অন্য দুনিয়া

অন্যের ইচ্ছে পূরণ করেন তিনি

ফাতিমা রুনা : আলাদিনের জাদুর চেরাগ আর তার ইচ্ছে পূরণ দৈত্যের কথা আমরা সবাই শুনেছি। যদি এমন হয়, আপনি এমন কিছু ইচ্ছে করলেন যা আপনার সাধ্যের বাইরে অথচ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তা বাস্তবায়ন হয়ে গেল। ভাবুন তো তাহলে কেমন হবে! বিল গ্রিফিন নামে লন্ডনের এক ব্যক্তি তিন বছর আগে অন্যের ইচ্ছে পূরণের জন্য একটি ওয়েবসাইট খোলেন যার নাম ‘ক্রাউড-উইশ ডটকম’। এই উদ্যোক্তা কমেডি সেন্ট্রাল নামে এক প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং ডিরেকটর হিসেবে উচ্চ বেতনের চাকরি করতেন। কিন্তু তিনি সেই চাকরি ছেড়ে দেন শুধু মানুষের ইচ্ছে পূরণ করবেন বলে। প্রতিদিন সাধারণ মানুষ তাদের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। এরপর কয়েকজন সেগুলো মূল্যায়ন করেন এবং পরবর্তীতে গ্রিফিন দিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইচ্ছেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে পূরণ করে দেন। গ্রিফিন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই ইচ্ছে পূরণের পুরো প্রক্রিয়াটি তদারকি করে থাকেন। যেখানে ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদেরকে আহ্বান করা হয় ইচ্ছে মতো কোনোকিছু চাইতে। এই সাইটে আপনার সেই ইচ্ছেটি ১০০ বা তার চেয়ে কম শব্দের মধ্যে লিখে আবেদন করতে হবে। সেই ইচ্ছে যা খুশি হতে পারে। তা যদি ওইদিন সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা পায় তবে তা তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করার ব্যবস্থা করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ বিভিন্ন পণ্য চেয়ে আবেদন করেন। বিল গ্রিফিন এ পর্যন্ত হাজারেরও বেশি ইচ্ছে পূরণ করেছেন। এ নিয়ে তিনি একটি বই লেখার কাজে হাত দিয়েছেন। যেখানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ৯৯টি ইচ্ছের কথা তিনি জানাবেন। তার এই নতুন বই লেখার আইডিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে কোনো বিশেষ গবেষণা নয় যে পৃথিবীর সবার ইচ্ছে, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের আকাঙ্খা সেখানে প্রকাশ পাবে।’ তিনি জানান, ইচ্ছে যা খুশি হতে পারে – সিরিয়ার দোকানের বিক্রিত কোনো জামা, হতে পারে দুর্লভ কোনো বই যা বিনামূল্যে কোনো স্কুলে দেয়া হবে। আমার ইচ্ছে কারো উপকারে আসতে পারে আবার নাও পারে তবুও এমন একটা ব্যবস্থা করা যাতে মানুষ তাদের ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ করতে পারে, ইচ্ছে মতো। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের ইচ্ছে প্রকাশ করছেন। এখানে সাধারণ মানুষেরা তাদের আনন্দ, হাসি, মন খারাপের কথা, মজার এবং হৃদয় ভাঙ্গা ইচ্ছের কথা জানাচ্ছেন। মজার ব্যাপার হলো, বেশিরভাব ক্ষেত্রেই মানুষ খুব সাধারণ কিছু চান, কেউ কেউ তো উড়তে আবার কেউ কেউ রায়ান গোসলিং বা অন্য কারো সাথে রাত কাটাতে ইচ্ছে পোষণ করে। কেউ চান কী করে বাবা-মার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়, কেউ কেক খেতে চান, কেউ কেউ আবার তাদের বসের সাথে ফাইট করার সাহস চান। এমনই হাজারো ইচ্ছে। জানান গ্রিফিন। এখন প্রশ্ন কী করে এটা সম্ভব? প্রথমে একটি ইচ্ছে প্রকাশ করার পরে, অন্যদের কাছে নিজ ইচ্ছের পক্ষে সমর্থন চেয়ে পাঠাতে হবে। ফেসবুক, টুইটার বা অন্য কোনো মাধ্যমে অন্যরা সেই ইচ্ছের প্রতি তাদের সমর্থন জানাবেন ‘মি টু’ অর্থাৎ ‘আমিও’ লিখে। যাতে ওই ইচ্ছেটি পূরণ করার জন্যে যথেষ্ট সমর্থন পায়। প্রতি ২৪ ঘণ্টা পরপর সবথেকে জনপ্রিয় ইচ্ছে ওয়েব সাইট থেকে বিলি গ্রিফিনের বিশেষজ্ঞ টিম বেছে নেয়। তবে খুব সহজেই যে ইচ্ছেগুলো পূরণ হয় তা কিন্তু নয়। ক্লান্তিহীন কাজ করতে হয় ইচ্ছে মেটাতে। কখনো কখনো নির্ধারিত পণ্য বা কিছুর দাম কমাতে বা কিনতে অন্যের অযাচিত সাহায্য বা বিশেষ অভিজ্ঞতার দরকার হয়। এ বিষয়ে বিল বলেন, ‘ইস্টার উইকেন্ডে কেউ ইচ্ছে করল বয়স্ক কাউকে অবাক করে দিতে চায়। সেই ব্যক্তিকে সহায়তা করতে আমি এবং আমার গার্লফ্রেন্ড ৭৫০টি ড্যাফোডিল ফুল, ৪০টি টিউলিপ নিয়ে কাঙ্ক্ষিত বাড়িতে রেখে এসেছিলাম। তিনি হয়তো আনন্দিত হবার পাশাপাশি একটু অবাকও হয়েছিলেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘একবার এক বৃদ্ধ নারী ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে সব হারিয়ে ইচ্ছে পোষণ করলেন সব ফেরত পাবার। বয়স্ক এই নারীর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি তার সেই পেনশনের হ্যান্ডব্যাগ, ভেতরের জিনিস আর ১০০ পাউন্ড নগত রেখে তার ইচ্ছে পূরণ করেছিলাম।’ ‘একবার কিছু মানুষ ইচ্ছে করল, বোকো হারামের দ্বারা অপহৃত স্কুলের মেয়েদের উদ্ধারে নাইজেরিয়ার সরকার আরো কিছু করুক। আমি নাইজেরিয়ার হাই কমিশন বরাবর ১৮০টি মেয়ের নাম লিখে আলাদা আলাদা করে ১৮০টি চিঠি লিখি।’ বলেন তিনি। এই ইচ্ছে পূরণ প্রজেক্ট পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে এবং প্রত্যেকের ইচ্ছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৭/মারুফ