অন্য দুনিয়া

আবর্জনার দ্বীপ

গোবিন্দ তরফদার : মনোরম দ্বীপ দেশ মালদ্বীপ। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত গ্রীষ্মপ্রধান একটি দ্বীপরাষ্ট্র এটি। নীল-সবুজ রঙের পানি এবং বিশাল বালুময় সমুদ্রসৈকতের জন্য সারা বিশ্বে পর্যটনের জায়গা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখ পর্যটক যায় দেশটিতে। এ ছাড়া তাদের নিজেদেরই রয়েছে প্রায় ৪ লাখ স্থায়ী বাসিন্দা। ফলে প্রতিবছর শত শত টন ময়লা-আবর্জনা জমা হয়ে থাকে। কিন্তু যেখানে তাদের নিজেদেরই বাসস্থানের সংকট রয়েছে, সেখানে তারা এসব আবর্জনার স্তূপ কী করবে? মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে পশ্চিমে কয়েক মাইল দূরেই অবস্থিত বিশ্বের কয়েকটি জনবহুল এলাকাগুলোর একটি, থাইলাফুশি। এটি মালদ্বীপের মিউনিসিপ্যালের অন্তর্গত একটি ভাগাড়। তবে থাইলাফুশি শুরু থেকে আবর্জনার স্তূপ ছিল না। এমনকি এটা দ্বীপও ছিল না। এখন থেকে পঁচিশ বছর আগে, থাইলাফুশি একটি প্রাচীন হ্রদ ছিল। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে পর্যটনশিল্পের ফলে সৃষ্ট আবর্জনাগুলোকে স্থানান্তরের জন্যে এটিকে ভাগাড় হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এক মাসের মধ্যে ময়লা-আবর্জনা সেখানে পৌঁছাতে শুরু করে। সেখানে বড় বড় গর্ত করা হয়। আর তাতে ফেলা হয় রাজধানী মালে ও অন্যান্য এলাকা থেকে আসা ময়লা-আবর্জনা। দুই স্তরে এই গর্তগুলো ভরাট করা শুরু হয়। প্রথম স্তরে দেওয়া হয় নির্মাণাধীন ধ্বংসাবশেষ। আর এর ওপরে দেওয়া হয় সাদা বালুর স্তর।

দিন দিন বড় হতে থাকে থাইলাফুশির ভূখণ্ড। কারণ সরকার নৌকা বানানোর কোম্পানি, সিমেন্ট প্যাকেজিং, মিথেন গ্যাস বোতলজাতকারী কোম্পানি এবং বিভিন্ন বড় বড় ওয়ারহাউসকে ইজারা দিতে শুরু করে। বর্তমানে থাইলাফুশিতে ৩৬টিরও বেশি কোম্পানি রয়েছে, একটি মসজিদ আছে এবং ১৫০ জন বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্যে বাসস্থানও আছে। এই ১৫০ জন মানুষই, এই দ্বীপে আসা প্রতিদিনের প্রায় ৩৩ হাজার টন আবর্জনা স্থানান্তরের কাজ করে থাকে। এর ফলে এই দ্বীপ প্রতিদিনই এক বর্গমিটার করে বাড়ছে। এই আবর্জনা মালদ্বীপ সরকারের মাথাব্যথার বড় কারণে পরিণত হয়ে যায়। তাই তারা ২০১১ সালে থাইলাফুশিতে ময়লা ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এখন তারা কিছু ময়লা পরিশোধনের জন্য ভারতে রপ্তানি করছে। কিন্তু এখন প্রায়ই কিছু কিছু ময়লা-আবর্জনা সরাসরি সমুদ্রে ফেলা হচ্ছে। এতে করে সমুদ্রের পানিসহ আশপাশের এলাকা দূষিত হচ্ছে এবং সেই সাথে মালদ্বীপের সৈকতও দূষিত হচ্ছে। পরিবেশবিদরা এতে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। কিন্তু কিছু মাঝি-মাল্লারা এই কাজটি  করে যাচ্ছে। কারণ পুরো ময়লা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের জন্য প্রায় সাত ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হয়। তাই তারা সরাসরি সমুদ্রের পানিতে ময়লা ফেলে চলে যায়। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ মার্চ ২০১৭/মারুফ/এএন