অন্য দুনিয়া

জিহাদে যাওয়ার কথা বলেই বাড়ি ছাড়ে ফজলে রাব্বি

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : নারায়ণগঞ্জে পুলিশি অভিযানে নিহত জেএমবি নেতা তামিম আহমেদের অপর দুই সঙ্গীর একজন ফজলে রাব্বি জিহাদে যাওয়ার কথা বলেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়।

 

গত ৫ এপ্রিল ঘর ছাড়ে সে। এরপর শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জে তামিম আহমেদের সঙ্গে ফজলে রাব্বি নিহত হয়। ফজলে রাব্বি যশোরের কিসমত নওয়াপাড়ার বাসিন্দা উপশহর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ কাজী হাবিবুল্লাহর ছেলে। সে ছিল যশোর সরকারি এম এম কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। রাব্বির পরিবার এখন বাড়ির ভেতর থেকে তালা মেরে ঘরের মধ্যে অবস্থান করছে।পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম শনিবার রাতে জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে রাব্বির পরিচয় জানা গেছে। তার বাড়ি যশোর উপশহরের কিসমত নওয়াপাড়ায়। গুলশান হামলার পর যশোর পুলিশ নিখোঁজ যে পাঁচজনের ছবি দিয়ে পোস্টার ছাপিয়েছিল, সেখানে ২ নম্বরে রাব্বির ছবি ছিল। ফেসবুক, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সে জঙ্গিদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে ভালো ছেলে বলে জানতেন।  স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ফজলে রাব্বি গত ৫ এপ্রিল বাড়ি থেকে নিখোঁজ হলে তার বাবা হাবিবুল্লাহ ৭ এপ্রিল ছেলের নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি জিডি করেন। তিনি সে সময় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, তার ছেলে ছাত্রত্ব বাতিলের জন্যও কলেজে আবেদন করেছিল। তাকে জিডি করতে সহযোগিতা করেছিলেন যশোর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল।কাজী হাবিবুল্লাহ জানান, গত ৫ এপ্রিল সকালে তার ছেলে জামাকাপড় নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বাড়ি ছাড়ার আগে সে কলেজ থেকে সমস্ত কাগজপত্র তুলে নেয়। কাজী হাবিবুল্লাহ ছেলে নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে গত ৭ এপ্রিল যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। জিডি নম্বর ৩৬০/০৭.০৪.২০১৬। ছেলেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছিলেন।ফজলে রাব্বির ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হয় তার বাড়ির এলাকায়। প্রতিবেশীরা জানান, রাব্বি এলাকার ছেলেদের সঙ্গে খুবএকটা মিশত না। শুধু স্থানীয় মসজিদের ইমামের সঙ্গে তার সখ্য ছিল।স্থানীয়রা আরো জানান, বাড়ি ছাড়ার সময় ফজলে রাব্বি তার বোনকে বলে গিয়েছিল, সে জিহাদে যাচ্ছে, হাশরের ময়দানে নেতা হবে। আর স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইয়াহিয়া রাব্বির পিতাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তাকে বাড়ি ছাড়ার সুযোগ করে দিতে। ইমাম বলেছিলেন, ‘তাকে যেতে না দিলে আপনি তো শহীদের পিতা হতে পারবেন না।’ প্রতিবেশীরা আরো জানান, জঙ্গি সংগঠনে সংশ্লিষ্টতা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রাব্বির প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। এ নিয়ে গোলযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যই ছিল। এ বিষয়ে যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা জানান, তারা এখনো নিশ্চিত নয় যে নিহতদের মধ্যে একজন রাব্বি। তবে তার স্বজনদের কাছ থেকে শুনে তেমনটাই মনে করা হচ্ছে।অন্যদিকে, র‌্যাব-৬ যশোর অফিস থেকে যে নিখোঁজ তালিকা প্রকাশ করা হয়, এর মধ্যে রাব্বির নাম রয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, ফজলে রাব্বি ৬টি মুঠোফোন নম্বর ব্যবহার করত। কখনো সে কোনো নির্দিষ্ট নম্বরে থাকত না। কখনো মুঠোফোনও বদল করে ফেলেছে। ধারণা করা হচ্ছে নিহতদের মধ্যে রাব্বি রয়েছে।

   

রাইজিংবিডি/যশোর/২৮ আগস্ট ২০১৬/বি এম ফারুক/টিপু/এএন