয়নি। এখনো পর্যন্ত ভাগ্যে চাকরি জোটেনি তার। ববিতা তার বাবার সংসারে থেকে এ বছর নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ডিগ্রী (বিএসএস) প্রথমবর্ষ পরীক্ষা দিয়েছেন। মেধাবী ববিতা উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন জিপিএ-৫। বাবার সংসারে (লোহাগড়ার এড়েন্দা গ্রাম) ববিতা ছাড়াও তার মা এবং বোন। ছোট বোন মিসরী খানম দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।

 

হতাশা প্রকাশ করে ববিতা বলেন, ‘স্বাভাবিক এবং স্বচ্ছল জীবনে ফিরে যেতে চাকরির প্রয়োজন। যদি কোনো সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাকে চাকরির সুযোগ করে দেয়, তাহলে খুবই কতজ্ঞ থাকব। হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব। চাকরির পাশাপাশি আমার মতো আর কেউ যেন নির্যাতনের শিকার না হয় সে লক্ষ্যেও কাজ করব।’

 

প্রসঙ্গত, যৌতুকের দাবিতে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল সকালে গৃহবধূ ববিতা খানমের শ্বশুরবাড়ি লোহাগড়া উপজেলার শালবরাত গ্রামে গাছে বেঁধে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তার ওপর  বেধড়ক লাঠিপেটা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ওই বছরের ৫ মে ববিতার মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ববিতার স্বামী শফিকুল শেখ, শফিকুলের ভাই হাসান শেখ, বাবা ছালাম শেখ, মা জিরিন বেগম, কামাল শেখ, নান্নু শেখসহ সাতজনের নামে লোহাগড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে আরো একজনকে আসামি করা হয়।

 

ববিতাকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের সেই দৃশ্য

 

গৃহবধূকে নির্যাতনের এ খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ১০ মে (২০১৫) এ ঘটনায় জড়িতদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ববিতার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতারের পর পরবর্তীতে আটজনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই নজরুল ইসলাম। আসামিরা বর্তমানে জামিনে আছেন।

 

মামলা প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, ‘এখন আমি ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি।’

         

রাইজিংবিডি/ নড়াইল/৩০ এপ্রিল ২০১৬/ ফরহাদ/টিপু