বাবা দিবস _x

ইঁদুর যখন রাষ্ট্রীয় সমস্যা (ভিডিও)

তৈয়বুর রহমান : সৃষ্টির আদিকাল থেকে নিউজিল্যান্ডে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল কি না,  তা জানা যায় না। তবে দেশটিতে ইঁদুরের প্রথম আগমন ঘটে অষ্টাদশ শতাব্দিতে।

 

পলিনেশিয়ায় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে, নৌকা কিংবা মালপত্রের ভেতর ঢুকে লুকিয়ে-ছাপিয়ে আসে তারা। এছাড়া অষ্টাদশ শতাব্দিতেও বহু ইঁদুর আসে, ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় বসতিস্থাপনকারীদের সঙ্গে।

 

বিড়াল কিন্তু আসে এর মাঝামঝি সময়ে, সপ্তদশ শতকে ক্যাপ্টেন জেমস কুকের জাহাজের ফাঁকফোকরে লুকিয়ে।

 

কিন্তু এখন এই ইঁদুরই হয়ে উঠেছে নিউজিল্যান্ড সরকারের মাথাব্যথার কারণ। তাদের বংশবিস্তার এতোটাই ঘটেছে যে ইঁদুর বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণী নিধনে ব্যাপকভিত্তিক একটি কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে সরকার। বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ নিউজিল্যান্ডকে ইঁদুর মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণারও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

   

কিন্তু ইঁদুর বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর উপর কেন এতোটা খেপে গেল নিউজিল্যান্ডবাসী। খেপার অবশ্য যথেষ্ট কারণও আছে। তারা বলছে, দেশে আদি থেকে যেসব পাখি রয়েছে, সেগুলোকে মেরে ফেলেছে ইঁদুরগুলো। এই পাখিগুলোর মধ্যে কিউইও রয়েছে, এটি নামে পাখি হলেও আকাশে কিন্তু উড়তে পারে না।

 

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কিও কিন্তু বসে নেই। তিনিও যোগ দিয়েছেন ইঁদুর নিধন অভিযানে। শুধু যোগ দিয়েছেন বললে ভুল হবে, রীতিমতো অভিযানের পুরোভাগে রয়েছেন তিনি। জন কি বলছেন, শুধুমাত্র বছরে ২৫ মিলিয়ন পাখিকে হত্যা করে থাকে ইঁদুর বা ইঁদুর-বেজি জাতীয় প্রাণী।

 

ইঁদুর মারার জন্য জানা মতে যতো রকম পদ্ধতি আছে তার সবগুলোই ব্যবহার করা হবে। বেড়া দিয়ে আটকে, ফাঁদ পেতে ধরে, লোভ দেখিয়ে গর্ত থেকে বের করে এনে এবং বিষ দিয়ে মারা হবে এদের। এছাড়া ওেয়া হবে নতুন নতুন প্রযুক্তির সাহায্য, প্রয়োজনে নতুন নতুন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করা হবে।

   

ইঁদুর নিধনের এই অভিযান কিন্তু এখনই শুরু হচ্ছে না, শুরু হবে আগামী বছর। তবে সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণ কিছুই জানানো হয়নি।

 

অভিযান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘এ পর্যন্ত স্থানীয় পাখিদের সংরক্ষণ করার জন্য পৃথিবীতে যতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্খী। কিন্তু আমার বিশ্বাস, দেশের সবাই মিলে যদি কাজ করি, তাহলে আমাদের সফলতা আসবেই।’

 

ইঁদুরের হাত থেকে উপকুলীয় দ্বীপগুলোকে রক্ষা করার পাশাপাশি সাউথ আইল্যান্ড ও নর্থ আইল্যান্ডের ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল রক্ষা করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

   

সময় গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীও। প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন, এই সময়ের মধ্যে ইঁদুর মারার জন্য অনেক নতুন পদ্ধতি উদ্ভবন হবে। এই যন্ত্রগুলোও অভিযানে ব্যবহার করা হবে বলে তিনি আশা করছেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোট কথা, আমাদের লক্ষ্য ২০৫০ সাল নাগাদ নিউজিল্যান্ডের প্রতিটি অঞ্চলকে পুরোপুরি ইঁদুর বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণী মুক্ত করা।’

 

কিন্তু এতে আদৌ কি কোনো লাভ হবে, রীতিমতো সংশয় প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা। নিউজিল্যান্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া টে আরাতে বলা হয়, এক সমস্যা সমাধানে আরেক প্রজাতির প্রাণী আমদানি করা হয়। এতে আগের সমস্যার সমাধান হয় বটে, সৃষ্টি হয় নতুন সমস্যার।

   

উদাহরণস্বরূপ, খরগোশ সমস্যা সমস্যা সমাধানে ব্রিটেন থেকে নিউজিল্যান্ডে বেজি আমদানি করা হয় ১৮৭০ দশকে। কিন্তু খরগোশ সমস্যার সমাধান হতে না হতেই আঞ্চলিক পাখির বাসা থেকে ডিম চুরি করা শুরু করে বেজি, এমন কি, সুযোগ পেলে মেরেও ফেলে পাখিদের।

 

বিড়াল আসে ক্যাপ্টেন জেমস কুকের জাহাজের ফাঁকফোঁররে লুকিয়ে সপ্তদশ শতকে। কিন্তু ব্যাপকভাবে বংশবিস্তার ঘটে সেগুলোর। এক সময় বনে বাঁদারে গিয়ে আঞ্চলিক পাখি, টিকটিকি ডিম চুরি ছাড়াও তাদের মেরে ফেলা শুরু করে।

     

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ জুলাই ২০১৬/সাইফ