বাবা দিবস _x

পিছলা ভূত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ‘ভূত’ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার ডাঙ্গি, কোহিনূর, উত্তর মহাকালগুড়ি, শালধূরা ও ইন্দিরা কলোনিসহ শামুকতলার গ্রামগুলোতে। সন্ধ্যা নামতেই ঘরে ঢুকে যাচ্ছে শিশু, নারী-কিশোর-কিশোরী। আর পুরুষরা লাঠি বল্লম, দা, কুড়াল হাতে গোটা গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন।

 

সেই ‘ভূতে’র নামও দেওয়া হয়েছে- পিছলা ভূত। সে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। রাতের অন্ধকারে বাড়ির মহিলারা ঘরের বাইরে বের হলেই তাদের জাপ্টে ধরছে সে। চিৎকার শুনে বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীরা ছুটে এসে ধরার চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। ‘ভূতে’র গা এতটাই পিচ্ছিল যে ধরতে গেলেই পিছলে পালিয়ে যাচ্ছে। ওই ভূতের থেকে বাঁচতে তান্ত্রিকের কাছেও ছুটছেন অনেকে। তান্ত্রিকের দেওয়া জল পড়া, তেল পড়া বাড়ির চারপাশে ছিটিয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ পূজা অর্চনাও শুরু করে দিয়েছেন। আবার অনেকে গ্রামে পুলিশি টহলের দাবি জানাতে থানায় ছুটছেন।

 

পিছলা ভূতের প্রথম দেখা মেলে গত শনিবার কোহিনূর চা বাগান লাগোয়া ডাঙ্গি নতুন কলোনিতে। নিমাই বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে। নিমাইবাবু অন্য রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। স্ত্রী অনিমাদেবী দুই সন্তান ও বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে বাড়িতে একা থাকেন। অনিমাদেবীর বলেন, ‘রাত ৯টার মধ্যে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ি। ১১টা নাগাদ বাইরে বের হই। অন্ধকারে যেতেই কালো কুচকুচে একটি ছায়া আমাকে জাপ্টে ধরে। আমি ঝটকা দিয়ে ছাড়িয়ে চিৎকার করে সেটিকে ধরে ফেলি। কিন্তু সেটির শরীর এতটাই পিচ্ছিল যে কোনোভাবে ধরে রাখতে পারিনি। প্রতিবেশীরা ছুটে আসার আগেই পালিয়ে যায় সেটি। এখনও সে মুহূর্তের কথা ভাবলে গায়ের রক্ত ঠান্ডা হিম হয়ে যায়।’

 

পরের দিন তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। ওই গ্রামের এক বাসিন্দার ১৭ বছরের মেয়ে পাশের বাড়ি থেকে টিভি দেখে ফেরার সময় পিছলা ভূত তাকে টেনে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী এক যুবক সেটিকে ধরেও ফেলে। কিন্তু একইভাবে পিছলে পালিয়ে যায় সেটি।

 

শামুকতলা বস্তির এক বধূ রাতে কলের পাড়ে বসে বাসন মাজছিলেন। তার মুখ চাপা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পিছলা ভূত। ওই বধূর কথায়, ‘বিশাল দেহটি আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ায় প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। পর মুহূর্তে গায়ের জোরে নিজেকে ছাড়িয়ে ওই বিশাল দেহটি জাপ্টে ধরি। কিন্তু এতটাই পিচ্ছিল দেহ যে মুহূর্তে হাত পিছলে ছুটে অন্ধকারে মিশে গেল সেটি। এ ছাড়াও আরও অন্তত পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে।’ কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে সে সব কথা প্রকাশ্যে আনছেন না তারা।

 

গ্রামের লোক বুঝতে পেরেছেন, এটা কোনো দুষ্ট লোকের কাজ। এই ঘটনাগুলির সঙ্গে যে ভূত-প্রেতের কোনও ব্যাপার নেই সে ব্যাপারে গ্রামবাসীদের সচেতন করতে আসরে নেমেছে পুলিশ। গ্রাম পঞ্চায়েত ও রেওয়াজ নামে একটি সংস্থাও কাজ শুরু করেছে। কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মাইকে প্রচার শুরু হয়েছে।

 

কোহিনূর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রেশমা দাস বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যেভাবে ভূতআতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সেটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা কোনো এক বা কয়েকজন দুষ্ট লোকের কাজ। গায়ে তেল মেখে অপকর্ম করতে আসছে, যাতে কেউ ধরে ফেলতে না পারে।  এটা যে ভূত নয় সেটা বোঝাতে প্রচার শুরু করা হয়েছে। আমরা পুলিশকে বলেছি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য।’

 

শামুকতলা থানার ওসি এলপি ভুটিয়া বলেন, ‘আমরা কয়েকটি গ্রাম থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। তদন্ত শুরু করা হয়েছে। রাত টহল বাড়ানো হয়েছে।’

 

সূত্র : আনন্দবাজার

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুন ২০১৬/শাহেদ