অন্য দুনিয়া

বেঁচে থাকার লড়াই

শাহিদুল ইসলাম : বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে কত কিছুই না করতে হয়। কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য কাউকে নিয়মিত ট্রায়াথলনের মতো শ্রমসাধ্য খেলায় অংশ নিতে হবে এরকম ঘটনা বিরল। কিন্তু এই শ্রমসাধ্য কাজটিই নিয়মিত করতে হচ্ছে দ্বীপ রাষ্ট্র মালটার সাত বছরের শিশু জ্যাক ভিলাকে। কিন্তু কেন তাকে নিয়মিত এটি করতে হচ্ছে? এ বিষয়ে শিশুটির বাবা-মা মালটা ইন্ডিপেনডেন্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান এক বেদনাদায়ক কাহিনি। ২০১৪ সালে ছোট্ট জ্যাকের বয়স যখন মাত্র চার বছর তখন তারা জ্যাকের শারীরিক গঠনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করেন। তারা দেখতে পান মাত্র ছয় মাসে জ্যাকের ওজন বেড়েছে ২০ পাউন্ডের বেশি ( ১পাউন্ড= ৪৫৩ গ্রাম)। সন্তানের  এই অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধিতে চিন্তিত হয়ে পড়েন তারা।

জ্যাককে নিয়ে তারা হাজির হন দেশের নামকরা শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, রোহহাড (র‌্যাপিড-অনসেট ওবেসিটি উইথ থাইপোথ্যালামিক ডিসফাংশন, হায়পোভেন্টিলেশন অ্যান্ড অটোমিক ডিসরেগুলেশন) নামের একটি বিরল রোগে আক্রান্ত জ্যাক। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর দেহে তাপমাত্রা ও পানি সংরক্ষণ ক্ষমতা কমে যায় এবং তার ওজন কোনো রকম খাবার দাবার ছাড়াই অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। সারা বিশ্বে বিরল এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুব বেশি নয় এবং রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই কম। তবে চিকিৎসক পরামর্শ দেন যদি কোনো উপায়ে জ্যাকের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে তার সুস্থ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কীভাবে জ্যাকের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখবেন এই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েন ভিলা দম্পতি। অনেক ভেবে চিন্তে তারা জ্যাককে ট্রায়াথলনে অংশ নেওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কারণ সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়, তিন ডিসিপ্লিনের সম্মিলিত এই খেলা অত্যন্ত শ্রমসাধ্য। ফলে ওজন কমাতে মহাষৌধের মতো কাজ করে এটি। এরপর থেকে নিয়মিত ট্রায়াথলন ইভেন্টে অংশ নেয় জ্যাক। ফলাফল মিলেছে হাতেনাতে। ওজন এসেছে নিয়ন্ত্রণে। আগের তুলনায় বেশ সুস্থ আছে সে। তবে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ছোট্ট জ্যাক স্বপ্ন দেখে একদিন সে যুক্তরাজ্যের ট্রায়াথলন তারকা জনি ব্রাউনলির মতো হবে।  ট্রায়াথলনে অলিম্পিক শিরোপা জিতবে। রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ এপ্রিল ২০১৭/মারুফ/ফিরোজ