অন্য দুনিয়া

বর্ণমালার স্মৃতিস্তম্ভ

মোখলেছুর রহমান : আর্মেনিয়ার আর্টাশাভান গ্রামে হাইওয়ের পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্মৃতিস্তম্ভ। অন্য স্মৃতিস্তম্ভগুলো থেকে এগুলো একটু ব্যতিক্রম। কারণ এগুলো ৩৯টি বিশাল আকারের আর্মেনিয়ান ভাষার বর্ণের স্মৃতিস্তম্ভ। আর্মেনিয়ান ভাষাভাষি মানুষদের উদ্দেশ্যে এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো উৎসর্গ করা হয়েছে। আর্মেনিয়ান বর্ণমালা ১৬০০ বছরেরও অধিক পুরোনো। কিন্তু এখনো এটি তার মূল আদলেই  ব্যবহৃত হচ্ছে। আর্মেনীয়রা যেন বাইবেল পড়তে পারে এবং খ্রিস্টধর্ম ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ৪০৫ খ্রিস্টাব্দে সেইন্ট মেসরপ মাশতুত নামের একজন আর্মেনীয় ভাষাতত্ত্ববিদ এবং যাজক সর্বপ্রথম এই বর্ণমালার প্রচলন করেন।  ৪০৫ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে আর্মেনীয়দের নিজস্ব কোনো বর্ণমালা ছিল না এবং এর পরিবর্তে তারা তখন গ্রিক ফার্সি এবং সিরীয় বর্ণমালা ব্যবহার করত, কিন্তু সেগুলো তাদের মাতৃভাষার জন্য অনেক জটিল হতো। মেসরপ মাশতুত  সর্বপ্রথম বর্ণমালা উদ্ভাবনের মাধ্যমে আর্মেনীয়দের এই জটিল সমস্যার সমাধান করেন। আর্মেনিয়ার রাজার সহায়তায় তিনি প্রথমে ছত্রিশটি  অক্ষরের একটি সেট তৈরি করেন এবং পরবর্তীতে আরো তিনটি বর্ণ যোগ হয়। ফলে মোট অক্ষরের সংখ্যা দাঁড়ায় ঊনচল্লিশ। নতুন বর্ণমালা উদ্ভাবনের পর মেসরপ আর্মেনিয়ার সর্বত্র বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে আর্মেনীয় ভাষাতেই শিক্ষা দান শুরু হয়। ৪০৫ খ্রিস্টাব্দে এই বর্ণমালার উদ্ভাবন আর্মেনীয় সাহিত্যের জন্ম দেয় এবং আর্মেনিয়ান জাতীয় সংহতির একটি গঠনমূলক শক্তিশালী ফ্যাক্টর প্রমাণ করে। এটা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে এই নতুন বর্ণমালা আবিষ্কৃত না হলে আর্মেনীয়রা সহজেই পারস্য ও সিরীয় দ্বারা শোষিত হতে পারত এবং  এতদিনে আর্মেনীয় প্রাচীন সংস্কৃতি উধাও হয়ে যেত। প্রকৃতপক্ষে এই বর্ণমালা আর্মেনীয় সংস্কৃতি ও নিজস্ব পরিচিত মূল মাপকাঠি হয়ে ওঠে। ২০০৫ সালে আর্মেনীয় বর্ণমালার ১৬০০ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে যিনি এই বর্ণমালা উদ্ভাবন করেছিলেন তিনি যেখানে চিরনিদ্রায় শায়ীত হয়ে আছেন তার কাছাকাছি স্থানে এই স্মৃতিস্তম্ভগুলো স্থাপন করা হয়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ মার্চ ২০১৬/মারুফ