বাবা দিবস _x

খাওয়াতে ইঁদুর, উপহার দিতেও ইঁদুর

তৈয়বুর রহমান : বিছানায় যাওয়ার আগে আপনি নিশ্চয়  খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন কোনো খাবার পড়ে আছে কি না, মেঝেতে কিংবা খাবার টেবিলে। নইলে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যেতে পারে আপনার অনাকাঙ্খিত অতিথির আগমনে।

 

তাদের কিচ কিচ শব্দে মেজাজ খারাপ হয়ে যেতেই পারে। অতি তুচ্ছ মনে করতে পারেন প্রাণীটিকে। কিন্তু পৃথিবীর কোনো কোনো জায়গায় এই ইঁদুর আক্ষরিক অর্থেই সুস্বাদু খাবার।

 

উত্তর-পূর্ব ভারতের পার্বত্য এলাকায় বহুকাল থেকে বসবাস করছে অদি নামের এক উপজাতি। প্রতিবছর ৭ মার্চ তারা আয়োজন করে থাকে চমকপ্রদ একটি উৎসবের। রান্না করা হয় সুস্বাদু সব খাবার। সবার নজর থাকে রান্না ঘরের দিকে। কখন রান্না করা হবে ইঁদুর দিয়ে নানা পদের তরকারি। এর মধ্যে আবার প্রধান আকর্ষণ ইঁদুরের পাকস্থলি ও যকৃতের সঙ্গে লেজ ও পা মিশিয়ে সেদ্ধ করা তরকারির দিকে। পরিবেশনের পর তা খাওয়া হয় লবন, আদা ও মরিচ দিয়ে।

   

এই উপজাতির লোকজন সব ধরনের ইঁদুর পছন্দ করে। বাড়িতে পালন করা ইঁদুর থেকে শুরু করে বন্য ইঁদুর, কোনো কিছুই বাদ দেয় না তারা।

 

বন্য ইঁদুর প্রধানত বনজঙ্গলে বসবাস করে থাকে বলে উল্লেখ করে ফিনল্যান্ডের ওউলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভিক্টর বেনো মেয়ার-রোশৌ বলেন, বিশেষ করে, ইঁদুরের লেজকে তারা মনে করে থাকে অত্যন্ত সুস্বাদু।

 

মেয়ার-রোশৌ জানান, এ পর্যন্ত যত মাংস তারা খেয়েছে তার মধ্যে ইঁদুরের মাংসই সবচেয়ে উত্তম ও সুস্বাদু বলে তারা জানান। আমাকে জানানো হয় যে, ইঁদুর ছাড়া কোনো পার্টি হতে পারে না। কোনো গুরত্বপূর্ণ অতিথি বা আত্মীয়কে খাওয়াতে চান? ইঁদুর লাগবে। খাদ্য তালিকায় ইঁদুর না থাকলে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করাই সম্ভব হয় না।’

   

‘খাবার হিসেবে ইঁদুর প্রিয় তো বটেই, কখনো কখনো তার চেয়ে বড় কিছু। বাপের বাড়ি ছেড়ে স্বামীর বাড়ি যাওয়ার সময় মরা ইঁদুর উপহার দেওয়া হয় কনের আত্মীয়-স্বজনকে।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘বড়দিনের সকালে আপনি যেমন আপনার ছেলে-মেয়েদের খেলনা উপহার দিয়ে থাকেন, ঠিক তেমনি ৭ মার্চের উৎসবের প্রথমদিন ছেলেমেয়েরা পেয়ে থাকে দুটো মরা ইঁদুর।’

 

মেয়ার-রোশৌ বলেন, ‘এটি আসলে তাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। বহু প্রাণী যেমন হরিণ, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি অহরহ তাদের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কিন্তু তাদের পছন্দ ইঁদুরের মাংস। তারা আমাকে নিশ্চিত করেছে যে, কোনোকিছুই ইঁদুরের মাংসের স্বাদকে হারাতে পারবে না।’

   

মেয়ার-রোশৌ আসলেই একজন নিরামিষ ভোজী মানুষ। মাছ, মাংস খান না অনেকদিন ধরে। কিন্তু তাদের কথা শুনে অত্যন্ত কৌতুহলী হয়ে ওঠেন তিনি। জানতে চান কেমন লাগে ইঁদুরের মাংস খেতে। একদিন খেলেনও।

 

খেয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য মাংসের মতো লাগে ইঁদুরের মাংস খেতে। তবে গন্ধ কিছুটা অন্য রকম।’

 

শুধু ভারতের অদি উপজাতির খাদ্য তালিকায় নয়, পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও ইঁদুর খেকো মানুষের অভাব নেই। অপ্রচলিত খাবার যারা খেয়ে থাকেন, তাদের সন্ধানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যান ব্রিটিশ টেলিভিশন উপস্থাপক স্টেফান গেটস। ক্যামেরুনে একটি শহরের বাইরে ছোট্ট একটি খামারে গিয়ে তিনি দেখতে পান সেখানকার লোকজনও ইঁদুর খুব পছন্দ করে।

 

গেটস জানান, মুরগি কিংবা শাক-সবজির চেয়ে দাম বেশি বলে সেখানকার ইঁদুরগুলোকে খুব আদর-যত্ন করে রাখা হয়।

   

ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র বিহার রাজ্যে দলিতদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কাটান গেটস। সেখানে তিনি বেশ কিছু লোকের সঙ্গে সময় কাটান। স্থানীয় লোকজন তাদের ইঁদুর খেকো বলে ডাকে।

 

ইঁদুরের মাংসের স্বাদ সম্পর্কে গেটস বলছেন, ছোট ছোট ইঁদুরগলোর মাংস খুবই নরম ও খেতে খুব ভালো, ঠিক যেন মুরগি ও কোয়েল পাখির মাংস।

 

পৃথিবীর আরো অনেক দেশে ইঁদুর খাওয়ার প্রচলন আছে। শুনলে অবাক হতে হয়, ইঁদুর খাওয়া হতো যীশুখ্রিষ্টের জন্মের অনেক আগে থেকে। চীনে তাং রাজবংশের শাসনামলেও (৬০৮-৯০৭) ইঁদুর খাওয়ার প্রচলন ছিল।

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ জুন ২০১৬/এসএন