বাবা দিবস _x

পোকেমন ভয়ংকর : পা পড়ছে মাইনে

তৈয়বুর রহমান : ‘ভাই, আমার ছেলেটাকে কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। সারাদিন শুধু মোবাইল টেপে, আর মোবাইল টেপে,’ সহকর্মীর গলায় বিরক্তি।বললাম, ‘অবশ্যই গেমস।’সহকর্মী বললেন, ‘আরে, আর বলবেন না; খাওয়ার টেবিলে তাকে বসানোই যায় না। বসলেও শুধু মোবাইল টেপে। খায়ও না ঠিক মতো।’কথা আর বাড়ালাম না, আবার কাজে মনোনিবেশ করলাম। মনে মনে ভাবলাম- শুধু সহকর্মীর ছেলেরই এ অবস্থা নয়, সারা দেশেরই চিত্র একই রকম। ভুল বললাম, সারা দেশের নয়, বলা উচিত ছিল সারা বিশ্বের।

বসনিয়ায় লড়াই, হানাহানি শেষ হওয়ার কুড়ি বছর হয়ে গেল প্রায়। বসনিয়ায় মাইন অপসারণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, প্রায় এক লাখ কুড়ি হাজার মাইম এখনো ইতস্তত বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দেশটিতে।

 

যুদ্ধ শেষ হওয়ার কুড়ি বছর পর, গত বছর সেখানে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পড়ে থাকা স্থল মাইনের বিষ্ফোরণে মারা গেছে কমপক্ষে ছয় হাজার মানুষ। তাদের বেশিরভাগই কিশোর ছেলেমেয়ে।‘পোকেমন গো’ খেলতে খেলতে কিশোর-কিশোরীরা ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে, যে ভুলে যাচ্ছে রিয়াল ওয়ার্ল্ডের কথা। স্মার্টফোন ব্যবহার করে রিয়াল ওয়ার্ল্ডের মনস্টার খুঁজতে গিয়েই ঘটছে বিপত্তিটা। বাবা-মায়ের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছে তারা বহু দূরে। কখনো কখনো পা পড়ে যাচ্ছে স্থল মাইনের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে বিষ্ফোরণ। তারপর যা ঘটার তা ঘটছে।মাইন অপসারণের কাজে নিয়েজিত স্বেচ্ছাসেবী বসনিয় সংস্থা ‘পোসাভিনা বেজ মিনা’ সাবধান করে দিয়েছে পোকেমন গো গেমসবাজদের। বলা হেেচ্ছ, সাবধানে পা ফেলুন, সামনে বিপদ।

কিন্তু কে শোনে, কার কথা। কিশোর-কিশোরীরা মগ্ন তাদের দুনিয়ায়। পোকেমন গো এর জনপ্রিয়তা যতই বাড়ছে, মাইন দুর্ঘটনাও ততই বাড়ছে। হাত-পা হারাচ্ছে গেমবাজরা। কখনো কখনো মৃত্যুও পর্যন্ত ঘটছে।হাতের কাছে উপায় না পেয়ে পোসভিনা বেজ মিনা শেষমেষ আশ্রয় নেয় ফেসবুকের। তাতে তারা বলে, ‘আমরা জানতে পেরেছি যে পোকেমন গো খেলতে খেলতে পোকেমনের খোঁজে কিশোর-কিশোরীরা এমন সব অঞ্চলে চলে যাচ্ছে, কখন পা ফেলছে স্থল মাইনের ওপর তা নিজেও জানে না। ফলে এর মাসুলও দিতে হচ্ছে তাদের।’‘তাই, বিপদজনক লেখা সাইনবোর্ড টানানো আছে, এমন সব এলকায় না যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। যাবেন না অপরিচিত এলাকাতেও,’ বলছে পোসভিনা বেজ মিনা।

এ তো গেলো বসনিয়ার কথা। বিপত্তি ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রেও। সপ্তাহের প্রথমদিকে পোকেমন খুঁজতে যায় দুই কিশোর যায় একটি বাড়ির কাছে। দুজনের তৎপরতা দেখে বাড়ির মালিক ছিঁচকে চোর মনে করেন তাদের। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বন্দুক নিয়ে এসে গুলি করে বসেন তাদের। অবশ্য মারা যায়নি দুই কিশোরের কেউ।পোকেমনের শুধু খারাপ দিক নেই, ভালো দিকও আছে। তবে সেই সব দিকের দেখা মেলে খুবই কম, অপ্রত্যাশিতভাবে। পোকেমন খুঁজতে দুই গেমসবাজের চোখে পড়ে যায় চুরি একটি ঘটনা। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেয় তারা। আর যায় কোথায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আটক করে চোরদের। শেষমেষ চোরদের ঠিকানা হয় লালঘর। রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুলাই ২০১৬/তৈয়বুর