অন্য দুনিয়া

যে কারণে যায় না ভবদহের দুঃখ

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর : জলাবদ্ধতার জন্য যশোরের দুঃখ বলা হয় ভবদহকে। পলি জমে রুদ্ধ হয়ে আছে এখানের নদী পথগুলো। যা ভবদহ অঞ্চলে আটকে পড়া পানি নিষ্কাশনের  বড় বাধা। ফলে প্রতিবছর জলাবদ্ধতার নির্মম যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষকে।

 

বছর পেরিয়ে যুগ পেরিয়েছে, এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী কোনো সমাধানে এগিয়ে আসেনি কেউই। ক্ষমতার পালা বদলের সঙ্গে রাজনীতি শুরু হয়েছে ভবদহের মানুষদেরকে নিয়ে। এ দুঃখ কবে সমাধান হবে তাও কেউ বলতে পারে না। এবারও ভবদহে সে দুঃখ দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে ভবদহ অঞ্চলে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।

 

ভবদহের সমস্যা সমাধানের জন্য একেক পক্ষ একেক রকম দাবি তুলে প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান করছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের এ প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বিল কপালিয়ায় প্রস্তাবিত জোয়ারাধার বা টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু করতে পারেনি। এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হরি, শ্রী ও টেকা নদীতে ব্যাপকহারে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি জমে নদীর বুক উঁচু হয়ে যাওয়ায়, বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র ও প্রধান পথ।

 

চলতি মাসের দুই দফা অবিরাম বৃষ্টিতে ভবদহের  বিশাল অঞ্চল (যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুরের ব্যাপক এলাকা এবং যশোর সদরের একাংশ) তলিয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। এলাকার মানুষ বাড়ি-ঘর ফেলে রাস্তায় এসে আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। কয়েকশ’গ্রাম জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। ছোট বড় প্রায় ৪০ হাজার ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। হাজার হাজার মানুষের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দিনদিন পানি বেড়ে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ছয় থেকে সাত লক্ষাধিক মানুষ।

 

সূত্র জানায়, উপকূল অঞ্চলে বেড়িবাঁধ দিয়ে চিংড়ি মাছ চাষ ও সবুজায়নের অংশ হিসেবে নোনাপানি ঠেকাতে ১৯৫৮ সাল থেকে তৎকালীন সরকার নদী শাসন শুরু করে। ১৯৬২ সালে ভবদহের ওপর পাঁচটি স্থানে বসানো হয় ৪৪টি স্লুইসগেট। এতে জোয়ারের পানি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় নদী তার স্বাভাবিক গতি হারাতে থাকে। জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি জমে নদীর বুক উঁচু হতে থাকে।

 

জোয়ারাধার প্রকল্প চালু :

১৯৮১ সালে ভবদহের পাশের কয়েকটি বিলে প্রথম দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ক্রমান্বয়ে ৫২টি বিলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে করে ওই বিলের নিম্নাংশে দিকে ফসল ফলাতে ব্যর্থ হয় কৃষক। নিরুপায় হয়ে ১৯৮৮ সালে ডহুরী বিলের বাঁধ কাটা হয়। এরপর ১৯৯০ সালে বিল ডাকাতিয়ার বাঁধ কাটা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে বাঁধ কাটার ধারাবাহিকতায় ভবদহের আগরহাটি-ভায়না বিলের স্থানীয় বাসিন্দারা নদীসংলগ্ন ভায়না বিলের বেড়িবাঁধ কেটে দেয়। এতে নদীর পলিযুক্ত পানি ওই বিলে প্রবেশ করে। আর সেই সঙ্গে বেরিয়ে যায় স্বচ্ছ (মিঠা) পানি। এভাবে পলিতে একদিকে বিল উঁচু হতে থাকে। অন্যদিকে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পায়। এ কারণে তৎকালীন সরকার ১৯৯৮ সালে নদীর নাব্যতা ঠিক রাখার জন্য প্রথম ওই বিলে জোয়ারাধার প্রকল্প চালু করে।

 

স্থানীয়রা জানান, ওই জোয়ারাধার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকদের শতশত বছরের পুরানো নিজস্ব উদ্ভাবিত একটি কৃষি-পদ্ধতি। অতীতে কৃষকরা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধ দিয়ে নোনা পানি ঠেকিয়ে আবাদ করতেন। আবার আবাদ শেষে বাঁধ কেটে জোয়ারের পলি তুলে বিল উঁচু করে নিতেন। এর নাম অষ্টমাসী বাঁধ। মাঘি পূর্ণিমায় বাঁধ দিয়ে আষাঢ়ি পূর্ণিমায় খুলে দেওয়া হতো। এইভাবে একই সঙ্গে চলত চাষাবাদ আর ভূমি গঠনের কাজ।

   

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জোয়ারভাটা চালুর জন্য মূল নদী সংলগ্ন যে কোনো একটি নির্বাচিত বিলের তিনদিকে পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এরপর অবশিষ্ট দিকের বেড়িবাঁধের একটি অংশ উন্মুক্ত করে বিলে জোয়ারভাটা চালু করা হয়। এটাই জোয়ারাধার । ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য সাগর থেকে জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি পর্যায়ক্রমে এলাকার একটি করে বিলে ফেলা হয়। এতে ওই বিল উঁচু করার পাশাপাশি নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পায়। আর এ কাজের জন্য ‘ভবদহ ও তৎসংলগ্ন বিল এলাকায় জলাবদ্ধতা দূরিকরণ প্রকল্প’ গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এভাবে প্রতি বিলে জোয়ারাধার চলবে তিন বছর ধরে।

 

সূত্র মতে, জোয়ারাধার চলাকালে ওই বিলে কোনো ফসল হবে না। এ জন্য কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পাউবো। ২০০১ সালে পাউবোর ভুল সিদ্ধান্ত, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতির জন্য বিল কেদারিয়ায় গ্রহণ করা জোয়ারাধার ফলপ্রসু হয়নি। ফলে নদী আবারো ভরাট হতে থাকে। ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে ৪ দফা বৃষ্টিতে এলাকায় পূনরায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুই বছর মানবেতর জীবনযাপন করে।

 

জলাবদ্ধতা দূরীকরণের অংশ হিসেবে ২০০৬ সালে কেশবপুর উপজেলার বিল খুকশিয়ায় তিন বছর মেয়াদী জোয়ারাধার চালু করা হয়। এ প্রকল্প চালু করা হলেও বিলের পাঁচ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়। এ সময় বিলে কোনো ফসল হয়নি। কিন্তু ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা হয় মাত্র এক হাজার কৃষককে। তালিকাভুক্ত কৃষকের অর্ধেকও ফসলের ক্ষতিপূরণ পাননি। ২০০৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা অব্যাহত থাকে।

 

বিল খুকশিয়ার পর চতুর্থ বিল হিসেবে মনিরামপুর উপজেলার বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার চালুর চেষ্টা চালায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফসলের অগ্রিম ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু বিলের বেশিরভাগ কৃষক ক্ষতিপুরণের অগ্রিম টাকা পাওয়ার জন্য আবেদন করেননি। এই অবস্থায় ২০১২ সালের মে মাসে বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার নির্মাণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। ওই বছরের ২ জুন জোয়ারাধার নির্মাণের অংশ হিসেবে পেরিফেরিয়াল বাঁধ নির্মাণ করতে গেলে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে হামলার শিকার হন তৎকালিন হুইপ যশোর-৬ আসনের সংসদ শেখ আব্দুল ওহাব, অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ২৬ জন। থেমে যায় জোয়ারাধার প্রকল্প। ফলে পলিতে ভরাট হতে থাকে হরি, শ্রী ও টেকা নদী।

 

২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিক্ষুব্ধ কৃষকরা গোরসয়ালে হরি নদীর সঙ্গে বিল খুকশিয়ার কাটিং পয়েন্ট বেঁধে দেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় বিল খুকশিয়ায় জোয়ারাধার।

   

ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে ‘ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটি’ ও  ‘ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি’ আন্দোলন করে আসছে। এ বছরও উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দ্রুত পানি সরানো এবং জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের দাবিতে ওই দুটি সংগঠন আন্দোলন শুরু করেছে। তারা প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, স্মারকলিপি পেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচি থেকে তারা ভবদহ এলাকাকে ‘দুর্গত’এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছে। আন্দোলনের মুখে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রনজিৎ রায় ভবদহ এলাকায় পানি সরানোর জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

 

যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য ভবদহের মণিরামপুর অঞ্চলকে ‘দুর্গত’ এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়ে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ ছাড়া গত শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর-৬  (কেশবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক ঘোষণা দেন, রোববার থেকে ভবদহের কেশবপুর এলাকা ড্রেজার মেশিন দিয়ে খনন করা হবে। যাতে ওই এলাকার পানি দ্রুত সরে যায়।

 

ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা কৃষক সংগ্রাম সমিতি যশোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হক লিকু বলেন, ‘ভবদহ এলাকায় ব্যাপকভাবে মাছের চাষ তথা ঘের গড়ে ওঠলেও পানি নামার কোনো ব্যবস্থা সেখানে রাখা হয়নি।  প্রশাসন এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্বিকার। তাই ঘের/মাছ চাষের একটি সুষ্ঠু নীতিমালা করার দাবি দীর্ঘ দিনের। ওয়াপদা ভবদহের স্লুইচ গেটগুলো দিয়ে পানি ওঠা নামার ব্যবস্থা করেনি। ঘের মালিকদের ইচ্ছামত পানি ওঠানো-নামানো হয়। যে কারণে এখানে পানি নিষ্কাশনের কোনো সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। আর এতে করে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সমুদ্র থেকে আসা পলি যুক্ত লোনা পানি। ’

 

কৃষক নেতা লিকু বলেন, ‘আইডাব্লিউএম তাদের নকশা বা প্রকল্প প্রস্তাবনায় একই সঙ্গে আপার ভদ্রার বিল বুড়লি (২০১২-১৮), শ্রী-নদীর বিল কপালিয়া (২০১৩-১৯), হামকুরা নদীর মধুগ্রাম বিল (২০১৪-২০) ও গ্যাংরাইল নদীর পাশে বেসিন (২০১৪-২০) তৈরি করে চারটি টিআরএম প্রকল্প প্রস্তাব করে। কিন্তু ওয়াপদাসহ প্রকল্পকারীরা শুধুমাত্র বিল কপালিয়ায় প্রকল্পটি করতে ব্যতিব্যস্ত আছে। যা দ্বারা ভবদহ সমস্যার সমাধান হবে না।’

 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান সমন্বয়ক বৈকুণ্ঠ বিহারী রায় বলেন, ‘মাত্র ৩৭ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ভবদহের চারপাশের ৬টি উপজেলার ব্যাপক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে । যা ২০০৫ ও ২০০৬ সালের মতই ভয়াবহ। দেখা দিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। বাড়িতে পানি ঢোকায় মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ উঁচুস্থানে আশ্রয় নিয়েছে।আমরা আন্দোলন করছি। সমাবেশ করে এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার জন্য ডিসি মহোদয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছি। শিগগিরই পানি সরানোর ব্যবস্থা না করলে ভুক্তভোগীদের নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।’

 

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ও যশোর জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের অদূরদর্শিতা, খাম-খেয়ালিপনা, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও সরকারি দলের মধ্যে কোন্দলের জন্য বিল কপালিয়ায় টিআরএম করা সম্ভব হয়নি। ফলে কয়েক লাখ মানুষ আবারো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’

 

তিনি বলেন, ‘দ্রুত পানি সরাতে ভবদহের হরি-শ্রী নদীর মাঝ দিয়ে চ্যানেল করতে হবে। বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু এবং আমডাঙ্গা খাল সংস্কার ও রাজাপুর খালের সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপন করতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে আমরা এ কথাগুলো বলতে শুরু করেছি।’

 

ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘ওয়াপদার প্রতি এলাকার মানুষের কোনো আস্থা নাই। তারা বলে তিন বছরের প্রকল্প আর বাস্তবে কাগজে বলে ৭ বছর। তারা বলে ফসলের ক্ষতিপূরণের জন্য ফরম পূরণ করতে আর সেখানে লেখা থাকে ভূমি অধিগ্রহণের কথা। ফলে জমি হারানো আশঙ্কায় কেউ আর ও মুখো হয় না। চলতি বছর প্রায় গোটা সময়ই ভবদহের সকল স্লুইচগেটগুলো বন্ধ রেখে ওয়াপদা পরিকল্পিতভাবেই জলাবদ্ধতা বাড়িয়েছে।’

 

কৃষক সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ভবদহের মাটির বাধ উচ্ছেদ করে শ্রী/হরি নদীর সঙ্গে খুলনার ফুলতলায় ভৈরব নদের সংযোগ এবং বিল পায়রা-বিল ডাকাতিয়ার মাঝ দিয়ে শৈলমারীর সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করে সকল নিচু বিলে একসঙ্গে অবাধ জোয়ার-ভাটার ব্যবস্থা করলে ভবদহের জলাবদ্ধ সমস্যার আশু সমাধান হতে পারে। তবে দীর্ঘ মেয়াদী সমাধানে ফারাক্কার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের বিকল্প নাই।’

 

ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক পরিতোষ দেবনাথ বলেন, ‘কে বা কারা ভবদহের বিল কপালিয়া অংশের বাঁধ গত কয়েকদিন আগে কেটে দিলে এলাকাবাসী সকালে তা পুনরায় বেঁধে দেয়। এখন প্রতি রাতে তারা পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে।’

 

ভবদহ সংগ্রাম কমিটির নেহালপুরের আহ্বায়ক বালিধার মোবারক বলেন, ‘ভবদহের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ জোয়ারে আসা পলি। এ পলি উপকূলীয় এলাকা দিয়ে উপরের দিকে এসেই তো ভবদহের গেটের সংলগ্ন নদীকে ভরাট করছে। তাহলে নিচের দিকের বিলগুলোতে কেন টিআরএম করা হয়নি। শুনেছি বিল বুরুলিতে ও গ্যাংরাইলে টিআরএম করার কথা ছিল কিন্তু ওয়াপদা সে দিকে যাচ্ছে না কেন?

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড, খুলনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যশোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল) প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘ভবদহ অঞ্চলের বর্তমান অবস্থা খুবই ভয়াবহ। স্থানীয়দের বিরোধিতার কারণে বিল কপালিয়ায় জোয়ারাধার চালু করা যায়নি। প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। ফলে নদীর বুক উঁচু হয়ে বৃষ্টির পানি নদী দিয়ে বের হতে না পারায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তা নিরসনে আমরা স্বল্প মেয়াদের জন্য ভবদহের একুশ স্লুইস গেট থেকে শোলগাতি পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার নদীর মাঝ বরাবর ১০ থেকে ১৫ ফুট চ্যানেল খনন করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হবে।’

   

রাইজিংবিডি/যশোর/২৯ আগস্ট ২০১৬/বি এম ফারুক/রুহুল/টিপু