অন্য দুনিয়া

জাপানে বড়রাও হতে পারেন পোষ্যপুত্র

ফাতিমা রুনা : সাধারণত সন্তানহীন দম্পতি পোষ্যপুত্র বা সন্তান দত্তক নেন। পৃথিবীজুড়ে এই রীতি দেখা যায়। ব্যতিক্রম শুধু জাপানের ক্ষেত্রে। তারা শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা যুবকদেরও পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করছেন। তাও আবার একেবারেই ভিন্ন কারণে।  পোষ্যপুত্র গ্রহণের হার পৃথিবীতে সর্বাধিক বেশি জাপানে। প্রতিবছর আইন মেনে প্রায় ৮০ হাজার পোষ্যপুত্র গ্রহণ করা হয় দেশটিতে। শতকরা ৯৮ ভাগ জাপানি ২০ বা ৩০ বছরের অধিক বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ দত্তক নেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসাগুলো সে দেশে দীর্ঘ সময় ধরে পরিচালিত হচ্ছে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারসূত্রে চলা ব্যবসা হারিয়ে যাচ্ছে। তথ্য অনুসারে, পারিবারিক কোম্পানিগুলো বেশি লাভজনক। বাজারে সর্বাধিক মূল্যায়িত এবং তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের চেয়ে এদের বিক্রি বেশি। উদাহরণস্বরূপ বিশাল প্রতিষ্ঠান সুজুকি, টয়োটা বা মাতসুই সিকিউরিটিজ কোম্পানির কথা বলা যায়, যারা পারিবারিকভাবে শত বছরেরও অধিক সময় ধরে ব্যবসা করে আসছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আরো বেশি সময় ধরে সুনামের সঙ্গে টিকে আছে।  এখন প্রশ্ন হলো, পারিবারিক ব্যবসায় এমন কী রয়েছে যে, পরিবারগুলোকে প্রাপ্তবয়স্ক পোষ্যপুত্র নিতে হয়? এখানে দুটো কারণ খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে। একটি হলো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জাপান আইন পাস করে, পারিবারিক সম্পদের নেতৃত্ব পুরুষ দ্বারা চালিত হবে। সে ক্ষেত্রে প্রথম ছেলেই প্রথাগতভাবে এই দায়িত্ব নেবে। সুতরাং যে পরিবারে পুত্রসন্তান নেই, তারা সন্তান দত্তক নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে তারা শিশুদের নয়, তরুণ বুদ্ধিদীপ্ত এবং ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা আছে এমন কাউকে বেছে নেওয়ার চেষ্টা করেন যাতে বংশ সুনাম বা ঐতিহ্য বজায় থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর পরবর্তী প্রজন্ম বংশপরম্পরায় তা চালিয়ে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটি পারিবারিক ব্যবসায় ধস নামার অন্যতম কারণ। কিন্তু জাপানে আপনি হাজার বছর ধরে চলছে এমন ব্যবসার অস্তিত্ব পাবেন। উইকিপিডিয়া অনুসারে সবচেয়ে প্রাচীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচটিই পাওয়া যায় জাপানে। তাদের মধ্যে ‘কোঙ্গো গুমি’ নামের বৌদ্ধমন্দির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ৫৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পারিবারিকভাবে টিকে ছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ‘টাকামাতসু কনস্ট্রাকশন গ্রুপ’ কিনে নেয়। চেইকো ডেট একজন ঘটক। তিনি বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্ক পোষ্যপুত্র ব্যবস্থার চাহিদা রয়েছে। কারণ জাপানে জন্মহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া, শুধু কন্যাসন্তান আছে এমন পরিবার সেখানে অনেক। এবং অনেক পুরুষ রয়েছেন যারা তাদের দক্ষতা দেখাবার সুযোগ খোঁজেন করপোরেট দুনিয়ায়। পোষ্যপুত্র ব্যবস্থা তাদের সে সুযোগ করে দেয়।’ রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জানুয়ারি ২০১৭/তারা/এএন