অন্য দুনিয়া

ভবদহ এলাকাকে ‘দুর্গত’ ঘোষণার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : নতুন করে ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে  যশোরের ভবদহ এলাকার তিনটি উপজেলার অন্তত ৩০০ গ্রাম। নতুন এই বৃষ্টির পর স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা ভবদহ এলাকাকে  ‘দুর্গত’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।

 

এদিকে পানিবন্দি মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে এদের দেখার কেউ নেই। দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। সরকারিভাবে যে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়েছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

 

সরেজমিনে ভবদহ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অভয়নগর উপজেলার ভবদহ এলাকার অন্তত ৭০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি অবস্থায় বসবাস করছে লাখ লাখ মানুষ। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের বৃষ্টিতে উপজেলার ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তৃতীয় সপ্তাহে আবারো টানা বর্ষণে নতুন করে আরো বিশটি গ্রাম তলিয়ে গেছে। বাড়িঘর ছেড়ে অনেক পরিবার উঁচু রাস্তায় ছাপড়া বানিয়ে বসবাস করছে। ফসলের ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকার। অসংখ্য মাছের ঘের তলিয়ে তিনশ’ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। অভয়নগর উপজেলার ভবদহ এলাকার ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভবদহ এলাকার ২৩টি প্রাথমিক, আটটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দুটি কলেজ জলমগ্ন হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

   

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভবনে আশ্রয় নিচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। অভয়নগরের ভবদহের জলাবদ্ধ অংশে রয়েছে প্রেমবাগ, সুন্দলী, চলিশিয়া, পায়রা, বাঘুটিয়া ও সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম। এর পাশাপাশি ভবদহসংলগ্ন এলাকাও জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।

 

ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধ হয়ে পড়া জনপদগুলোর মধ্যে রয়েছে ধোপাদী, ডুমুরতলা, সরখোলা, মশিয়াহাটি, ডহরমশিয়াহাটি, ডাঙ্গামাশিয়াহাটি, সুন্দলী, ফুলেরগাতী, রাজাপুর, রামসরা, ধলিরগাতি, বনগ্রাম, কোটা, বাগদহ, বলারাবাদ, আন্ধা, চলিশিয়া, বেদভিটা, দিঘলিয়া, সড়াডাঙ্গা, গোবিন্দপুর, হরিশপুর, কালিশাকুল, ভবানিপুরসহ ৭০টি গ্রাম। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী।

 

দুর্গত মানুষরা বলছেন, ভবদহের বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় টেকা. শ্রী-হরি নদী পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। এ বছর ভবদহের স্লুইস গেট দিয়ে একেবারেই পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। যে কারণে ব্যাপক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে আমডাঙ্গা খাল খনন করা হয়। কিন্তু সে খাল সংস্কার না করা ও তার অগ্রমুখে একটি সংকীর্ণ কালভার্ট থাকায় পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হচ্ছে না।

 

ভাটবিলা গ্রামের রাস্থায় আশ্রয় নেওয়া গৃহবধূ উর্মিলা বলেন, ‘বাড়িঘরে জল ওঠার কারণে সাত দিন যাবৎ ঝুপড়ি ঘর বেঁধে রাস্তার ওপর বসবাস করছি। এ পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইনি। আমি ত্রাণ চাই না। সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তাড়াতাড়ি আমাদের জল নামায় দিক।’

   

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রিজিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ১২ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১১৬ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে ৫০ টন চাল ও পাঁচ লাখ টাকার চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বৃষ্টির কারণে যশোর-খুলনা মহাসড়কসহ ভবদহ এলাকার রাস্তাগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এখন পায়ে হেঁটেও চলাচলা করা দায় হয়ে পড়েছে।

 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিচুর রহমান জানান, ভবহদ এলাকার সব মাছের ঘের গত ৮ ও ৯ তারিখের বর্ষণে ভেসে যায়। দ্বিতীয় দফা বর্ষণে ভৈরব পূর্ব অংশের কয়েকশ’ ঘের ভেসে মাছ বেরিয়ে গেছে। সব মিলে মৎস্য চাষিদের সরকারি হিসেবে দেড়শ’ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। জেলা অফিসে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ জানিয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সামদানী জানান, দুই ধাপের টানা বর্ষণে চার হাজার ৪০৬ হেক্টর জমির আমন ধান, ৮৪৩ হেক্টর আউশ, ৩৪৮ হেক্টর শাকসবজি, ১৫২ হেক্টর পান ও পাঁচ হেক্টর জমির মরিচের ক্ষতি হয়েছে। গত ধাপের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মূল্য নির্ধারিত হয়েছিল সরকারি হিসেবে ১৯ কোটি দুই লাখ টাকা। দ্বিতীয় দফার হিসাব করা হয়নি।

 

সুন্দলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার বাড়ি এলাকার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু। গত ৬০ বছরের মধ্যে আমার বাড়িতে জল উঠতে দেখিনি। কিন্তু দ্বিতীয় দফা বর্ষণে আমার উঠোনে তিন ফুট জল উঠে যায়। বাড়িতে রান্না করা যায়নি। আমি না  খেয়ে আছি। জল আরো উঠবে আশঙ্কায় লোকজন গবাদি পশু নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে।’

 

অভয়নগরের ৭৭০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে

অভয়নগর উপজেলার জলাবদ্ধ ভবদহ অঞ্চলে চলছে মাছ শিকারের মচ্ছব। শুধু অভয়নগরের ৭৭০টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। ঘের থেকে বেরিয়ে আসা মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে জনগণের মধ্যে। শুধু এলাকাবাসীই নন, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসছে মাছ ধরতে। জাল, ছিপ, চারো, কোচ নিয়ে তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ শিকার করছেন। রক্ষা পাচ্ছে না চারা ও পোনা মাছও।শিকারীদের অনেকেই নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি মাছ বেচে দিচ্ছেন।

 

উপজেলার ধোপাদী উলু বটতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে যেন মাছ ধরার মেলা বসেছে। ছিপ দিয়ে শতাধিক শৌখিন মৎস্য শিকারী মাছ ধরছেন।

 

খানিকটা দূরে কিছু লোককে কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরতে দেখা যায়। তারা খাওয়ার অনুপযোগী ছোট মাছ ফেলে দিচ্ছেন। এভাবে মারা পড়ছে বিপুল সংখ্যক চারা মাছ।

 

ধোপাদী গ্রামের ঘের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ঘের ভেসে মাছ বেরিয়ে গেছে, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু নির্বিচারে কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট মাছ ধরে নিধন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান মিজানুর রহমান।

   

মণিরামপুরে দুর্গতদের লাইন

সারি সারি লোক আসছে। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। যেন শরণার্থীর লাইন। তাদের হাতে সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। গবাদি পশু। আশ্রয়ের জন্য ডাঙার খোঁজে বেরিয়েছেন তারা।

 

এসব আশ্রয়প্রার্থী মণিরামপুরের পানিবন্দি এলাকার। আছেন বিত্তহীন থেকে সম্পন্ন কৃষক। উঁচু রাস্তার ধারে টং বেঁধে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করছেন তারা। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। উজান থেকে নেমে আসা ঢল রাস্তা উপচে পড়ছে। ফলে দিন তো বটেই, রাতেও ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে অনেককে। বাঁশ, পলিথিন বা পাটকাঠির তৈরি অস্থায়ী ঘর অনিরাপদ হয়ে উঠছে। রয়েছে সাপ-পোকার ভয়। ছেলে-মেয়ে নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে এসব বাস্তুহারা মানুষের। নলকূপ ডুবে যাওয়ায় খাবার পানির তীব্র সংকট। বাধ্য হয়ে তারা দলে দলে এসে উঠছেন উঁচু রাস্তায়।

 

কিন্তু সড়কে ওঠে এসেও সবাই নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না। যশোর-চুকনগর সড়কের চিনাটোলা বাজার থেকে কেশবপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তার ওপর দিয়ে স্রোত বইছে। রাস্তার এই অংশে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা রাতেও ঘুমাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অনেকে নতুন আশ্রয়ের সন্ধান করছেন।

 

দ্বিতীয় দফা প্রবল বর্ষণে মণিরামপুরের ভবদহ এলাকার ১৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ফসলেরখেত, মাছের ঘের, রাস্তা-ঘাট সব পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তায় টং ঘর বেঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। প্রথম দফার বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া ফসলের মাঠ কোথাও কোথাও জেগে ওঠায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছিলেন চাষিরা। কিন্তু দ্বিতীয় দফার টানা বর্ষণে সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

 

এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ওপর হাঁটুসমান পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রীবাহী বাসগুলো চিনাটোলা বাজারে পৌঁছে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। ফলে জেলা সদর যশোরের সঙ্গে কেশবপুরের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কেশবপুর থেকে কাউকে যশোর শহরে আসতে বা যশোরের দিক থেকে কেশবপুরে যেতে মাঝখানের কয়েক কিলোমিটার পানি ভেঙে হেঁটে বা রিকশাভ্যানে চলাচল করতে হচ্ছে।

   

শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনি বলেন, আমার ইউনিয়নের ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। এরমধ্যে এক হাজার মানুষের দুবেলা খাবারের জন্য সরকারিভাবে ১২ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। বাকি আট হাজার পরিবার কার্যত অনাহারে রয়েছে।

 

মণিরামপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফা ভারি বর্ষণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের কয়েকশ’ গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক লাখ মানুষ। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। তবে পূর্ণাঙ্গ ক্ষতির পরিমাণ জানতে কিছুটা সময় লাগবে।

 

এদিকে বুধবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে মনিরমাপুরের ভবদহ এলাকাকে ‘দুর্গত’ ঘোষণার দাবি জানান স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য।

 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, দুই দফা ভারি বর্ষণের কারণে মণিরামপুর উপজেলার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ ডুবে গেছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ৪০ হাজার ঘরবাড়িসহ হাজার হাজার পুকুর জলাশয় পানিতে ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এ অবস্থায় এ অঞ্চলকে ‘দুর্গত’ এলাকা ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।

 

তিনি বলেন, শ্রী-হরি ও মুক্তেশ্বরী নদীতে পলি জমে যাওয়ায় গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি বের হতে পারেনি। এতে করে উপজেলার ১৭টির মধ্যে ১৩টি ইউনিয়ন জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নগুলো ভবদহ এলাকায় অবস্থিত। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ হাজার ঘর-বাড়ি। ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়েছে হাজার হাজার পরিবার। বন্ধ রয়েছে ১০৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাপের কামড়ে সাতজনসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছে ১২ জন। এ অবস্থায় উপজেলা জুড়ে মানবিকবিপর্যয় দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষকে বাঁচাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে তা খুবই সামান্য।

 

এ মুহূর্তে এ উপজেলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে আরো ত্রাণ সহায়তা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন এ উপজেলার সকল জনপ্রতিনিধি।

 

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ছাড়াও উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান, প্রাক্তন মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবালসহ সব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

   

কেশবপুরে ভয়াবহ অবস্থা

কেশবপুর উপজেলার ৫২টি গ্রামের ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ১৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩১০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বুড়িভদ্র, হরিহর ও আপারভদ্রা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অনেক স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কেশবপুর ভায়া সরসকাটি, পাঁজিয়া সড়কের অনেক স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত এলাকায় শিশু খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামাঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

 

কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত এলাকায় চারটি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শেখ আবু শাহিন জানান, মধ্যকুল, কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও আলতাপোলে চারটি মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।

 

কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নের আলতাপোল, মাগুরাডাঙ্গা, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গা, দোরমুটিয়া, মুলগ্রামসহ আটটি গ্রামের আট শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

 

হাবাসপোল গ্রামের শহিদ হাসান জানান, জলাবদ্ধ এলাকায় কাজ-কর্ম না থাকায় শ্রমজীবী মানুষ মাছ ধরে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করছেন।

 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ হাজার ৭৯৪ হেক্টর জমির আউশ, আমন, সবজি ও পানের ক্ষতি হয়েছে। যার পরিমাণ ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৫ টাকা।

   

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে ৮৯ কোটি ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩১৫ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

 

উপজেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানিতে মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মিলে ২০৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর জানায়, বন্যার পানিতে ৯৫৫টি ল্যাট্রিন, ১১০টি অগভীর ও ৯৪টি গভীর নলকূপ তলিয়ে গেছে।

 

কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হক লিকু বলেন, ভবদহ এলাকায় ব্যাপকভাবে মাছের চাষ তথা ঘের গড়ে উঠলেও পানি নামার কোনো ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ঘের মালিকরা ইচ্ছামত তাদের ঘের গড়ে তুললেও এক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা রাখেনি। প্রশাসন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার। ওয়াপদা স্লুইচ গেটগুলো করলেও এগুলো দিয়ে পানি ওঠা নামার ব্যবস্থা করেনি। ঘের মালিকদের ইচ্ছামত পানি ওঠানো নামানো হয়। আর এতে করে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা বেড়েছে।

 

কৃষক নেতা কামরুল হক লিকু বলেন, আইডব্লিউএম তাদের নকশা বা প্রকল্প প্রস্তাবনায় একই সঙ্গে আপার ভদ্রার বিল বুড়লি, শ্রী-নদীর বিল কপালিয়া, হামকুরা নদীর মধুগ্রাম বিল ও গ্যাংরাইল নদীর পাশে বেসিন তৈরি করে চারটি প্রকল্প প্রস্তাব করে। কিন্তু ওয়াপদাসহ প্রকল্পকারীরা শুধু বিল কপালিয়ায় ব্যতিব্যস্ত আছে। যা দ্বারা ভবদহ সমস্যার সমাধান হবে না।

     

রাইজিংবিডি/যশোর/২৫ আগস্ট ২০১৬/বি এম ফারুক/রুহুল