মোখলেছুর রহমান : যাকে কিনা ‘পৃথিবীর সবচেয়ে কুৎসিত নারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল, সেই কিনা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে চান! লিজি ভেলাসকুয়াজ তাকে নিয়ে বানানো একটি তথ্যচিত্রে তার বিরুদ্ধে অনলাইনে যে মন্তব্যগুলো এসেছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে এ আশাবাদ শুনিয়েছেনে।
১৭ বছর বয়সে লিজি ভেলাসকুয়াজ ইন্টারনেটে তার একটি ভিডিও খুঁজে পান। যেখানে তাকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে কুৎসিত নারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ভিডিওটির নিচে হাজার হাজার নেতিবাচক মন্তব্যও দেখতে পায় সে। সেখানে অনেকে এমনও মন্তব্য করেছেনে যে, ‘তার নিজেকে নিজেই হত্যা কর উচিত’।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে বসবাসরত লিজি তাকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, যারা বিশ্বাস করে না যে সুড়ঙ্গ শেষে একটি আলো আছে- এই তথ্যচিত্র তাদের আশ্বস্ত হবে। সম্প্রতি সানরাইজ পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি চাই আপনারা যেন আমাকে দেখেন। আমার লক্ষ্য ছিল যখন মানুষ এটা দেখবে তারা যেন আমার মাঝে নিজেদের অথবা তাদের বন্ধুদের অথবা তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখতে পায়।’
টেক্সাসের এই নারী জন্মকালে প্রোগেরোয়েড সিন্ড্রোম, একটি বিরল জেনেটিক ডিজঅর্ডার নিয়ে জন্মান যার ফলে জন্মগ্রহণের পর থেকেই তার চেহারা বৃদ্ধের মতো। এই রোগ তার মুখ, পেশী, স্তন, মস্তিষ্ক, হৃদয়, চোখ এবং হাড়কে প্রভাবিত করে এবং তার ওজন বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে, ফলে তার উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি হলেও ওজন মাত্র ৩০ কেজি।
তিনি বলেন, ‘যদিও তরুণ বয়স থেকেই চেহারার জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু দশ বছর আগে অনলাইনে ভিডিও প্রকাশ হওয়াটা ছিল একেবারেই ভিন্ন। এটা আমাকে ভয়াবহ একটা অনুভূতি দিয়েছিল। যে মুহূর্তে আমি সেই ভিডিওটি খুঁজে পেয়েছিলাম এবং সব মন্তব্য পড়েছিলাম, আমি মনে করি মন্তব্যকারীরা যদি সেই মুহূর্তে জানতে পারত যে, আসলে আমার অনুভূতি তখন কেমন ছিল তাহলে তারা বুঝত কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছে। আমার মন খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম। আর আমি বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে আমি এই অবস্থা থেকে নিজেকে আবার ফিরে পাব।’
তিনি জানান, এটা কাটিয়ে উঠতে তার কয়েক বছর লেগেছিল। কিন্তু অবশেষে তিনি শক্তি অর্জন করতে পেরেছিলেন ভালো কিছু করার জন্য তার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করতে। তারই ফলশ্রুতি ‘একজন সাহসী হৃদয়: লিজি ভেলাসকুয়াজ’ শিরোনামের সেই তথ্যচিত্র। এতে নিজের কথা ছাড়াও তিনি যারা এই মুহূর্তে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমি বলতে চাইছি যে, আমি মনে করি আমার সবচেয়ে বড় পরামর্শ হলো, আপনি একাই শুধু খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন না। সুড়ঙ্গ শেষে একটি আলো আছেই এবং যদি আমি এটা খুঁজে পেতে সক্ষম হই আপনিও তা পাবেন।’
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬/ফিরোজ