অন্য দুনিয়া

নড়াইলে অভিনব পন্থায় ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ!

ফরহাদ খান, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়ায় অভিনব পন্থায় গাছ রক্ষার নামে সদস্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। রূপালী হেলথ কেয়ার অ্যান্ড এভিভি ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও লোহাগড়া পৌরসভাসহ ১২টি ইউনিয়নে ৩৫-৪০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ করার চেষ্টা চলছে।

 

প্রতি সদস্যের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা করে। বলা হচ্ছে- ওই সদস্যের যে কয়টি গাছ (অনূর্ধ্ব ৩০টি) আছে, তার প্রত্যেকটির জন্য প্রতিবছর ১৫০ টাকা করে ১০ বছর ধরে দেওয়া হবে। এভাবে এনজিওটি তাদের আওতায় ১০ লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নেবে।

 

এই এনজিওটির বৃক্ষরোপণের ওপর কোনো কর্মসূচি নেই। মালিকের লাগানো গাছই টাকার বিনিময়ে সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গাছ সুরক্ষার এ কার্যক্রম চলছে। সদস্যপ্র্রতি ৫০ টাকা করে আদায় করায় প্রায় ৪০ হাজার সদস্যের কাছ থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হবে। আর গাছের মালিকদের গাছপ্রতি ১৫০ টাকা করে সর্বোচ্চ ৩০টি গাছের জন্য বছরে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এভাবে ১০ বছর ধরে সদস্যদের এ টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে ১০ বছরে প্রতি সদস্যকে (গাছমালিক) ৪৫ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এক বছরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার সদস্যকে দিতে হবে প্রায় ১৮ কোটি টাকা, আর ১০ বছরে প্রায় ১৮০ কোটি টাকা।

 

লোহাগড়া উপজেলার লক্ষ্মীপাশা চৌরাস্তার পাশে অফিস নিয়ে গত তিন মাস ধরে ‘রূপালী হেলথ কেয়ার অ্যান্ড এভিভি ফাউন্ডেশন’ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ‘পরিবেশ উন্নয়নে গাছপালা’- এমন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয় ঢাকার গুলশানে অবস্থিত উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কর্মীদের নিয়োগপত্রে ও অফিসের কাগজপত্রে ঢাকার রামপুরা এবং প্রচারপত্রে ঢাকার উত্তরার ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। 

 

লোহাগড়া উপজেলার মঙ্গলহাটা গ্রামের গাছমালিক আফজাল হোসেন জানান, ৩০টি গাছের জন্য ৫০ টাকা দিয়ে রূপালী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের সদস্য হয়েছেন। প্রতিবছর গাছপ্রতি ১৫০ টাকা পাবেন বলে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।

 

কুন্দশী এলাকার রেবেকা বেগম, রিনিয়া খানম ও রুসনি বেগমসহ অন্য সদস্যরা জানান, এ কার্যক্রম তাদের কাছে খানিকটা অবাস্তব মনে হলেও এলাকার মেয়েরা কর্মী হিসেবে কাজ করায় তাদের ওপর বিশ্বাস করে সদস্য হয়েছেন।

 

রূপালী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের কর্মী সুমি খানম জানান, গত ডিসেম্বর মাসে প্রচার-প্রচারণা চালানো হলেও এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে সদস্যপ্রতি ৫০ টাকা করে নিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। একজন কর্মীকে তিন মাসে ৭০০ সদস্য সংগ্রহ করতে হবে। লোহাগড়ার প্রতিটি ইউনিয়নে পাঁচ থেকে ছয়জন কর্মী এবং একজন করে সুপারভাইজার রয়েছেন। ফাউন্ডেশনের অপর কর্মী মুক্তাসহ অন্যরাও একই ধরনের কথা বলেছেন। ১ হাজার টাকা জামানত দিয়ে মাসিক ৩০০০ টাকা বেতনে চাকরি নিয়েছেন তারা। তাদের বলা হয়েছে, তিন মাস পর মাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়া হবে।

 

এ ব্যাপারে যশোর বন বিভাগের উপবনসংরক্ষক মইনুদ্দিন খান বলেন, এ ধরনের প্রকল্পের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা তার কাছে নেই। তাই কাউকে এ কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

 

ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান মিয়া বলেন, এ কার্যক্রমের বিষয়ে তিনি অবগত নন। কেউ যাতে প্রতারিত না হয়, সে ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করেছেন। 

 

কার্যক্রমের অনুমোদন আছে কি না- জানতে চাইলে রূপালী হেলথ কেয়ার ফাউন্ডেশনের লোহাগড়া উপজেলা সমন্বয়ক এ বি এম আরিফ-উদ-দৌলা জানান, তার কাছে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না থাকলেও ঢাকার অফিসে আছে।

 

৩০টি গাছের জন্য সদস্যপ্রতি বার্ষিক সাড়ে ৪ হাজার টাকা দেওয়া প্রসঙ্গে আরিফ-উদ-দৌলা বলেন, ফান্ড পাওয়া গেলে সদস্যদের টাকা দেওয়া হবে। ফান্ড না পাওয়া  গেলে তাদেরও ক্ষতি, সদস্যদেরও ক্ষতি হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আপাতত সদস্য ফি থেকে জোগাড় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

লোহাগড়া এলাকার ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম দাবি করেন, কাউকে জোর করে সদস্য করা হয়নি, তারা স্বেচ্ছায় ৫০ টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছেন।

 

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোকতার হোসেন জানান, জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সেবামূলক কাজের অনুমোদন কখনো দেওয়া হয় না।

 

নড়াইল জেলা প্রশাসক আব্দুল গাফফার খান বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

     

রাইজিংবিডি/নড়াইল/২২ মার্চ ২০১৫/ফরহাদ/বকুল/কমল কর্মকার