অন্য দুনিয়া

প্রিয় ট্রাক কবর দিলেন কৃষক

শাহিদুল ইসলাম : শিরোনাম পড়ে অনেকেই হয়তো কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন। কারণ ট্রাকের মতো যন্ত্রকে আবার মানুষ কবর দিতে যাবে কেন? বরং পুরাতন হয়ে গেলে এ ধরনের জিনিস সবাই বিক্রি করে দেয়। তবে কিছু কিছু যন্ত্র তার জড় সত্ত্বা ছাপিয়ে মালিকের কাছে হয়ে উঠে ব্যক্তি মানুষের প্রতিচ্ছবি। যেমন অ্যালসিডেস রাভেলের ট্রাকের কথাই ধরুন। উরুগুয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চালের মেলো শহরের বসিন্দা এই কৃষক তার ট্রাকটি কিনেছিলেন ১৯৬৯ সালে। তখন তার বয়স ছিল ৩৫ বছর। যৌবন পেরিয়ে তিনি এখন আশি বছরের বৃদ্ধ। দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাকটি তাকে জমি চাষ, পণ্য পরিবহণ থেকে শুরু নানা রকমের কাজে সহায়তা করেছে। গত ৪৮ বছর অ্যালসিডেস রাভেল ও তার পরিবারকে সেবা দিয়ে ট্রাকটি এখন ভাঙা একটি যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। উরুগুয়ের এল পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যালসিডেস বলেন, ‘এখন পুরোনো হলেও দীর্ঘ সময় ট্রাকটি আমাকে সেবা দিয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করেই আমি আমার সন্তানদের প্রতিপালন করেছি। অনেক জমি কিনেছি। আমি যখন ট্রাকটি কিনেছিলাম তখন মেলো শহর থেকে মন্টেভিডিওতে (উরুগুয়ের রাজধানী) যাওয়ার জন্য বিকল্প যানবাহন খুব কম ছিল। ফলে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথ আমি এটি ব্যবহার করেই পণ্য পরিবহণ করেছি। মাঝে মাঝে এমন হতো দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার এই রাস্তায় একমাত্র এই ট্রাকটিই আমার সঙ্গী ছিল। এর উপর আমি খাওয়া-ঘুম সবই সেরে নিতাম।’ যে ট্রাক অ্যালসিডেস রাভেলের এতো এতো উপকার করেছে সেই ট্রাক তিনি কীভাবে বিক্রি করে দিবেন? ফলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এফ-৩৫০ মডেলের ট্রাকটি মানুষের মতো করেই কবর দিবেন। সম্প্রতি তিনি ট্রাকটি কবর দেন। কবর দেওয়ার সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অ্যালসিডেসের স্ত্রী এই ঘটনায় এতোটাই আবেগতাড়িত হয়েছিলেন যে তিনি ওই সময়ে সেখানে হাজির হননি। ট্রাক কবর দেয়ার এই অস্বাভাবিক ঘটনার একটি ভিডিও মেলো শহরের স্থানীয় দৈনিক হেলভেশিয়া ডায়েরিও তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেন। ইতিমধ্যে হাজার দশেক মানুষ ভিডিওটি দেখেছেন। অনেকেই অ্যালসিডেসের এমন ভালোবাসার নিদর্শনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মে ২০১৭/মারুফ/ফিরোজ