অন্য দুনিয়া

তিরিশ বছর পর ইতালির যে গ্রামে শিশু জন্মালো

ইতালির আব্রুজ্জো অঞ্চলের গিরিফালকো পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত প্রাচীন গ্রাম পাগলিয়ার দেই মার্সি।গ্রামের সংকীর্ণ গলিপথে বিড়ালেরা অবাধে ঘোরাফেরা করে, ঘরের ভেতরে-বাইরে যাতায়াত করে, আবার পাহাড়ঘেঁষা দেয়ালের ওপর আরাম করে শুয়ে থাকে। বলা হয় গ্রামে মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যা বেশি। 

চলতি বছরের মার্চে গ্রামটিতে ঘটেছে এক বিরল ঘটনা। এখানে একটি শিশুর জন্ম হয়েছে। প্রায় তিন দশকের মধ্যে এই প্রথম পাগলিয়ার দেই মার্সিতে কোনো শিশুর জন্ম হলো।শিশুর নাম লারা বুস্সি ত্রাবুক্কো। লারাসহ গ্রামের মোট জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ২০ জনে।

লারার জন্ম পুরো গ্রামের মানুষের মনে আনন্দ এনে দিয়েছে। এখন লারাই গ্রামের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।লারার মা চিনজিয়া ত্রাবুক্কো বলেছেন, ‘‘যারা পাগলিয়ার দেই মার্সির নামই আগে শোনেনি, তারাও শুধু লারার কথা শুনে এখানে আসছেন। মাত্র নয় মাস বয়সেই সে এখন একপ্রকার বিখ্যাত।”

লারার আগমন একদিকে যেমন আশার প্রতীক, অন্যদিকে তেমনি এটি ইতালির ক্রমশ গভীর হতে থাকা জনসংখ্যাগত সংকটের এক নির্মম স্মারক।

জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইস্তাত এর তথ্য অনুযায়ী, ‘‘২০২৪ সালে ইতালিতে জন্মের সংখ্যা নেমে এসেছে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। এটি টানা ১৬ বছর ধরে চলা নেতিবাচক প্রবণতার ধারাবাহিকতা। একই সঙ্গে, প্রজনন হারও রেকর্ড সর্বনিম্নে নেমেছে। ২০২৪ সালে সন্তান ধারণের বয়সী নারীদের মধ্যে গড়ে ১.১৮টি সন্তান জন্মেছে, যা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম সর্বনিম্ন হার।’’

এই পতনের পেছনে রয়েছে নানা কারণ—

চাকরির অনিশ্চয়তা

তরুণদের ব্যাপক দেশত্যাগ

কর্মজীবী মায়েদের জন্য পর্যাপ্ত সহায়তার অভাব

এবং পুরুষদের বন্ধ্যত্বের হার বৃদ্ধি

এর পাশাপাশি, অনেক মানুষই এখন সচেতনভাবেই সন্তান না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ইস্তাতের ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসের প্রাথমিক তথ্য বলছে, জন্মহার আরও কমেছে। ইতালির ২০টি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা গেছে আব্রুজ্জোতে—যে অঞ্চলটি আগেই ছিল জনবিরল। জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের মধ্যে সেখানে জন্মের সংখ্যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় ১০.২ শতাংশ কমেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান