অন্য দুনিয়া

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার মাত্র ১১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টায় পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় আট সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ১২ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেই পানি বিপৎসীমা স্পর্শ করবে। রাজশাহীতে পদ্মার পানির বিপৎসীমার লেভেল ১৮ দশমিক ৫০ মিটার।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১৮ দশমিক ৩১ মিটার। শনিবার সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৩৮ মিটার। তবে পরবর্তীতে আট ঘণ্টায় মাত্র এক সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে পানি বৃদ্ধির ফলে নগরীর নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

 

গত বছর পদ্মার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত নগরীর বুলনপুর পুলিশ লাইনসংলগ্ন বাঁধের কিছু অংশ দেবে যাওয়ায় ওই অংশে আজ শনিবার বালুর বস্তা ফেলা হয়। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দীন। তিনি এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ভাঙন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

 

ইতিমধ্যে পানি বৃদ্ধির ফলে নগরীর জিয়ানগর, বুলনপুর, পঞ্চবটি ও শ্যামনগর এলাকায় পানি ঢুকে গেছে। সিমলা পার্ক, বিজিবি গার্ডেন, পদ্মা গার্ডেন, বড়কুঠি, লালনশাহ পার্কসংলগ্ন এলাকায় পানি বাঁধকে স্পর্শ করেছে। মূল শহর থেকে চার ফুট ওপরে রয়েছে পদ্মার পানির উচ্চতা। তবে এতে আশঙ্কার কিছু নেই বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মায় গত এক সপ্তাহ ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আশঙ্কার কিছু নেই। দু-একদিনের মধ্যেই পানি নেমে যাবে। আর পানি বাড়লেও বাঁধকে প্লাবিত করতে পারবে না। বাঁধের টপ-লেভেলের সর্বোচ্চ উচ্চতা ২১ দশমিক ৫০ মিটার। এর আগে গত ২০১৩ সালে ৭ সেপ্টেম্বর পদ্মার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। ওই দিন পানির উচ্চতা ছিল ১৮ দশমিক ৭০ মিটার। পুরো শহর রক্ষা বাঁধ মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেসুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধির হার কমে গেছে। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাত্র এক সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। দু-একদিনের মধ্যে আরো পানি কমে যাবে। রাজশাহীর মাটি ভালো হওয়ায় সমস্যার কিছু নেই। বাঁধের গোড়াতেই পানি স্পর্শ করতে পারেনি। বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ারও কোনো আশঙ্কা নেই। প্রতিদিনই বাঁধের অংশে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।

 

এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে নগরী ছাড়াও রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, পবা ও গোদাগাড়ীর অনেক এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। পনিবন্দি হয়ে পড়েছে ওই এলাকার মানুষজন। দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট।

 

বন্যায় পবার হরিয়ান ইউনিয়নের মধ্যচরে নতুনভাবে স্থাপিত ২৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি উঠেছে চর খিদিরপুর এলাকার খানপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে। ওই এলাকায়ও দেখা দিয়েছে গবাদিপশুর খাদ্য সংকট।

 

এছাড়া নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকা পবার হরিপুর ইউনিয়নের বশরী, হাড়পুর, নবগঙ্গা, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া ও খোলাবোনা এলাকায় পদ্মার পানি ঢুকে পড়েছে। নবগঙ্গা এলাকার বাঁধে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকায় ইতিমধ্যে প্রায় ১২টি বাড়ি ভেঙে গেছে। পানিবন্দি রয়েছে প্রায় ২৬০টি পরিবার। ডুবে গেছে এক থেকে দেড়শ বিঘার সবজির আবাদ।

 

পদ্মার নদীতে পানি বৃদ্ধিতে গোদাগাড়ী চরে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গত দুদিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৪০টি বাড়ি। এ নিয়ে গত ১৫ দিনে ১২০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে আট শতাধিক ঘরবাড়ি। ভাঙনের শিকার মানুষগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

 

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে হুমান্তনগর থেকে চর বয়ারমারী ঢ্যাংগাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার জুড়ে পদ্মা নদী ভাঙছে। তবে ফারাক্কা ব্যারাজের গেট খুলে দেওয়ায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের হুমন্ত নগর, চর নওশেরা, ডাকরি পাড়া, খাসমহল আমতলা এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিলেও চর বয়ারমারী নিচু পাড়া, হঠাৎ পাড়া, আমিন পাড়া ও ঢ্যাংগা পাড়ায় পদ্মায় নদী বেশি ভাঙছে। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ফুট করে নদীর পাড় ভাঙতে থাকায় নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে।

   

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২৭ আগস্ট ২০১৬/তানজিমুল হক/মুশফিক